ডেভিড স্টিল: এক রহস্যময় ক্রিকেটার

পাকা চুল। চোখে চশমা। এক ঝলক দেখলে অধ্যাপক মনে হওয়া আশ্চর্য কিছু না। কিন্তু হঠাৎ দেখলেন সেই অধ্যাপকের মতো দেখতে লোকটা ব্যাট হাতে খ্যাতনামা লর্ডসের প্যাভিলিয়ন দিয়ে নেমে আসছেন।

পাকা চুল। চোখে চশমা। এক ঝলক দেখলে অধ্যাপক মনে হওয়া আশ্চর্য কিছু না। কিন্তু হঠাৎ দেখলেন সেই অধ্যাপকের মতো দেখতে লোকটা ব্যাট হাতে খ্যাতনামা লর্ডসের প্যাভিলিয়ন দিয়ে নেমে আসছেন।

দলের স্কোর তখন ১০ রানে ১ উইকেট। নার্সারি এন্ডের বোলিং প্রান্তে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন লিলি । ওভার শেষ হলেই আসবেন জেফ থমসন। লিলি-থম্মো জুটির শ্বদন্ত আরও শানিত হচ্ছে ‘নতুন বুড়োটাকে এখুনই খেয়ে নেবো’ জাতীয় আনন্দে।

অধ্যাপক সম লোকটিও বোধহয় চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ছিলেন। না হলে তার আগে বছর বারো কাউন্টি খেলে ফেলার পরেও, লং রুম হয়ে মাঠে নামার বদলে আরও কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে বেসমেন্টে টয়লেটের কাছে পৌঁছে যান? নিশ্চয়ই কোনো সহৃদয় ব্যক্তি তাঁকে মাঠের রাস্তা দেখালেন।

আর ভদ্রলোক চুপচাপ মাঠে নেমে দেখলেন, তাঁর জন্যে শুধু বল হাতে লিলি অপেক্ষারত নন। কথার বাউন্সার দেবার জন্য আরও জনাদশেক অস্ট্রেলিয় রয়েছে। থমসন বললেন, ‘এটা কে রে? গ্রাউচো মার্ক্স নাকি?’ রড মার্শ আবার লিলিকে চরম বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে শুধোলেন, ‘ডেনিস, তোমার দাদু যে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলবে, এ কথা তো আগে বলোনি।’

অধ্যাপক সম লোকটি এসব দেখেশুনে কয়েকটি বাক্য বললেন। প্রথমটা সকল অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডারদের উদ্দেশে, ‘সুপ্রভাত’। দ্বিতীয়টি অজি উইকেটরক্ষক রড মার্শকে, ‘শোনো হে ভাই, এই নিতম্বদ্বয়ের ভূগোল সম্পর্কে অবগত হয়ে নাও। এই গ্রীষ্মে তোমাকেই তো দেখতে হবে সবচেয়ে বেশি।’ তা মার্শ নিতম্বের ভূগোল দেখলেন বটে।

আর বাকিরা দেখলেন তাঁর ব্যাটে তৈরি হওয়া ইতিহাস। সেই লর্ডস টেস্টে ৫০ ও ৪৫। পরের লিডস টেস্টে ৭৩ ও ৯২। ওভালে ৩৯ ও ৬৬। ৬ ইনিংসে ৩৬৫ রান। গড় ৬০.০৮। তিনটি টেস্ট ছিল টনি গ্রেগের অধিনায়কত্বে খেলা ইংল্যান্ডের প্রথম তিনটি টেস্ট। একটিও টেস্ট ইংল্যান্ড হারেনি। জেতেওনি অবশ্য।

কিন্তু, লিলি-থম্মোর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গত অস্ট্রেলিয় গ্রীষ্মের (১৯৭৪-৭৫) ৪-১ হারের ক্ষততে মলম হিসাবে সেই ড্র যথেষ্ট ছিল। এবং গ্রেগ চ্যাপেল বোধহয় সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দেবেন ওই চশমা পরিহিত, পক্ককেশ লোকটিকে। গ্রেগের সুপারিশেই যে তিনি দলে এলেন।  গ্রেগ বলেছিলেন, ‘ওকে টেস্ট ক্যাপ দেবার সময় হাতে যেন কয়েক ফোঁটা চোখের জল টের পেলাম।’

ভদ্রলোকের নাম ডেভিড স্টিল। ইংল্যান্ডের একটি কাগজ তাঁকে নিয়ে লিখেছিলো, ‘এ তো সেই ব্যাংক কর্মী যে বিশ্বযুদ্ধ লড়তে এসেছে।’ বিশ্বযুদ্ধই বটে। প্রথম গ্রীষ্মে থম্মো-লিলি। পরের বছর রবার্টস, হোল্ডিং, ড্যানিয়েল, হোল্ডার।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওই তিনটি আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৭৬ এর ‘গ্রোভেল’ সিরিজে পাঁচটি। আট টেস্টেই স্টিলের ক্রিকেটজীবন সীমাবদ্ধ। কিন্তু ওই অল্প সময়ের মধ্যেই যা খেলে দেন তা ভোলার নয়। তার জন্ম ১৯৪১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর।

ডেভিড স্টিল সেই বিশেষ প্রজাতির খেলোয়াড়, যার টেস্ট গড় প্রথম শ্রেণীর গড়ের চেয়ে বেশি। মানে ৩০ গড় নিয়ে নর্থান্ট্স এর মতো দলের হয়ে কাউন্টি খেলা প্লেয়ার, যে কিভাবে লিলি-থমসন-হোল্ডিং সামলে এতো রান করলেন, তা তাঁর ৩৩ বছর বয়সেই পুরো পেকে যাওয়া চুলের মতো রহস্য।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link