আপনি ডিয়েগো ম্যারাডোনার যতই সমালোচনা করেন না কেন তিনি তো একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় ছিলেন তা নিয়ে তো সন্দেহ নেই। আবার পেলে যে সর্বকালের সেরাদের একজন সেটা মেনে নিতেও অনেকে দ্বিধা হয়। বলা হয় তার সময়ে নাকি অফসাইড নিয়ম কার্য্যকর হত না সহ আরও কত ঠুনকো যুক্তি। তাই বলে কি পেলের শ্রেষ্ঠত্ব কমে যায় কোন অংশে? না, নিশ্চয়ই।
এমনটাই হয়ে আসে আমাদের এই পৃথিবীতে। যেকোন জিনিসের একটা সমালোচনা যেন আমদের করাই চাই। সেখান থেকে বাদ যায় না ফ্রান্স ফুটবল কর্তৃক পুরষ্কার ব্যালন ডি’অর। যত সমালোচনাই হোক না কেন, ব্যক্তিগত অর্জনের সবচেয়ে মর্যাদার জায়গা দখল করে ফেলেছে এই ব্যালন ডি’অর। আরও একবার সে পুরষ্কার নিয়ে চর্চা হচ্ছে ফুটবল প্রাঙ্গণে।
বিতর্কের অবসান ঘটাতে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশন ব্যালন ডি’অরের ভোটিং নিয়মে। এখন আর আগের মত এক পঞ্জিকাবর্ষে একজন খেলোয়াড়ের পারফরমেন্স বিবেচনায় নেওয়া হবে না। বরং এক মৌসুমে কোন খেলোয়াড় কতটা ভাল পারফরম করেছেন এবং দলকে শিরোপা জেতাতে কতটুকু সাহায্য করেছেন সে হিসেবটাই মাথায় রাখতে হবে। অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হতে যাবে এবারের আয়োজন।
এবারে তালিকায় বেশ খানিকটা নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছেন আট বারের বিজয়ী লিওনেল মেসি। তাছাড়া নতুন কারও হাতে এবার হয়ত দেখা যেতে পারে ব্যালন ডি’অর। সে সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রকট। বেশ লম্বা একট তালিকা ইতোমধ্যে করে ফেলা হয়েছে। তবে সম্ভাবনার বিচারে এগিয়ে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে থাকছে আজকের আয়োজন।
- কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স/ প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)
উদীয়মান তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে ইউরোপীয় ফুটবলে তো দারুণ এক টানাপোড়েন চলতে দেখা গেল দিনকতক আগেই। সম্ভাবনাময় এই খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে কে না চায়? এই মৌসুমেও তিনি প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ও ফ্রান্সের হয়ে ৪৮ খানা গোলের বিপরীতে ৩১ খানা অ্যাসিস্ট করেছেন। মাত্র ২৩ বছর বয়সী এই ফুটবলারের ফুটবলকে আরও অনেক কিছু দেওয়ার বাকি।
তবে ইতোমধ্যেই তিনি চলে এসেছেন ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায়। এর আগেও তিনি ছিলেন তিনি, তবে এবার তার অবস্থান একটু শক্তপোক্ত। কিন্তু তার এই মৌসুমে ব্যালন ডি’অর জেতার সম্ভাবনা তালিকায় থাকা বাকিদের তুলনায় কম।
হয়ত আগামী মৌসুমেই তিনি জিততে পারেন। তবে সে জন্যে তাকে পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও ভাল করতে হবে, পাশাপাশি দলকে শিরোপা জয়ের দিকেও নিয়ে যেতে হবে।
- কেভিন ডি ব্রুইনা (বেলজিয়াম/ ম্যানচেস্টার সিটি)
সর্বশেষ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। ম্যানচেস্টার সিটির লিগ শিরোপা জয়ে নিশ্চিত করতে রেখেছেন বড় ভূমিকা। ফলে, একটু দূরে থাকলেও, ব্যালন ডি অরের আলোচনায় তিনি আছেন।
মৌসুমটা আক্ষরিক অর্থেই দারুণ কেটেছে তাঁর। গুণে গুণে ২০ টা গোল করেছেন তিনি, এর মধ্যে ১৫ টাই প্রিমিয়ার লিগে। সাথে অ্যাসিস্ট আছে ১৮ টা।
- রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি (পোল্যান্ড/ বায়ার্ন মিউনিখ)
করোনার থাবায় ২০২০ সালের ব্যালন ডি’অর পুরষ্কার স্থগিত না হয়ে গেলে সম্ভবত সে বছর রবার্ট লেওয়ান্ডস্কির হাতেই উঠতো। কি অনবদ্য, দুর্দান্ত পারফরমেন্সই না তিনি করেছিলেন সেবার। তবে এই মৌসুমেও কিন্তু তিনি কম যান না। নিজের ক্লাব ও দেশের হয়ে মোট ৫৬ টি গোল করেছেন।
গোল করেই ক্ষান্ত হয়ে যাননি তিনি। সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ১১ টি। এবার হয়ত ব্যালন ডি’অর পাওয়া থেকে খানিক দূরেই থাকতে হচ্ছে লেওয়ান্ডস্কিকে।
গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা জয়ের দলকে সেভাবে সাহায্য করতে পারেননি তিনি। অবশ্য তার বায়ার্ন মিউনিখ ঘরোয়া দুইটি শিরোপাই ঘরে তুলেছে। এদিকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছেন তিনি যাবেন স্পেনে। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা হতে পারে তার পরবর্তী গন্তব্য। ক্লাবটির শিরোপা জয়ের কারিগর হওয়ার সম্ভাবনা তার রয়েছে। সেটা করতে পারলে হয়ত এবার না হোক পরের আসরের পুরষ্কারটা তিনিই বাগিয়ে নিতে চলেছেন।
- মোহাম্মদ সালাহ (মিশর/ লিভারপুল)
প্রতিশোধের একটা মিশন নিয়ে ফ্রান্সের স্টেড দে ফান্সে নেমেছিলেন লিভারপুলের তারকা খেলোয়াড় মোহাম্মদ সালাহ। তবে প্রতিশোধের সে আগুনে পানি ঢেলে শিরোপা ঠিকই বাগিয়ে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এক সপ্তাহের মধ্যে দু’খানা শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যায় মোহাম্মদ সালাহর। অথচ এই মৌসুমে তিনি ৩৩ গোল ও ১৯ অ্যাসিস্ট করেছেন। তবে দুভার্গ্যই যেন তার পিছু ছাড়ছে না।
তারই লিভারপুল সতীর্থ সাদিও মানের জাতীয় দল সেনেগালের কাছে আফ্রিকান নেশন্স কাপের শিরোপাও হারতে হয়। তবে নিশ্চয়ই খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জয় করতে না পারা আর ব্যালন ডি’অর জিততে না পারার এই স্পৃহা নিশ্চয়ই তাকে আরও ভাল করতে অনুপ্রাণিত করবে। তব এ মৌসুমেও ব্যালন ডি’অর জেতার এক ক্ষীণ আশা করতেই পারেন সালাহ।
- সাদিও মানে (সেনেগাল/ লিভারপুল)
লিভারপুল এবারে মৌসুমে দূর্দান্ত এক সময় পার করেছে। লিগে ম্যানচেস্টার সিটির সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালিয়েছে শেষ অবধি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে। তাছাড়া এফএ কাপ ও কারাবো কাপ জিতেছে দলটি। এত সব সফলতার পেছনে সালাহর পর সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন সাদিও মানে। সত্যি বলতে দু’জনে সমানতালে পারফরম করে গেছেন।
২৯ গোল পাঁচ অ্যাসিস্ট রয়েছে তার নামের পাশে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে। তবে সব ছাপিয়ে তিনি আফ্রিকান নেশন্স কাপ জিতেছেন মানে। ঠিক এই জায়গাটায় সালাহর থেকে খানিকটা এগিয়ে রয়েছেন মানে। তিনি থাকছেন ব্যালন ডি’অর দৌড়ের শীর্ষ তিনে। হয়ত কোন অঘটন ঘটলে তিনি বনে যেতে পারেন বিজয়ী।
- করিম বেনজেমা (ফ্রান্স/ রিয়াল মাদ্রিদ)
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল শেষে ফ্রান্সের কিংবদন্তি থিয়েরি ওঁরি বলেছিলেন যে ভোটিং বন্ধ করে দিতে, করিম বেনজেমা জিতে গেছেন এবারের ব্যালন ডি’অর। তিনি হয়ত মজার ছলেই বলেছেন। তবে বিষয়টা এখন ঠিক তাই।
এই মৌসুমের ব্যালন ডি’অর জেতার যোগ্য দাবিদার করিম বেনজেমা। রিয়াল মাদ্রিদের ‘ডাবল’ জয়ে তার ভূমিকা তো আর আড়াল করা যায় না। তাছাড়া বহু বছর পর ফ্রান্সের জার্সিতে ফিরেও তিনি পারফরম করার চেষ্টা করেছেন।
জাতীয় দল ও ক্লাব মিলিয়ে ৪৭টি গোল করেছেন। করিয়েছেন আরও ১৯টি। তাছাড়া চারটি শিরোপা জয়ী দলেও তিনি ছিলেন। শুধু ছিলেন বললে ভুল বলা হয়। বরং তিনি শিরোপা জিততে সহয়তা করেছেন, নিজের সেরাটা দিয়ে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দূর্দান্ত সময় পার করেছেন তিনি। এবার শুধু সময় সেই সোনালী বলটা নিজের করে নেওয়ার।
অপেক্ষার প্রহর হয়ত গুণতে থাকবেন বেনজেমা ভক্তরা। তাছাড়া এই তালিকায় থাকা না থাকাদের অনেককে নিয়েই হতে পারে আলোচনা। তবে দিনশেষে সেরা হবেন কে সেটা হয়ত বলে দেবে ঘড়ির কাটা।