বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট আলাদা একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে। দেশের জার্সিতে খেলার পাশাপাশি সব ক্রিকেটারই এখন ভিনদেশী লিগগুলোতে সুযোগ পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। বিশেষ করে সেটা যদি হয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), তাহলে তো দেশের হয়ে খেলাটাও গৌণ হয়ে ওঠে।
তবে ব্যতিক্রম বাংলাদেশের তারকারা; দেশের হয়ে খেলাটা ছিল তাদের কাছে প্রধান। ফলে বিশাল অংকের অর্থ হাতছাড়া হয়েছে সাকিব,লিটনদের। তাই তো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিজ উদ্যোগে তাদের আংশিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। সাকিব, লিটন এবং তাসকিন আহমেদকে একত্রে ৬৫০০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সত্তর লক্ষ টাকা) উপহার হিসেবে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি।
সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। এছাড়া লিটন দাস এবং তাসকিন আহমেদও পেয়েছেন সমপরিমাণ টাকা। আইপিএলে সাকিবকে ১ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে দলে টেনেছিল শাহরুখ খানের দল। অন্যদিকে, ওপেনার লিটনের পারিশ্রমিক ছিল ৫০ লাখ রুপি। এছাড়া লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস বদলি খেলোয়াড় হিসেবে তাসকিনকে নিতে চেয়েছিল। প্রত্যেকের উপহারের অংশ ঠিক হয়েছে পারিশ্রমিকের ভিত্তিতেই।
টাকার ঝনঝনানি, রংবেরঙের অভিজ্ঞতা আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের স্বাদ নিতে সবাই চান আইপিএলে খেলতে; সবার চাওয়া অবশ্য পূরণ হয় না। পারফরম্যান্স আর ভাগ্যের ছোঁয়ায় ডাক পান গুটি কয়েক তারকা। ভাগ্যবান পারফর্মারদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান। সর্বশেষ আসরে আবার অভিষেক হয়েছে লিটন দাসের।
কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় সাকিব আল হাসান আইপিএল ২০২৩ আসরে খেলতে পারেননি। বিসিবির কাছ থেকে স্বল্প সময়ের জন্য অনাপত্তিপত্র পেয়েছিলেন, পরবর্তীতে কলকাতা নাইট রাইডার্সের অনুরোধে নিজের নাম সরিয়ে নেন টুর্নামেন্ট থেকে।
লিটন দাস অবশ্য টুর্নামেন্টের মাঝপথে যোগ দিয়ে একটা ম্যাচ খেলতে পেরেছেন। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে এবং বিদেশে সিরিজ থাকায় আইপিএলের বড় একটি অংশে ছিলেন না তিনি। অন্যদিকে, নিলামে ডাক না পেলেও ইনজুরড ক্রিকেটারের রিপ্লেস হিসেবে বেশকিছু প্রস্তাব পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ। তবে তিনিও চোট শঙ্কায় সেসব প্রস্তাবে সায় দেননি।
বিসিবির পক্ষ থেকে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস বলেন, এটা আমাদের তরফ থেকে তাদের জন্য ছোট একটা সম্মাননা। ক্রিকেটাররা আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অর্থ চায়নি, আমরাই ভেবেছি তাদের পুরো না হলে অন্তত আংশিক ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত। তবে এটা নিয়মিত কোন ঘটনা হবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি।
জালাল ইউনুস আরো যোগ করেন যে, নিঃশর্তভাবে দেশের হয়ে খেলাটা যেকোনো ক্রিকেটারদের প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত। তবে তাদের নিজেদের কথা ভাবাটাও আবার আমাদের দায়িত্ব।
বাংলাদেশীদের মাঝে একমাত্র মুস্তাফিজুর রহমানই আইপিএলের উল্লেখযোগ্য একটা সময় দলের সাথে ছিলেন। তাই সাকিব, লিটনদের সাথে আপাতত নাম নেই মুস্তাফিজের। যদিও অফ ফর্মে থাকা এই বোলার খেলতে পেরেছিলেন কেবল মাত্র দুই ম্যাচ।
এখন অবশ্য আইপিএল নয়, বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের ভাবনায় আছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপ। আপাতত তাই এই দুই টুর্নামেন্টকে ঘিরেই নিজেদের জ্বালিয়ে নিচ্ছেন সাকিব, লিটনরা; দেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমী যে তাদের দিকেই তাকিয়ে।