তোমার চিহ্ন তবু রবে বেঁচে

সেক্স টেপ কেলেংকারিতে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ব্যালন ডি’অর জিতে যেন ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখেছিলেন ফরাসি স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা। কোচ দিদিয়ের দেশমও উপেক্ষা করতে পারেননি, মনোমালিন্য ভুলে তাঁকে ডেকে নিয়েছিলেন জাতীয় দলে। কিন্তু সেই গল্পের শেষটা সুখকর হলো না, ইনজুরিতে পড়ে ক্যারিয়ারের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপে মাঠে নামা হচ্ছে না করিম বেনজেমার। কেবল ফ্রান্স নয়, বিশ্বকাপে বেনজেমার না থাকাটা যেন বিশ্বকাপেরই ক্ষতি। 

সতীর্থ ম্যাথিউ ভ্যালবুয়েনার সেক্স টেপ ব্ল্যাকমেইলের কেলেংকারিতে ২০১৬ সাল থেকে টানা চার বছর জাতীয় দলে নির্বাসিত ছিলেন বেনজেমা। ফলে ছিলেন না ২০১৮ সালে রাশিয়াতে বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স দলের স্কোয়াডে। স্বয়ং ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিন্দা করেছিলেন বেনজেমার এমন কর্মকাণ্ডের। বলেছিলেন, ‘একজন জাতীয় অ্যাথলেট গোটা দেশবাসীর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। যদি সে তা না হয়, তাহলে ফ্রান্স দলে তাঁর কোনো জায়গা নেই।’ ফ্রান্স দলে স্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যাওয়া এক তারকার নাম তখন বেনজেমা।

সেই ঘটনা আরো পরিণত করে তোলে বেনজেমাকে। ধার ফেরে মাঠের খেলায়, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ক্লাব ছাড়ার পর একা হাতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদকে। জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা, নিজে পেয়েছেন বিশ্বসেরা ফুটবলারের খেতাব।

এমন দারুণ পারফর্ম করার পর আর কতদিন উপেক্ষা করা যায়! দিদিয়ের দেশমও পারেননি। ২০২০ ইউরোতে তাই সব বিভেদ মিটিয়ে জাতীয় দলে ডেকে নেন বেনজেমাকে। গোটা ফ্রান্স সেদিন তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল জাতীয় দলে প্রত্যাগমনে।

কাতার বিশ্বকাপ ছিল বেনজেমার ডানায় শেষ পালক যোগ করবার মতো। এই বছরের শুরুতে তাই একবার বলেছিলেন, ‘এখনো কিছু ট্রফি বাকি আছে যেগুলো আমি জিতিনি। আমি ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে চাই। বর্তমানে আমার জীবনের লক্ষ্য এটাই।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বকাপ শুরুর একদিন আগেই ছিটকে গেলেন দল থেকে। 

গত দেড় বছর ধরেই ক্যারিয়ারের সেরা ফুটবলটা খেলছিলেন বেনজেমা। বয়সটা ৩৪ হলেও মাঠের খেলায় তাঁর প্রভাব পড়েনি। কিন্তু এই মৌসুমে ইনজুরি সমস্যাটা তাঁকে ভোগাচ্ছিল একদম শুরু থেকেই। তবে বিশ্বকাপ নিয়ে বরাবরই ফোকাসড ছিলেন তিনি। এমনকি গুঞ্জন ছিল বিশ্বকাপে ফিট থাকতে মাদ্রিদের ম্যাচগুলো মিস করছেন বেনজেমা। মাদ্রিদ কোচ অ্যানচেলত্তি অবশ্য সেসব গুজব উড়িয়ে দেন।

তবে যাই হোক, বর্তমানে আর ম্যাচ খেলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। বেনজেমা নিজেও মেনে নিয়েছেন সেটা, সে কারণেই তাঁর বদলি হিসেবে যাতে দল কাউকে নিতে পারে সেজন্য নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন স্কোয়াড থেকে।

ইনস্টাগ্রামে বেনজেমা লিখেন, ‘আমার জীবনে আমি কখনোই হাল ছাড়িনি। কিন্তু আজ রাতে আমাকে দলের কথাই ভাবতে হবে যেমনটা আমি সবসময় ভেবে এসেছি। তাই আমি দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আশা করি আমার বদলে যিনি দলে আসবেন তিনি ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতাতে ভূমিকা রাখবেন।’ যদিও ফরাসি কোচ দেশম জানিয়েছেন বেনজেমার বদলি হিসেবে নতুন কাউকে দলে ডাকবেন না তাঁরা। 

অবশ্য বেনজেমাকে অপছন্দ করার মানুষেরও অভাব নেই। তরুণ ভিনিসিয়াসকে মাঠেই গালমন্দ করা কিংবা অলিভিয়ের জিরুডের সমালোচনা করায় অনেকেই দেখতে পারেন না বেনজেমাকে। তা সত্ত্বেও বিশ্বকাপে বেনজেমার না থাকা ফ্রান্সের জন্য বড় ক্ষতি। মাঠে তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। তাঁর ক্লাব সতীর্থ রদ্রিগো লিখেন, ‘বিশ্বের সেরা টুর্নামেন্টে বিশ্বের সেরা ফুটবলারের থাকা উচিত। বিশ্বকাপ আপনাকে মিস করবে।’

বেনজেমাকে আপনি ভালোবাসুন কিংবা গালি দিন, রদ্রিগোর কথার সাথে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link