মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনেই নেই ১৫ খানা উইকেট। দুই দলের স্পিনারদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে অধিকাংশ। এর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন ঘটনা ঘটেছে একবার। সেটাও এই মিরপুরেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২০০৩ সালে খেলা টেস্টের তৃতীয় দিনে গিয়েছিল ১৮টি উইকেট।
দীর্ঘ এক পথযাত্রায় এবার টেস্টের প্রথম দিনেই মিরপুরে ১৫ উইকেটের পতন। ক্রিকেটের এমন আধুনিকায়নের যুগে এই ধরণের উইকেটে খেলাটা কতটা যুক্তি সংগত সে প্রশ্ন চাইলেই তোলা যায়। নিউজিল্যান্ডের তাবড় তাবড় ব্যাটাররা খাবি খেয়েছেন ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনেই।
যাদের বেড়ে ওঠা এই মাঠের কোলেই, সেই বাংলাদেশ দল নিজেদের দশটি উইকেট হারিয়ে বোর্ডে জমা করেছে মাত্র ১৭২ রান। ভীষণ কষ্ট হয়েছে ব্যাটারদের রান করতে। এমনকি উইকেটে টিকে থাকাও যেন ছিল দুর্বিষহ এক কর্ম সাধন।
তবে এতেই তৃপ্তি খুঁজে নিচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেটের তিনটিই গিয়েছে মিরাজের পকেটে। এদিন কিউই শিবিরে প্রথম আঘাতও করেন মিরাজ। ডেভন কনওয়ের সাথে মানসিক দ্বৈরথের শেষে জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক।
এরপর কেন উলিয়ামসনের উইকেটও গিয়েছে মিরাজের পকেটে। এছাড়া টম ব্ল্যান্ডেলের উইকেটও নিজের করে নিয়েছেন মিরাজ। তিনি মনে করেন টেস্ট জয়ের ক্ষেত্রে এমন উইকেটে খেলাটা দোষের কিছু নয়। বরং তাতে করে ঘরের মাঠের সুবিধাটা প্রকৃতপক্ষে নেওয়া হয়।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে মিরাজ বলেন, ‘আমরা যখন দেশের বাইরে যাই বা বাইরের কন্ডিশনে খেলি প্রত্যেকটা দলই কিন্তু হোম অ্যাডভান্টেজ নিতে চায়। আমরাও একটু হোম অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। যেহেতু টেস্ট ক্রিকেট, আমরা যেহেতু এগিয়ে আছি আমরা জিততে পারলে পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকব।’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে নিজেদের দ্বিতীয় জয়ের জন্যেই পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ দল। এমনকি টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে ঘরের মাঠে সুবিধা নেওয়ার পূর্ণ চেষ্টাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের দলের জন্যে অ্যাডভান্টেজ থাকে। যেহেতু আমাদের স্পিন অ্যাটাক অনেক ভাল। ভাল জায়গায় বল করে। সুযোগ থাকে বেশি উইকেট নেওয়ার জন্য। যেহেতু আমাদের দেশে খেলা। তাই এটাই হয়ত টিম ম্যানেজমেন্ট চিন্তা করছে।’
লাল বলের ক্রিকেটে ঘরের মাঠের পূর্ণ ফায়দাই নিতে চায় দল। তাতে করে টেস্টের আসল রুপে সামনে আসার আগেই জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়ে গেলেও ভ্রুক্ষেপ যেন করতে চান না বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। এই ধরণের উইকেটে খেলে নিজেদেরকে ঠিকঠাক প্রস্তুত নিশ্চয়ই করা যায় না। এই কথা মিরাজও স্বীকার করেছেন বটে।
তবে মিরাজের মত ভিন্ন। সাদা বলের ক্রিকেটের জন্যে আরও স্পোর্টিং উইকেট, আরও ভাল উইকেট প্রত্যাশা করেন তিনি। লাল বলের ক্রিকেটে এমন উইকেটেই সন্তুষ্ট থাকতে চান মিরাজরা। লাল বলের ক্রিকেটে অর্জন সম্ভবত চোখে লেগে থাকে না। তবে সাদা বলে বছর ঘুরতেই আয়োজিত হয় বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট।
সেসব টুর্নামেন্টে ভাল করতে ঘরের মাঠে আরও ভাল উইকেটের দাবি জানিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই একই সুরে হেঁটেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তারা নিজেদের উন্নতির জায়গাটা সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন সাদা বলের ক্রিকেটে। বনেদী ফরম্যাট যেন অগ্রাহ্যের কোন বস্তু।