শেষ হল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসর। প্রথম বারের মতো শিরোপা জিতল ফরচুন বরিশাল। সাত দলের লড়াইয়ে নজর কেড়েছেন অনেকেই। তবে আগের আসরের তুলনায় এবারের বিপিএলে দেশি ক্রিকেটারদের আধিপত্য ছিল বেশি। সর্বোচ্চ রান কিংবা উইকেট শিকারের দৌড়ে দেশি ক্রিকেটাররাই এগিয়ে থেকে এবারের আসর শেষ করেছে।
বিপিএলের নিয়মানুযায়ী একটি দলে সর্বোচ্চ ৪ জন বিদেশি ক্রিকেটার খেলতে পারেন। তো সেই নিয়ম মেনেই পারফর্ম্যান্সের বিচারে একটি একাদশ বানালে কেমন হয়? খেলা ৭১ তাই তৈরি করেছে বিপিএল সেরা একাদশ।
বিপিএলের দশম আসরের এই সেরা একাদশে সর্বোচ্চ তিন জন করে রয়েছেন ফরচুন বরিশাল আর রংপুর রাইডার্স থেকে। দু’জন ক্রিকেটার রয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স থেকে। আর একজন করে রয়েছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, দুর্দান্ত ঢাকা ও সিলেট স্ট্রাইকার্স থেকে। অধিনায়কত্ব পেয়েছেন চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক খেলা ৭১ নির্বাচিত সেই একাদশ।
- লিটন দাস- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স (উইকেটরক্ষক)
পুরো টুর্নামেন্টে হয়ত সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি লিটন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি ফিফটি পেয়েছেন। একই সাথে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৯১ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ফাইনালে তোলার ম্যাচে তিনিই হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা একাদশে তিনি থাকছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে। একই সাথে খেলা ৭১ এর দৃষ্টিতে সেরা একাদশের উদ্বোধনী জুটিতেও থাকছেন তিনি।
- তামিম ইকবাল-ফরচুন বরিশাল (অধিনায়ক)
এবারের বিপিএলের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট, সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক- দুই পুরস্কারই উঠেছে তামিম ইকবালের হাতে। একই সাথে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন বিপিএল শিরোপা। লিটন দাসের সাথে টুর্নামেন্ট সেরার দলে সন্দেহাতীতভাবেই তাই ইনিংস শুরু করবেন তামিম ইকবাল। তবে ব্যাটিং ছাড়া, যেভাবে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বিদেশি ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, তাতে বিপিএল সেরা অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটাও থাকছে তাঁর হাতে।
- তাওহীদ হৃদয়-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স
সর্বশেষ আসরের সেরা তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে আগমন ঘটেছিল তাওহীদ হৃদয়ের। সিলেট স্ট্রাইকার্সের দুর্দান্ত এক মৌসুমে হৃদয় ছিলেন অগ্রগামীদের একজন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বরং ছাপিয়ে গেছে আগের আসরকেও। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। তবে সবচেয়ে নজর কেড়েছে তাঁর দৃষ্টিনন্দন স্ট্রাইকরেট। ৩৮.৫ গড়ে ৪৬২ রান করেছেন প্রায় ১৫০ ছুঁইছুঁই স্ট্রাইকরেটে।
- সাকিব আল হাসান-রংপুর রাইডার্স
এবারের বিপিএলে শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি সাকিবের। কিন্তু টুর্নামেন্টে যত সময় গড়িয়েছে, সাকিবের সহজার রূপ ততই ফুটে উঠেছে। ব্যাট হাতে দুই ফিফটিসহ ২৩.১৮ গড়ে ২৫৫ রান করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার ছিল তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট। পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ১৫৮.৩৮ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন। আর বল হাতে যথারীতি সাকিব ছিলেন ঠিক তাঁর মতোই। শরিফুলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ টা উইকেট নিয়েছেন তিনি।
- কাইল মায়ার্স-ফরচুন বরিশাল
এবারের বিপিএলে সন্দেহাতীতভাবেই সেরা বিদেশি পারফর্মার ছিলেন কাইল মায়ার্স। ফরচুন বরিশালের শিরোপা জয়ের পথে নিজের খেলা ৬ ম্যাচেই দারুণ অবদান রেখেছেন। ফাইনালে হয়েছেন ম্যাচসেরা। এ ছাড়া বল হাতে সিংহভাগ ম্যাচেই তিনি দলকে ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন। ওপেনার হলেও শেষ দিকে এসে এ ব্যাটার খেলেছেন মিডল অর্ডারে। তাতে ৪০.৫ গড়ে ২৪৩ রান করেছেন এ ক্যারিবিয়ান পাওয়ার হিটার। আর বল হাতে ৬ ম্যাচে ৯ উইকেট শিকার তাঁর।
- জিমি নিশাম- রংপুর রাইডার্স
রংপুর রাইডার্সের হয়ে বিপিএল খেলতে আসা জিমি নিশাম ৭ ইনিংসেই হাঁকিয়েছেন তিনটা ফিফটি। এর মধ্যে কোয়ালিফায়ারে খেলেছিলেন ৯৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। যদিও সে ম্যাচে তাঁর দল জিতেনি। তবে ১৬৭.২৪ স্ট্রাইকরেটে ২৯১ রান করা এ ক্রিকেটার বিপিএলের সেরা একাদশে ৪ বিদেশি কোটায় অনুমিতভাবেই থাকছেন।
- বেনি হাওয়েল- সিলেট স্ট্রাইকার্স
তাঁর সিলেট স্ট্রাইকার্স রাউন্ড রবিন লিগের গণ্ডিই পেরোতে পারেনি। তবে বেনি হাওয়েল ছিলেন গোটা বিপিএল জুড়ে সিলেটের ধারাবাহিক এক পারফর্মারের নাম। ৫৭.২৫ গড়ে ২২৯ রান করেছেন। একই সাথে বল হাতে ১০ উইকেট নিয়েছেন এ অলরাউন্ডার। বলাই বাহুল্য, এবারের বিপিএলে আন্ডাররেটেড পারফর্মারদের তালিকা করলে তাঁর নামই প্রথম সারিতে থাকবে।
- শেখ মেহেদী-রংপুর রাইডার্স
টুর্নামেন্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৬ টা উইকেট তাঁর দখলে। এ ছাড়া রংপুর রাইডার্সের হয়ে এবারের বিপিএলে ব্যাট হাতেও বেশ কিছু কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন এ অলরাউন্ডার। ১৪৫.৬ স্ট্রাইকরেটে ১৮২ রান করেছেন তিনি। যার মধ্যে ৬০ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংসও রয়েছে তাঁর। সব মিলিয়ে বিপিএল সেরা একাদশে স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে অনুমিতভাবেই থাকছেন তিনি।
- মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (ফরচুন বরিশাল)
ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় প্রথম চার ম্যাচ খেলতে পারেননি। তবে যখন ফিরেছেন, তখন প্রত্যাবর্তনটা হয়েছে দুর্দান্ত। নতুন বলে বোলিং, কিংবা ডেথ ওভারে কার্যকরী স্পেল- দুটোতেই নজর কেড়েছেন তিনি। ৯ ম্যাচে নিয়েছেন ১৫ টা উইকেট। এ ছাড়া ব্যাট হাতে কয়েকটা ক্যামিও ইনিংসও খেলেছেন তিনি।
- শরিফুল ইসলাম- দুর্দান্ত ঢাকা
দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে দারুণ এক বিপিএল কাটিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। যদিও তাঁর দল শেষ পর্যন্ত হারের বৃত্তই ভাঙতে পারেনি। টানা ১১ হারের লজ্জায় ডুবেই এবারের বিপিএল শেষ করেছে। তবে দলের পারফরম্যান্স এক পাশে রাখলে, শরিফুল পুরো আসরে ছিলেন অনবদ্য। ২২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটে শিকারী বোলার তিনি। ঢাকার হয়ে রান আটকেছেন, নিয়মিত বিরতিএ উইকেট এনে দিয়েছেন। তবে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করলেও দলগত সাফল্যে হাসতে পারেননি তিনি।
- বিলাল খান- চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স
চট্টগ্রামের বোলিং আক্রমণের দাপটের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন বিলাল খান। বিশেষত পুরো টুর্নামেন্টে দলের ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইকোনমিক্যাল বোলিং করেছেন। পাওয়ার প্লে-তেও তিনি ব্যাটারদের মাথাব্যাথার বিশাল এক কারণ হয়েছিলেন গোটা টুর্নামেন্টে। সেই সাথে উইকেটের মিছিলেও হেঁটেছেন নিয়মিতই। ১৩ ম্যাচে নিয়েছেন ১৩ উইকেট।
- তানজিদ হাসান তামিম -চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স (দ্বাদশ ব্যক্তি)
এবারের বিপিএলে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত একটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। আর সেই সেঞ্চুরিতেই শেষ চার নিশ্চিত হয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। ২ ফিফটি আর ১ সেঞ্চুরিতে ৩৮৪ রানের সুবাদে দারুণ একটা মৌসুম কাটিয়েছেন তরুণ এ ব্যাটার। তাই বিপিএল সেরা একাদশের বাইরে দ্বাদশ ক্রিকেটার হিসেবে থাকছেন তিনিই।