সবাই তাহলে চাকার!

কি মুশকিল এক পরিস্থিতি চিন্তা করুন, আইসিসির নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বোলাররা করে যাচ্ছেন বল। এও কি মানা যায়! তবে মানা না গেলেও একটা সময় তেমনটাই ঘটেছে বিশ্ব ক্রিকেটে। তবে সে বিষয় আইসিসির খুব একটা বেশি জানাশোনা ছিল না। তবে মুত্তিয়া মুরালিধরন জানিয়েছিলেন বিষয়টা।

কি মুশকিল এক পরিস্থিতি চিন্তা করুন, আইসিসির নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বোলাররা করে যাচ্ছেন বল। এও কি মানা যায়! তবে মানা না গেলেও একটা সময় তেমনটাই ঘটেছে বিশ্ব ক্রিকেটে। তবে সে বিষয় আইসিসির খুব একটা বেশি জানাশোনা ছিল না। তবে মুত্তিয়া মুরালিধরন জানিয়েছিলেন বিষয়টা।

সত্যি বলতে মুরালিধরন জানাননি। তাঁকে নিয়ে যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষ করা হয় তখনই মূলত জানা যায় এসব তথ্য। ঘটনার সূত্রপাত ২০০৪ সালে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সেবার ৩-০ তে টেস্ট সিরিজ জিতে গিয়েছিল তাসমান পারে। ক্রিকেটের ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার সে দলটাই ছিল প্রথম যারা শ্রীলঙ্কার মাটিতে লংকানদের ওয়াইটওয়াশ করতে পেরেছিল।

তবে সে সিরিজেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার ছিলেন লংকান কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন। তবে সে সিরিজের শেষ টেস্টেই ঘটে বিপত্তি। মুরালিধরনের অন্যতম অস্ত্র ‘দুসরা’। আর সেই দুসরার বিপক্ষেই অভিযোগ জানান ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড। এর আগেও অবশ্য দুই দফা মুরালিধরনের বিপক্ষে অভিযোগ উঠেছিল। ১৯৯৫ সালের দিকে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে এবং ঠিক তাঁর বছর দুই বাদেই আবারও ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে।

সে দুই দফাই বায়োমেকানিক্যাল পর্যালোচনায় ছাড় পেয়ে যান মুরালিধরন। তবে দুসরা নিয়ে হওয়া বিতর্কের খানিকটা কোনঠাসা হয়ে গিয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে আটশ উইকেটের মালিক। তবে সে দফাও বেঁচে যান মুরালিধরন। বেঁচে যাওয়ার কথা যদিও ছিল না। কেননা সে সময় অবধি আইসিসির নিয়মানুসারে একজন বোলার সর্বোচ্চ পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত হাত বাঁকাতে পারতেন।

তবে মুরালিধরনের হাত প্রায় ১৪ ডিগ্রি অবধি বেঁকে যেত। তিনি কাজ করেন, এরপরও দুসরা করার সময় সর্বোচ্চ দশ ডিগ্রি অবধি তিনি নিজের কনুই সোজা রাখতে পেরেছিলেন। এরপর স্বাভাবিকভাবেই নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার কথা ছিল মুরালিধরনের। তবে তেমনটা না করে রিপোর্টে তাঁকে ছাড় দেওয়ার কথাই বলা হয়েছে। সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছিল ২০০৩ সালের একটি পরীক্ষার কথা।

এক পরীক্ষায় দেখা যায় প্রায় ২১ জন এলিট ফাস্ট বোলারদের অধিকাংশেরই বোলিং অ্যাকশন আইসিসি আইনে অবৈধ। দেখা যায় তাঁদের করা ৩৪টি বলের মধ্যে ৩১টিই ছিল নিয়ম পরিপন্থী। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসির প্রয়োজন ছিল আরও বেশি তথ্যের। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বোলারদের তথ্য পর্যালোচনা করাটা খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। সে প্রয়োজনটা মেটাতে অনেক বেশি সহয়তা করেছিল সে সময়ে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।

২০০৪ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত হওয়া এক রিপোর্টে জানা যায় আইসিসির পরীক্ষা করা বোলারদের মধ্যে কেবলমাত্র একজন বোলার পাঁচ ডিগ্রির কম কনুই বাঁকিয়ে বল করতে সক্ষম হন। বাকিদের বোলিং অ্যাকশন স্বাভাবিকভাবেই ছিল অবৈধ। রীতিমত চক্ষু চড়কগাছ। সে রীপোর্ট অনুযায়ী ক্রিকেট বিশ্বের ৯৯ শতাংশ বোলাররাই ছিলেন চাক বোলার। এমনকি গ্লেন ম্যাকগ্রা, শন পোলকদের মত বোলারদের নামও জড়িয়ে যায়।

সে সময়ে বোলারদের কনুইয়ের বাঁক নির্ধারণ করে দেওয়া ছিল। স্পিনারদের জন্য ছিল পাঁচ ডিগ্রি, সাড়ে সাত ছিল মিডিয়াম পেসারদের আর দশ ছিল পেসারদের। তবে রিসার্চের রিপোর্টে জানা যায় সাধারণ মানুষের চোখে কেবল ১৫ ডিগ্রির বেশি বাঁকই চোখে পড়বে। এরপরই মূলত আইসিসি তাঁদের পূর্বের নিয়ম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

আইসিসির গভর্নিং বডির থেকেই প্রস্তাবনায় সম্মতি জানানো হয়। এরপর থেকেই মূলত ১৫ ডিগ্রির বেশি বাঁক হলে তা অবৈধ বোলিং হিসেবেই বিবেচিত হতে থাকে। যার ফলে মুরালিধরনের দুসরা করতে আর তেমন কোন সমস্যাই থাকে না। তবে এমন সিদ্ধান্তে বহু ক্রিকেট বোদ্ধারা বেজায় চটেছিলেন। তবে পরিবর্তন যেন ছিল অবধারিত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...