আইপিএলে খেলার সুযোগ পাওয়া যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য পরম আনন্দের। কেবলমাত্র আর্থিক নিশ্চয়তা নয়, বরং গুণে-মানে বিশ্বের বাকি ফ্যাঞ্চাইজি লিগের চাইতে বেশ এগিয়ে আইপিএল। তবে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের আগামী আইপিএলের নিলামে নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)।
এবারের মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে আইপিএলে দল পেয়েছেন তিন ক্রিকেটার। সাকিব আল হাসান এবং লিটন দাস খেলবেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। অন্যদিকে, মুস্তাফিজুর রহমান গায়ে জড়াবেন পুরনো দল দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সি।
কিন্তু, আইপিএল চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ম্যাচ থাকায় পুরোটা সময় পাওয়া যাবে না তাঁদেরকে। সিরিজ চলাকালীন ক্রিকেটারদের এনওসি দেবে না বলেই জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আর এতেই নাটকীয়তা, ফ্যাঞ্চাইজিগুলো ক্রিকেট বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত খুশি মনে মেনে নিতে পারেনি।
বিসিবিরও এমন সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি আছে। ২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ তাঁদের সেরা একাদশটা বেছে নিতে চায় আগামী সিরিজগুলোকে সামনে রেখেই। তাছাড়া খেলোয়াড়দের পুরোটা সময় পাওয়া যাবে না এমনটা জানিয়েই তাঁদের নাম নিলামে নিবন্ধিত করা হয়েছিল।
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে একই পরিস্থিতির। চার লঙ্কান ক্রিকেটারই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জাতীয় দলের ম্যাচ থাকায় মিস করবেন আইপিএলের প্রথম সপ্তাহ। কিউইদের বিপক্ষে সিরিজ শেষে আট এপ্রিল তাঁরা যোগ দেবেন দলের সাথে।
এক ফ্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টা এখন এমনই রূপ ধারণ করেছে। আমরা কাউকে অভিযোগ করতে পারি না কারণ বিসিসিআই অন্য বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে। তবে আগামীবার থেকে দলগুলো অবশ্যই সতর্ক থাকবে কিছু দেশ থেকে খেলোয়াড়দের দলে নেয়ার সময়। আপনি দেখুন, গতবার তাসকিন আহমেদ এনওসি পাননি এবং এবারে সাকিব – লিটন। তাঁরা যদি তাঁদের খেলোয়াড়দের খেলতে দিতে না চায়, তাহলে নিবন্ধন না করালেই পারে। তবে নিশ্চিতভাবেই, পরবর্তী মৌসুম থেকেই বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে।’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজের সুবাদে টুর্নামেন্টের প্রথম দুই সপ্তাহ মিস করবেন বাংলাদেশি তারকারা। তবে টেস্টে না থাকায় মুস্তাফিজুর রহমান সম্ভবত টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই থাকবেন।
এরপর অবশ্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজের সুবাদে মে মাসের পাঁচ তারিখ থেকে পনেরো তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের পাবে না দলগুলো। অন্যদিকে, লঙ্কান ক্রিকেটারদের মাঝে একমাত্র ভানুকা রাজাপাকসেই টুর্নামেন্টের শুরু থেকে খেলবেন, বাকিরা মিস করবেন প্রথম সপ্তাহ।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন বাংলাদেশের ম্যাচ থাকলে কোনো ক্রিকেটারকেই ছাড়পত্র দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘আমাকে এই ব্যাপারে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে এবং প্রতিবারই আমি একই উত্তর দিয়েছি। প্রতিবার আইপিএল নিলামের আগে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় খেলোয়াড়দের পাওয়া যাবে কিনা। আমরা তাঁদেরকে আমাদের আন্তর্জাতিক সূচি পাঠাই এবং সেটা যাচাই বাছাই করেই ওরা নিলামে নাম তোলে। আমি বাংলাদেশের ম্যাচ চলাকালীন সময়ে জাতীয় দলের হয়ে না খেলার কোনো কারণ দেখি না। তাছাড়া আমরা পরিষ্কারভাবেই ওদের জানিয়েছি। এতে কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই।’
ফ্যাঞ্চাইজির সাথে ক্রিকেট বোর্ডের এমন দ্বন্দ্বের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড খেলোয়াড়দের এনওসি না দেয়ায় আইপিএলে অংশ নিতে পারেননি ইংলিশ ক্রিকেটাররা। পরবর্তীতে অবশ্য দুই বোর্ডের পারস্পরিক সমঝোতায় এনওসি পান ক্রিকেটাররা।
বিসিবির সিদ্ধান্তে তাই ফ্যাঞ্চাইজিরা ক্ষুব্ধ হলেও বিসিসিআই এগোচ্ছে ধীরে চলো নীতিতে। ফ্যাঞ্চাইজিরা অপেক্ষা করছে ২০২৪ আইপিএল নিলামের আগে বিসিবির অবস্থান নিয়ে। অন্যথায় সম্ভাবনা আছে আগামী নিলামের আগে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের ছেড়ে দেবে দলগুলো।
এক বিসিসিআই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণরূপে ক্রিকেটারদের উপর কিভাবে তাঁরা বোর্ডকে রাজি করাবে। নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড কিংবা অন্য দেশের খেলোয়াড়রা নিজেরাই উপায় খুঁজে বের করেছে। আইপিএলের জনপ্রিয়তাকে কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। তাছাড়া বোর্ডও এখান থেকে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। এখন পুরো ব্যাপারটাই ক্রিকেটারদের উপর।’