বার্সেলোনা: নিভে যাওয়া নক্ষত্র?

ঝড়ে যাওয়া পাতা কিংবা খসে যাওয়া নক্ষত্র নয়। বার্সেলোনা চির বহমান সমুদ্র কিংবা নানা প্রতিকূলতায় ঠায় দাড়িয়ে থাকা পর্বত শৃঙ্গ। শত আঘাতেও হার মানবার নয়। বার্সা ফিরবে। বার্সার ইতিহাস, বিরাট একটা কাঠামো, অসামান্য এক ঐতিহ্য - সব কিছুই বার্সেলোনার হয়ে কথা বলে।

নক্ষত্রের পতন হয়। সবুজ পাতা একদিন ঝড়ে যায়। খরস্রোতা নদী স্রোত হারিয়ে নিশ্চুপ হয়। এমনই কিছু একটার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা। উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লিওনেল মেসির বিদায়ে যেন বার্সেলোনার নক্ষত্রমন্ডলের আলোতে এসেছে ভাটা। সাবেক তারকা জাভি হার্নান্দেজ এলেন কোচ হয়ে। স্তিমিত হওয়া তারকাগুলো আবার জ্বলতে শিখাবে বলে।

কিন্তু তাতে মধ্যমণির বিহীন বার্সেলোনার আবার স্বরুপে ফিরতে সময় যে লাগবে আরো। তার মধ্যেই এলো ইউয়েফা ইউরোপা লিগ এলো বার্সার ভাঙ্গা হৃদয়ে আরেক হতাশা হয়ে। দীর্ঘ সতেরো বছর বাদে নিজেদেরকে আবার এফসি বার্সেলোনা আবিষ্কার করলো ইউরোপা লিগে। তফাৎ একটাই। ২০০৪ সালে তারা অর্জন করেছিলেন ইউরোপা লিগ জায়গা। অন্যদিকে এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে গিয়ে স্থান হলো ইউরোপা লিগে।

মৌসুমটা ঠিক কেমন যেন হয়ে গেলো। কোন কিছুই যেন নেই বার্সেলোনার পক্ষে। রক্ষণে অফ ফর্ম, আক্রমণে ইনজুরির হানা। তাছাড়া পুরো দল হিসেবে নিষ্প্রভতা লা-লিগায় বার্সাকে রেখেছে সপ্তম স্থানে। ১৫ ম্যাচে জয় মাত্র ছয়টি। জায়েন্ট বার্সার এমন রুপ যেন বড্ড বেমানান। রক্ষণ এবং আক্রমণের দূর্বলতার প্রমাণ সমান ২৩ সংখ্যক গোল করা এবং খাওয়া। এ কেমন বার্সা! বিস্ময় জেগেছে বারেবারে।

চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের পুরোটা সময় জুড়ে বার্সার অবস্থা যেন ছিল আরো বেগতিক। গ্রুপে থাকা একমাত্র দূর্বল দল যেন প্রমাণিত হলো ডায়নামো কিয়িভ। জয় তাদের বিপক্ষেই দুইখানা। অপরদিকে ষাট বছরে যে বেনফিকা বার্সাকে হারাতে পারেনি তারাও এবার হারিয়ে দিয়েছে ৩-১ ব্যবধানে। অপর ম্যাচটায় গোল শূন্য ড্র। আর জার্মান জায়েন্ট বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে কোনরকম পাত্তা পায়নি বার্সা। কি ঘরে কি প্রতিপক্ষের মাঠে। দুই ম্যাচে সমান ব্যবধানে হেরেছে তাদের বিপক্ষে।

বায়ার্নের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটায় কিছু একটা করতেই হতো বার্সাকে। সোজা বাংলায় বায়ার্নের মাঠে গিয়ে তাদেরকেই হারাতে হতো চ্যাম্পিয়নস লিগের পরবর্তী রাউন্ডে যেতে হলে। তা কি আর এত সহজ! অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনাতে বায়ার্নকে টক্কর দেবে কে? এই ভগ্নহৃদয়ে কোন রকম লড়াই চালিয়ে যাওয়া বার্সা?

এই যে ইউরোপা লিগে অবনমন এবারই প্রথম নয়। পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাধারী বার্সা ১৯৯৮-২০০১ মৌসুম জুড়েই বার্সা মুখোমুখি হয়েছিল এমন ছন্দপতনের। সেখান থেকে লড়াই করতে করতে ২০০৯ এ ট্রেবেল অবধি জিতেছিল বার্সেলোনা। সময় লেগেছে নিজেদের গুছিয়ে নিতে। কিন্তু যখন বার্সা তার স্বরুপে প্রত্যাবর্তন করছে তখনই তৈরি হয়েছে ইতিহাসের। মনোমুগ্ধকর ফুটবলীয় ইতিহাস।

ঝড়ে যাওয়া পাতা কিংবা খসে যাওয়া নক্ষত্র নয়। বার্সেলোনা চির বহমান সমুদ্র কিংবা নানা প্রতিকূলতায় ঠায় দাড়িয়ে থাকা পর্বত শৃঙ্গ। শত আঘাতেও হার মানবার নয়। বার্সা ফিরবে। বার্সার ইতিহাস, বিরাট একটা কাঠামো, অসামান্য এক ঐতিহ্য – সব কিছুই বার্সেলোনার হয়ে কথা বলে।

এমন দৈন্যদশা কাটিয়ে, ঋণের বোঝার মারপ্যাঁচ চিড়ে বিধ্বংসী বার্সেলোনা ফিরবে আবার ইউরোপিয়ান জায়েন্ট হয়ে। কাতালান ক্লাবটির সমর্থকদের প্রত্যাশা ঠিক এর ব্যতিক্রম নয়। ফিনিক্স পাখি হয়ে ধ্বংসস্তুপ থেকে ফিরে আসলে পারলেই তো তাঁরা সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...