অটল প্রহরীর কড়া পাহারা

ফুটবলে তাঁকে সাধারণত বলা হয় গোলরক্ষক। তিনকাঠের মাঝখানে, দস্তানা হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। অপেক্ষায় থাকেন নিজ দলের রক্ষণের ভুল কিংবা প্রতিপক্ষ কোন খেলোয়াড়ারের অসাধারণ নৈপুণ্যের । সামনে দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়টা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হলেও একজন গোলরক্ষক যেন অটল।

কয়েক ধাপের প্রতিরক্ষা বলয়ে মোড়ানো। তবুও তো ফাঁক-ফোকড় গলিয়ে শত্রুর আক্রমণ বাণ ছুটে এসে আঘাত করে প্রাসাদে। অগ্নিবাণের আগুনে সামন্য ফুলকি তো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করে দেয় সবকিছু। তবে কেউ একজন থাকেন অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। চোখের পলকেও যেন কোন অগ্নিবাণ আঘাত করতে না পারে সে খেয়ালটা রাখাই যেন তাঁর কাজ। তিনি সে কাজটাই করেন মন দিয়ে।

ফুটবলে তাঁকে সাধারণত বলা হয় গোলরক্ষক। তিনকাঠের মাঝখানে, দস্তানা হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। অপেক্ষায় থাকেন নিজ দলের রক্ষণের ভুল কিংবা প্রতিপক্ষ কোন খেলোয়াড়ারের অসাধারণ নৈপুণ্যের। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়টা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হলেও একজন গোলরক্ষক যেন অটল। তিনি যেন কোনভাবেই জালে জড়াতে দেবেন না বল। বর্তমান সময়ে এমন সব দুর্ধর্ষ সব গোলরক্ষকদের নিয়েই থাকছে আজকের আলোচনা।

  • থিবো কোর্তোয়া (রিয়াল মাদ্রিদ/বেলজিয়াম)

২০১৮ সালের বিশ্বকাপের কথা। একের পর এক ব্রাজিলের আক্রমণ একা হাতেই রুখে দিচ্ছিলেন থিবো কোর্তোয়া। কি অসাধারণ সব সেভ তিনি সে ম্যাচে দিয়েছিলেন। একেবারে বিশ্ব মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ম্যাচের মোমেন্টাম একক প্রচেষ্টায় নিজেদের পক্ষেই রেখেছিলেন কোর্তোয়া। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা হেরেছিল খোদ কোর্তোয়ার কাছে।

সে কোর্তোয়াই এখন রীতিমত আরও পরিণত। রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। দীর্ঘকায় একজন গোলকিপার, তবুও অসাধারণ তাঁর রিফ্লেক্স। তাঁর হাত গলে বল জড়াবে জালে এ যেন প্রায় অসম্ভব। লস ব্ল্যাঙ্কোস রক্ষণে মৃদু দূর্বলতাও যেন সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন থিবো কোর্তোয়া। এ সময়ে তাঁর সাথে লড়াই করে সেরাদের সেরা হবার যেন কেউ নেই। গেল মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসির মত বড় ক্লাবগুলোকে হতাশার সাগরে ডুবানোর অন্যতম নায়ক তিনি।

  • ম্যানুয়েল নয়্যার (বায়ার্ন মিউনিখ/ জার্মানী)

২০১৪ বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভস নিজের করে নিয়েছিলেন ম্যানুয়েল নয়্যার। তাঁকে ঠিক জার্মান দেয়াল বলা যায় না। তিনি যেন দেয়ালের থেকেও বেশিকিছু। ‘সুইপার কিপার’ এই বিষয়টার বিস্তারটা আধুনিক ফুটবলে তাঁর হাত ধরেই হয়েছে। ভয়ডরহীন একজন গোলরক্ষক। তিন কাঠের নিচেই একজন গোলরক্ষক কাটিয়ে দেবেন সারাটা সময় এমন মতাদর্শের বিরোধীতা অনায়াসে করতে পারেন নয়্যার। সে জন্য অবশ্য ভয়কে জয় করার দুর্দমনীয় শক্তির প্রয়োজন।

সেটা ম্যানুয়েল নয়্যার নিজের মধ্যে খুব ভালভাবেই ধারণ করেন। বয়সটা বেড়েছে, তবে সে সাথে পাল্লা দিয়ে কমেনি উদ্দ্যম। এখনও ঠিক তরুণ নয়্যার হয়েই দাপটের সাথে টিকে আছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে। আর জার্মানী দলে তো এখনও গোলকিপার হিসেবে তিনি একাদশে সবার আগেই বিবেচিত হন। শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি, বুদ্ধিদীপ্ততা নয়্যারের সবচেয়ে বড় গুণ। ৩৬ বছর বয়সেই বিশ্ব ফুটবলের সেরা পাঁচ গোলরক্ষকদের একজন নয়্যার।

  • অ্যালিসন বেকার (লিভারপুল/ ব্রাজিল)

ব্রাজিলের একটা আস্থাভাজন নাম অ্যালিসন বেকার। এই মূহুর্তে সেরা গোলরক্ষকদের একজন তিনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লিভারপুলের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক। ২০২০-২১ মৌসুমের অধিকাংশ সময়ে তিনি ছিলেন ইনজুরি আক্রান্ত। তবে শেষের দিকে খেলতে নেমে ওয়েস্ট ব্রুমের সাথে অসাধারণ এক হেডে গোল করে দলকে রেখেছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দৌড়ে। একজন গোলকিপার হয়েও মাঠে তাঁর সরব উপস্থিতি যেন সব সময়ই বিদ্যমান।

এমনটা ধারণা করা হয় এই মুহূর্তে সম্মুখ লড়াইয়ে অ্যালিসন বেকারকে হারিয়ে দেওয়া বড্ড কঠিন। বিড়াল চোখের অ্যালিসনের চোখজোড়া যেন সব সময় সতর্ক। দস্তানা হাতে রীতিমত এক গ্রীক যোদ্ধা। তিনি যেন নিজের দুর্গ আগলে রাখতে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ। এমন একজন এক গোলরক্ষকের উপর ভর করেই ব্রাজিল আবার দেখছে হেক্সা জয়ের গল্প।

  • জান ওবলাক (অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ/ স্লোভেনিয়া)

আন্তর্জাতিক ফুটবলে খুব একটা শক্তিশালী দল নয় স্লোভেনিয়া। দলের বাকি সদস্যরা লড়াই করার চেষ্টা করেন। আর জান ওবলাক নিজের সবটুকু দিয়ে যেন সামলে রাখার চেষ্টা করেন স্লোভেনিয়ান গোলদ্বার। শত চেষ্টাতেও হয়ত আশান্বরুপ ফলাফলের দেখা পাননা ওবলাক। তবে খানিকটা ভিন্ন চিত্র স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের সাথে।

সেখানেও তিনি শুরুর একাদশে নিয়মিত। সেটা একটা লম্বা সময় ধরে। কোচ ডিয়েগো সিমিওনির আস্থাভাজন তিনি। অ্যাতলেটিকোর গোলদ্বারের অতন্দ্র প্রহরী। শক্তহাতে সামলান প্রতিপক্ষের সব ধরণের আক্রমণ। চেষ্টা করেন নিজেকে উজাড় করে দিতে। বর্তমান সময়ে ইউরোপের সেরা গোলরক্ষকদের একজন ওবলাক, এ কথা বলতে দ্বিধা নেই।

  • এডারসন (ম্যানচেস্টার সিটি/ ব্রাজিল)

একই সময়ে বিশ্ব মানের দুইজন গোলরক্ষক এর আগে ব্রাজিলের ইতিহাসে বেশ বিরল। তবে অ্যালিসনের সাথে পাল্লা দিয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে যাচ্ছেন এডারসন। ম্যানচেস্টার সিটিতে শুরুর একাদশে নিয়মিত হলেও ব্রাজিল দলে সাইড বেঞ্চে বসে থাকতে হয় অ্যালিসন দলে থাকলে। এ যেন এক মধুর অপেক্ষা। তবে যেটুকু সময় তিনি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান নিজের সেরাটা দিয়েই খেলার চেষ্টা করেন।

গোলবারের ওই আয়তাকার বক্সের সামনে থেকে সুনিপুণ দুরপাল্লার পাস দিতে সক্ষম এডারসন। এ নিয়ে চর্চার বিষয়ে পরিণত হন তিনি। হরহামেশাই আক্রমণে আলাদা এক মাত্রা যোগ করেন নিজের অভাবনীয় সব পাসের মাধ্যমে। ব্রাজিলিয়ানদের হেক্সা জয়ের মিশনে তিনিও হতে পারেন অন্যতম আস্থাভাজন একজন। একটু নির্ভার নিশ্চয়ই থাকবে ব্রাজিল কোচ তিতে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...