বোলারদের নৈপুণ্যে প্রথম ইনিংস শেষেই জয়ের সুভাস পাচ্ছিলো বাংলাদেশ। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। জয়ের জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করা লাগলেও স্বাগতিকদের জয়টা এসেছে সহজেই। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে সাত উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম জয়। সেই ম্যাচের স্থায়িত্ব মাত্র আড়াই ঘণ্টার!
নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দেওয়ার সাথে তাদের আজ আরো একটা লজ্জ্বা দিয়েছে বাংলাদেশ। কিউইরা আজ গুটিয়ে যায় মাত্র ৬০ রানে। যেটা টি-টোয়েন্টিতে যৌথ ভাবে তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এর আগে শ্রীলংকার সাথে ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে ৬০ রানে অলআউট হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষেও যে কোন দলের সর্বনিম্ন সংগ্রহ এটিই। আগের সর্বনিম্ন ছিল সর্বশেষ সিরিজেই অস্ট্রেলিয়ার করা ৬২ রান।
আজ বাংলাদেশের জয়ে মূল অবদান ছিল বোলারদের। শেষের দিকে মুস্তাফিজুর রহমান তিনটি উইকেট শিকার করলেও এর আগেই দুটি করে উইকেট শিকার করে নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও নাসুম আহমেদ। আর প্রথম উইকেটটি নিয়েছিলেন শেখ মেহেদী হাসান।
তবে ৬১ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে কোল ম্যাককঞ্চির অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া ফুল লেংথ বল লফটেড ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান নাঈম শেখ। ৬ বলে ১ রান করে নাঈম ফিরে যাওয়ার পর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি আরেক ওপেনার লিটন দাসও।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আজাজ প্যাটেলের ঝুলিয়ে দেওয়া বল ড্রাইভ করার চেষ্টা করেন এই ওপেনার। কিন্ত বল টার্ন নিয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে এবং বাইরে চলে আসে লিটনের পা। বেলস ফেলে দিতে দেরি করেননি টম লাথাম। লিটন ফিরে যান ৩ বলে ১ রান করে। ৭ রানে দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।
অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যানের জুটিতে জয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ। দেখে শুনে খেলছিলেন দু’জনই। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দ পতন হয় সাকিবের। রাচিন রবীন্দ্রর অফ স্টাম্পের বাইরের লাফিয়ে ওঠা বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন সাকিব। ৩৩ বলে ২৫ রান আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। দলীয় ৩৭ রানে সাকিব ফিরে যাওয়ার পর আর উইকেট হারাতে হয়নি বাংলাদেশকে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সাথে নিয়ে বাকি কাজ শেষ করেন মুশফিক। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ২৬ বলে ১৬ রান করে এবং মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ২২ বলে ১৪ রান করে। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে একটা করে উইকেট শিকার করেন রাচিন রবীন্দ্র, আজাজ প্যাটেল ও কোল ম্যাককঞ্চি।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। বাংলাদেশের স্পিনারদের তোপের মুখে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে কিউইরা। ইনিংসের প্রথম ওভারে ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের প্রথম বলেই শেখ মেহেদী হাসানের ঝুলিয়ে দেওয়া বল খেলতে গিয়ে মেহেদীর হাতে ক্যাচ দিয়েই ফিরে যান রাচিন রবীন্দ্র।
শূন্য হাতে রাচিনকে ফিরিয়ে দেওয়ার এক ওভার পরেই দ্বিতীয় সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে সাকিব আল হাসানের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের নিচু হওয়া বল কাট করার চেষ্টা করেন উইল ইয়াঙ। ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত করে স্ট্যাম্পে। ইয়াঙ ফিরে যান ১১ বলে ৫ রান করে।
পরের ওভারেই ৭ রানে দুই উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে জোড়া আঘাত হানেন নাসুম আহমেদ। এই স্পিনারকে সুইপ করে উড়িয়ে মেরে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে কলিন ডি গ্রান্ডহোম ফিরে যাওয়ার দুই বল পরেই লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান টম ব্লান্ডেল। গ্রান্ডহোম করেন ৪ বলে ১ রান ও ব্লান্ডেলের ব্যাট থেকে আসে ৬ বলে ২ রান।
এরপর মাত্র ৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া নিউজিল্যান্ডের হাল ধরেন টম লাথাম ও হেনরি নিকোলস। বাংলাদেশের বোলারদের দেখে শুনে খেলে ভালো ভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন দু’জন। এই জুটিতে যখন বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে কিউইরা তখনই আঘাত হানেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এই পেসারের লেগ স্টাম্পে করা শর্ট ডেলিভারি পুল করে ফাইন লেগে নাসুমের হাতে ক্যাচ দেন লাথাম।
২৫ বলে ১৮ রান করে লাথাম ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই শূন্য রানে কোল ম্যাককঞ্চিকে ফিরিয়ে দেন সাকিব। এরপর নিকোলসকে সাইফউদ্দিন ফিরিয়ে দেওয়ার পর কিউইদের শেষের তিন উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজুর রহমান। নিকোলস করেন ২৪ বলে ২৮ রান। ইনিংসের ১৯ বল বাকি থাকতেই নিউজিল্যান্ড গুটিয়ে যায় মাত্র ৬০ রানে। যেটা টি-টোয়েন্টিতে যৌথ ভাবে তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর তিনটি উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান এবং দুটি করে উইকেট পেয়েছেন সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও নাসুম আহমেদ। বাকি একটি উইকেট পেয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ৬০/১০ (ওভার: ১৬.৫; ব্লান্ডেল- ২, রবীন্দ্র- ০, ইয়াঙ- ৫, গ্রান্ডহোম- ১, লাথাম- ১৮, নিকোলস- ১৮, ব্রেসওয়েল- ৫) (মেহেদী- ৪-০-১৫-১, সাকিব- ৪-০-১০-২, নাসুম- ২-০-৫-২, সাইফউদ্দিন- ২-০-৭-২, মুস্তাফিজুর- ২.৫-০-১৩-৩)
বাংলাদেশ: ৬১/৩ (ওভার: ১৫; নাঈম- ১, লিটন- ১, সাকিব- ২৫, মুশফিকুর- ১৬*, মাহমুদউল্লাহ- ১৪*) (রবীন্দ্র- ৪-০-২১-১, কোল ম্যাককঞ্চি- ৪-০-১৯-১, প্যাটেল- ৪-০-৭-১)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।