আরেকটি হোয়াইট ওয়াশ

বাংলাদেশ ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলে আছে দ্বিতীয়তে। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থান ছয় নম্বরে। এছাড়া আইসিসির ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ যেখানে ৯৭ রেটিং নিয়ে সাতে সেখানে ৭২ রেটিং নিয়ে উইন্ডিজ আছে নয় নম্বরে। কাগজে-কলমে শক্তিমত্তার যে বিশাল ব্যবধান ফুটে উঠেছে সেটি দেখা গিয়েছে মাঠেও। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিকদের কোন সুযোগই দেয়নি টাইগাররা।

টানা তিন ম্যাচে পরে ব্যাট করতে নেমে জয় তুলে নিয়েছে সফরকারীরা। প্রথম দুই ওয়ানডেতে বেশ সহজে জয় তুলে নিলেও শেষ ম্যাচে কিছুটা পরীক্ষা দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তারপরও শেষপর্যন্ত জয়ের বন্দরে বাংলাদেশের নৌকা ভিড়েছে। তবে পুরো সিরিজে অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ উইন্ডিজ ব্যাটাররা সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি নাসুম, মিরাজদের বিপক্ষে।

তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজ হারানোর ঘটনা একেবারেই নতুন নয় বাংলাদেশের জন্য। এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মত উইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করার পুরোনো ইতিহাসও আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

এবারের আগে আরো দুইবার ব্রায়ান লারার উত্তরসূরীদের ধবলধোলাই করেছিল টাইগাররা। প্রথমবার ২০০৯ সালে। নিজেদের দর্শকদের সামনেই বাংলাদেশের কাছে ৩-০ সিরিজ হেরে লজ্জায় ডুবেছিল উইন্ডিজ। এছাড়া গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের মাটিতেই একই স্বাদ পেয়েছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। 

অবশ্য পরিসংখ্যানও বাংলাদেশের এমন দাপুটে জয়ের পক্ষে কথা বলে। সদ্য সমাপ্ত সিরিজ শুরুর আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা আট ম্যাচ জয়ের ধারা ধরে রেখেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। আর এবার স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিয়ে টানা এগারো ম্যাচ জেতার কৃতিত্ব অর্জন করলো বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বশেষ জয় পেয়েছিল।

অবাক করার মত ব্যাপার, টানা হেরে যাওয়া এই এগারো ম্যাচের কোনটিতেই জয়ের কাছাকাছি আসতে পারেনি উইন্ডিজ। সবচেয়ে প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পেরেছিল আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে। সেখানেও শেষদিকে কয়েকবল আর কয়েকটি উইকেট হাতে রেখেই উদযাপনে মেতেছিল বাংলাদেশ।

আর বাদ বাকি দশ ম্যাচেই একরকম হেসেখেলে জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে একদিকে টাইগাররা পরাশক্তি হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে উইন্ডিজ তো লম্বা সময় ধরেই ধুঁকছে। তাই এমন আধিপত্য বিস্তার করাটা বেশ স্বাভাবিক বটে। 

এছাড়া সবমিলিয়ে বাংলাদেশ-উইন্ডিজের হেড টু হেড হিসেবে এতদিন এগিয়ে ছিল ক্যারিবিয়ানরা৷ তবে ৩-০ ব্যবধানে এই সিরিজ জিতে নেয়ার মধ্য দিয়ে উইন্ডিজদের ধরে ফেললো বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত ৪৪ ম্যাচ খেলে দুইদলই জিতেছে সমান ২১টি করে ম্যাচ।

দেশে কিংবা বিদেশে, বাংলাদেশের জয় এসেছে সমানতালেই। ২১ জয়ের মাঝে ৮টিই এসেছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। এছাড়া ঘরের মাঠে নয়টি ম্যাচে জিতেছে টিম টাইগার্স। অন্যদিকে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সাতবারের দেখায় চারবারই বিজয়ীর হাসি হেসেছে তামিম-সাকিবরা। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে নিয়মিত সিরিজ খেলা সত্ত্বেও শেষ কোনবার বাংলাদেশকে সিরিজ হারতে দেখেছেন এমন প্রশ্নের উত্তর সহসা দেয়া যাবে না। কেননা সর্বশেষ আফ্রিকান দলটির কাছে বাংলাদেশ সিরিজ হেরেছিল সেই ২০১৪ সালে। এই বছরটা অবশ্য বাংলাদেশ দলের জন্য ছিল অপয়া, আর সেবারই ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেশে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়ে ফিরে এসেছিল তারা। 

২০১৪ থেকে ২০২২, দীর্ঘ আট বছর কেটে গিয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলেও। সাবেক অধিনায়ক মাশরাফির নেতৃত্বে ২০১৪ সালের শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

এরপর থেকেই পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে পরাশক্তি হয়ে উঠেছে তারা। ২০১৫ থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ ম্যাচে মাত্র দুইবার জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাকি ১৪ বারই জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ। 

টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে যেমনই পারফরম্যান্স হোক, ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে এখন আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশেপাশে নেই সেটি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। এমন আধিপত্য অন্য দেশগুলোর সাথে দেখাতে পারলেই বিশ্বমঞ্চে সফলতার মুখ দেখতে পারবে বাংলাদেশ – আপাতত তামিম ইকবালের নেতৃত্বে সেই লক্ষ্যেই এগুচ্ছে বাংলাদেশ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link