এবার ব্যাঙ্গালুরু জয় চাই বসুন্ধরার

বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে আবির্ভাবের বয়স তিন বছর না হতেই প্রায় সব শিরোপাই জিতে নিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। শুরু থেকেই সেরা দল গঠন করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরে নিজেদের প্রমাণের সুযোগের অপেক্ষা ছিল তাঁরা।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে আবির্ভাবের বয়স তিন বছর না হতেই প্রায় সব শিরোপাই জিতে নিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। শুরু থেকেই সেরা দল গঠন করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরে নিজেদের প্রমাণের সুযোগের অপেক্ষা ছিল তাঁরা।

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে অপেক্ষার পর এএফসি কাপে খেলার সুযোগ ঘটেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুটা বিলম্বে খেলা শুরু করে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করে আজকে দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা। মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাঙ্গালুরু এফসির বিপক্ষে মাঠে নামতে যাচ্ছে তপু বর্মনের দল।

এদিকে প্রথম ম্যাচে ব্যাঙ্গালুরু নিজ দেশের ক্লাব এটিকে মোহনবাগানের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরে আসর শুরু করেছে। সে হিসেবে আজকের ম্যাচটি বাচাঁ মরার লড়াই তাদের। বসুন্ধরা বিপক্ষে হারলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় একরকম নিশ্চিত হয়ে যাবে। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে জয়ের পর কিছুটা এগিয়ে থেকেই আজকে মালদ্বীপের মালে জাতীয় ফুটবল ষ্টেডিয়ামে মাঠে নামবে অস্কার ব্রুজোনের শীষ্যরা। শুরুর ম্যাচে প্রয়োজনীয় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর আত্ববিশ্বাসের পারদে নতুন জ্বালানী যোগ হয়েছে।

সে হিসেবে অনেকটা এগিয়ে থেকেই আজকে মাঠের নামার সুযোগ হয়েছে। প্রথম ম্যাচের জয়টাকে দুর্দান্তই বলতে হবে। দেশের বাইরে দাপুটে জয়ের পর আশা বাড়ছে তাদেরকে নিয়ে। এর আগে গত বছর মার্চে দেশের মাটিতে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই টিসি স্পোর্টস ক্লাবের বিপক্ষে ৫-১ গোলের বড় জয় পেয়েছিল বসুন্ধরা।

করোনা ভাইরাসের কারণে পরে গ্রুপ পর্বের কোন ম্যাচই আর মাঠে না গড়ানোয় আসরটি বাতিল হয়ে যায়। এবার আর সেরকম কোন সম্ভাবনা না থাকায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়নে চোঁখ দলটির। সেখানে বড় প্রতিপক্ষ এটিকে মোহনবাগান। যে দলের সঙ্গে খেলে আসলে নির্ধারণ করতে হবে গ্রুপের সেরা দলের নাম।

‘ডি’ গ্রুপের সেরা হওয়ার লড়াইয়ে বসুন্ধরার আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। যদিও সমান গোল ব্যবধান আর পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে মোহনবাগান। তাদের বিপক্ষে আগামী ২৪ আগষ্ট মাঠে নামার আগে টানা দ্বিতীয় জয়ে নকআউটের পথে বড় ধাপ ফেলতে চায় বসুন্ধরা। মালদ্বীপ যাবার আগে চার ম্যাচ হাতে রেখে লিগ শিরোপা জিতে দ্বীপ দেশটিতে গেছে বসুন্ধরা। তারপর প্রথম ম্যাচেই এলো দুর্দান্ত জয়। স্বাভাবিকভাবে সাফল্যের প্রত্যাশা বাড়ছে তাঁদের।

ভারতের ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা এখন সুনীল ছেত্রী। দেশটির জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলও এই তারকা ষ্ট্রাইকারের। মূলত তপু বর্মনের সাথে লড়াইটা ছেত্রীর হবে এটা পরিস্কারভাবে বলাই যায়। বিষয়টি জানা আছে অস্ক্রার ব্রুজোনেরও, ’ম্যাচটা খুব সহজ বলে মনে করছিনা। কঠিন একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে এটি। জিততে হলে আমাদের আবেগের লাগাম টেনে ধরতে হবে, আর প্রতিপক্ষকে ভুল করানোর চেষ্টা করতে হবে।

তাদের কোনোভাবে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। প্রতিপক্ষ দলে সুনীল ছেত্রী, সুরেশ সিংয়ের মতো ফরোয়ার্ড থাকায় বেঙ্গালুরু খুব বিপজ্জনক দল।’ এদিকে ২-০ গোলে হেরে আসর শুরু করলেও দল চাপমুক্ত বললেন বেঙ্গালুরু কোচ মার্কো পেজ্জাইউলি। তবে বাংলাদেশি দলকে মোকাবিলা করা যে কঠিন হবে স্বীকার করলেন তিনি।

রবিনহো, রাউল বেসেরার আক্রমণভাগ আর কাজী তারিক ও তপু বর্মণের রক্ষণ নিয়ে বেশ সতর্ক পেজ্জাইউলি বলেন, ’বসুন্ধরাকে নিয়ে আমরা সব ধরনের স্টাডি করে এসেছি। বাংলাদেশের এই দলটা লিগে ৫৫ গোল করেছে এবং চ্যাম্পিয়ন। তারা লিগে মাত্র ৯ গোল হজম করেছে। এছাড়া প্রথম গ্রুপ ম্যাচ ২-০ গোলে জিতে কিছুটা এগিয়ে থাকবে। তাই ম্যাচটা জমজমাটই হবে বলে ধারনা আমার।’

এদিকে বসুন্ধরার বড় শক্তি তিন বিদেশি ফরোয়ার্ড। দলে থাকা দুই ব্রাজিলিয়ান রবসন দ্য সিলভা রবিনহো ও জোনাথন দ্য সিলভেইরা ফার্নান্দেজ এবং আর্জেন্টাইন রাউল অস্কার বেসেরা রয়েছেন। মাজিয়ার বিপক্ষে অন্য দু’জন নিষ্প্রভ থাকলেও রবসন নিজেকে গোল পেয়ে আলাদা করেছিলেন। তাই ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষেও ছেত্রীকে আটকে রেখে তিনজনের একজন জ্বলে উঠলেই কাজ হয়ে যাবে।

তাহলেই টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে মাঠ ছাড়তে পারবে বসুন্ধরা কিংস। তবে সুনীল ছেত্রীর ব্যাঙ্গালুরুকে হারানোর ইতিহাস অবশ্য বাংলাদেশের ফুটবলারদের রযেছে। ঢাকায় ২০১৭ সালে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড রুবেল মিয়া ও সাদ উদ্দিনের গোলে হারিয়েছিল। বসুন্ধরার জন্য এটি বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে। এচাড়া বেশকিছু দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা।

প্রথম ম্যাচ জয়ের সঙ্গে গড়েছে ইতিহাসও। বাংলাদেশের প্রথম দল হিসেবে এএফসি কাপ অভিষেকের পর প্রথম দুই ম্যাচেই জয়ের কীর্তি এখন বসুন্ধরার। এশিয়ান ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় সেরা এই আসর এএফসি কাপে বাংলাদেশের অষ্টম প্রতিনিধি দলটির নাম বসুন্ধরা। এই আসরে খেলা ঢাকা মোহামেডান, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের ভাগ্যে জয় দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব তাঁদের অভিষেক ম্যাচে জিতলেও পরের ম্যাচ ড্র করে বসে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র জিতেছিল নিজেদের দ্বিতীয় এএফসি কাপের ম্যাচে। এএফসি কাপে সবচেয়ে বেশিবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা ঢাকা আবাহনী লিমিটেড অবশ্য প্রথম জয়ের স্বাদ পেতে অপেক্ষা করতে হয় চতুর্থ ম্যাচ পর্যন্ত। আকাশী-নীল জার্সিধারীরা ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে উঠেছিল। সেবছর টানা ৪ ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের মান রাখে আবাহনী। এএফসি কাপে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর মধ্যে যা টানা জয়ের একটি অনন্য রেকর্ডও বটে।

আবাহনীর জয়ের ধারা ধরে রেখে বসুন্ধরার দারুণ জয়ে ক্লাব ফুটবলে মালদ্বীপের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দেশের প্রতিনিধিদের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা বেড়ে এখন ছয়ে পৌছে গেছে। ক্লাব ফুটবলে একটা সময় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষের কাছে তেমন একটা পাত্তাই পেতো না মালদ্বীপের ক্লাবগুলো। ১৯৮৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা ৯ ম্যাচ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষের সঙ্গে জয় নেই মালদ্বীপ দলের।

আবার ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত টানা ৭ ম্যাচ হারের রেকর্ড আছে এই আসরে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর। শেষবার বাংলাদেশের কোনো ক্লাব মালদ্বীপের দলের কাছে হারে ২০১৮ সালে এএফসি কাপে। আসরের প্লে-অফে সাইফ স্পোর্টিংকে দুই লেগেই হারিয়ে গ্রুপ পর্বে খেলার সুযোগ হয়েছিল টিসি স্পোর্টসের। এবার সব রেকর্ড নিজেদের করে নেওয়ার লক্ষ্য বসুন্ধরা। প্রথম ম্যাচ জিতে সে পথে ভালোই এগিয়েছে বাংলাদেশের ক্লাবটি। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাঙ্গালুরু কতটা প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তুলতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...