গা গরমের ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ায় সূর্যটা অস্ত যাওয়ার পরই বেশ ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। ঠান্ডাকে উপেক্ষা করেই গা গরমের ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। এবারের বিশ্বকাপের মূল পর্বেই খেলছে দুইটি দল। মূল পর্ব শুরু হবার আগে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনের সাথে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস। তবে ওয়ার্মআপ ম্যাচেও বাংলাদেশ ক্রিকেটের কুৎসিত চিত্রটা আরও একবার সামনে চলে এল। যদিও স্রেফ ওয়ার্মআপ ম্যাচ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় সবকিছু।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা বাংলাদেশের ঠিক হয় না। এইটা যেন দিনের আলোর মত স্পষ্ট এবং ধ্রুব একটা সত্যে পরিণত হয়েছে বিগত কয়েক বছরে। বাংলদেশ ক্রিকেটের আক্ষরিক অর্থে উন্নতির গ্রাফটা কখনোই যেন উর্ধ্বগামী হয় না। সেই ২০০৭ সাল থেকে এখন অবধি বাংলাদেশ সব কয়েকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। তবে আফসোস গেল ছয় আসরে মূল পর্বের একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়টাই প্রথম এবং শেষ।
এমন দৈন্যদশা নিয়েই আরও একটি বিশ্বকাপ খেলতে তাসমান পারে হাজির টাইগাররা। তবে এর আগেও স্বস্তির তেমন একটা জায়গা নেই। শেষ ২৫ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় মাত্র ছয়টিতে। এমন কালিমা মাখা পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের স্বস্তি দিচ্ছে না মোটেও। তবে ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ বিষয়টার মুখোমুখি এখন টাইগাররা। ওয়ার্ম আপ ম্যাচটাই যত নষ্টের মূল। আবারও বাংলাদেশ ক্রিকেটের মুখোশ উন্মোচন।
আফগানিস্তান টসে জিতেই ব্যাট করবার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুটাও করে বেশ। তবে একটা পর্যায় বাংলাদেশের বোলাররা আফগানদের রানের চাকার লাগাম টেনে ধরে। তাতে অবশ্য কাজ হয়নি। আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী তাণ্ডব চালায় টাইগার বোলারদের উপর। মাত্র ১৭ বলে ৪১ রানের দুরন্ত এক ইনিংস খেলেন নবী। শেষ অবধি অপরাজিত থেকে দলের সংগ্রহ ১৬০ পর্যন্ত নিয়ে যান তিনি। আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জামানায় এই সংগ্রহ বড্ড বেশি মামুলি।
তবে বাংলাদেশের দিনে যেকোন মামুলি টার্গেটও হয়ে যেতে পারে ভয়ংকর কোন পাহাড়। যে পাহাড় চূড়ায় ওঠা বড় দায়। ঠিক তেমনটাই হতে দেখা গেল ওয়ার্মআপ ম্যাচেও। বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ২০ ওভার শেষে ৯৮ রান করে নয় উইকেটের বিনিময়ে। এমন দৃষ্টিকটু ব্যাটিং ফিগারটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অবশ্য নতুন কিছু নয়। তবে এর থেকেও দৃষ্টিকটু ব্যাপার ছিল টাইগার ব্যাটারদের আউটগুলো।
‘ইম্প্যাক্ট’ আর ‘ইনটেন্ট’ এই দুই শব্দ শুনতে শুনতে নিশ্চয়ই অতিষ্ঠ বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা, তবুও আরও একটিবার এই দুই শব্দের ব্যবহার করতেই হচ্ছে। টি-টোয়েন্টির মেজাজ বুঝে খেলাটাই আসলে ইনটেন্ট, তবে বাংলাদেশ সে মেজাজটাই যেন বুঝতে পারছে না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বাংলাদেশের জন্য যেন ‘হিমু’। পরবর্তী পদক্ষেপ আন্দাজ করা বড্ড দায়। এই দিন অবশ্য আপাদমস্তক সবাই ব্যাটিং করবার সুযোগ পেয়েছে এই নিয়ে গোটা দল খানিকটা আনন্দ উল্লাস করতেই পারে। তবে আউটগুলো নিশ্চয়ই পোড়াবে তাদের।
এক্ষেত্রে অবশ্য আফগান বোলারদের প্রশংসা করতেই হয়। তাঁরা দুর্দান্ত লাইন আর লেন্থ বজায় রেখে বল করে গিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যাটারদের ব্যাটিংয়ের সকল দূর্বলতা কাজে লাগিয়ে বারংবার উইকেট উপড়ে ফেলেছেন আফগানিস্তানের পেসাররা। বলা হয় পেসবান্ধব অস্ট্রেলিয়ার উইকেট। সেই কথারই যেন যথার্থতা প্রমাণ করছেন ফজল হক ফারুকি, নাভিন উল হকরা। ফারুকি যেন দুর্বোধ্য এক চোরাবালি। বাংলাদেশ কেবল তলিয়ে যেতে জানে তাতে।
নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন এই তিন ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন ফারুকি। কখনো মিডল স্ট্যাম্পের লাইন ধরে যাওয়া বল বাক খেয়ে আঘাত হেনেছে অফ স্ট্যাম্পে। আবার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ঢুকেছে ভেতর দিকে। সাকিব, শান্তর স্ট্যাম্প উড়েছে আফিফ লেগ বিফোরের ফাঁদে কাটা পড়েছেন। এমন দৃশ্য গোটা ম্যাচের। বাংলাদেশ ঠিক একটা ইউনিট হয়ে খেলতে পারছে না। বাংলাদেশ যেন ক্রিকেটটাই ঠিকঠাক খেলতে পারছে না।
প্রস্তুতি ম্যাচে ভুল করাটা ঘোরতর অপরাধ নয়। তবে এমন যাচ্ছে তাই ক্রিকেটীয় প্রদর্শন নিশ্চয়ই মেনে নেওয়ার নয়। ঠিক কবে নাগাদ বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিবর্তনটা আসবে সেটা জানা নেই। তবে অপেক্ষা যে বাড়াচ্ছে তিক্ততা।