যে কেউ এক বাক্যে বলে দেবে বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি এখন ভারত। হ্যাঁ, অবস্থানটা ভারত তৈরি করে নিয়েছে। একটা লম্বা সময় ধরে তারা নিজেদের ক্রিকেটের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে আজকের এই পাকাপোক্ত অবস্থান তাদের। বিশেষ করে বলতে গেলে ওয়ানডে দলের কথা না বললেই নয়।
দু’দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ রয়েছে ভারতের দখলে। একচ্ছত্র আধিপত্য দেখানো অস্ট্রেলিয়ার পরই যৌথভাবে তাদের অবস্থান দ্বিতীয়তে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট যখন সময়ের সাথে পথ হারিয়েছে ঠিক তখন ভারতের ক্রিকেট যেন নতুন পথে ধারাবাহিক হয়েছে। তাই আজকের আয়োজনে থাকছে ভারতের সর্বকালের সেরা ওয়ানডে একাদশ।
- বীরেন্দ্র শেবাগ
মারকুটে ব্যাটার হিসেবে একটা নামডাক হয়েছে বীরেন্দ্র শেবাগের। তাছাড়া মাঠের বাইরে কথার লড়াইটাও বেশ ভালভাবেই আয়ত্ত্বে ছিল তাঁর। তবে বোলারদের মেরে তুলোধুনো করতেই যেন বেশি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করতেন। ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি সে কাজটাই করে গেছেন। সর্বকালের সেরা একাদশে তাঁর জায়গটা তাই প্রাপ্য। তাছাড়া ৯৬ উইকেট নেওয়া শেবাগ হতে পারেন একজন যোগ্য পার্টটাইম বোলার।
- শচীন টেন্ডুলকার
ওয়ানডে ফরম্যাটে ৪৯টি শতক রয়েছে যার নামের পাশে তিনি শচীন টেন্ডুলকার। ক্ষুদ্রকায় শচীন ব্যাট হাতে ছিলেন দানব। শতশত দৃষ্টিনন্দন শট আর বিরল সব রেকর্ডের মালিক শচীন কোনরকম দ্বিধাদ্বন্দ ছাড়াই ভারতের সর্বকালের সেরা ব্যাটার। যদিও ক্যারিয়ায়রের শুরুতে তিনি ওপেনার ছিলেন না, তবুও নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ তিনি রেখেছিলেন ওপেনার হয়েই। সেখানটায় আজও যেন উজ্জ্বল তিনি।
- বিরাট কোহলি
মুগ্ধ করা কাভার ড্রাইভের কথা বললেই যাদের নাম সামনে চলে আসে তাদের মধ্যে বিরাট কোহলি অন্যতম। সম্ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়ে রীতিমত রাজত্ব করেছেন বিশ্বক্রিকেটে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি অফফর্মে থাকলেও, ফর্মে থাকা বিরাট যে ঠিক কতটা ভয়ংকর তা আর নিশ্চয়ই নতুন করে বলবার নয়। আর সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার অনায়াসে ভারতের সর্বকালের সেরা একাদশে থাকার যোগ্য দাবিদার।
- সৌরভ গাঙ্গুলি
‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ খ্যাত সৌরভ গাঙ্গুলি ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক হওয়ার পাশাপাশি দূর্দান্ত ব্যাটার। ব্যাট হাতে দলে হাল ধরা, দ্রুত রান করায় বেশ পটু এই ক্রিকেটার। বা-হাতের ব্যাটিং দিয়ে বিনোদিত করেছেন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে গোটা ভারত বর্ষ। তর্কের অবকাশ খুব একট নেই তাকে সর্বকালের সেরা একাদশে রাখা নিয়ে।
- যুবরাজ সিং
স্টুয়ার্ড ব্রডকে ছয় ছক্কা হাঁকানোর ঘটনা নিশ্চয়ই কয়েকশবার দেখা হয়ে গিয়েছে। ব্যাটিং প্রান্তে থাকা যুবরাজ সিং ঠিক এমন ধ্বংস লীলাই চালাতেন নিজেদের সময়ে। ব্যাট হাতে তাণ্ডবের পর বল হাতে তিনি রীতিমত হয়ে উঠতেন শিকারি। দলের প্রয়োজনে উইকেট নেওয়া কিংবা রান আটকে রাখার কাজটাও আয়ত্ত্বে ছিল তাঁর।
- মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক/উইকেট রক্ষক)
ইতিহাসে একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে সাদা বলের ক্রিকেটের সবক’টি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছেন কেবল মহেন্দ্র সিং ধোনি। উইকেটের পেছনে তিনি যেন ছিলেন চিতাবাঘ অথবা বাজপাখি। দ্রুততার সাথে কি করে প্রতিপক্ষ ব্যাটারের ভুলকে কাজে লাগানো যায় সেটা তাঁর খুব ভাল করেই জানা।
তাছাড়া ব্যাট হাতেও শেষের দিকে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার কাজটা তাঁর থেকে নিশ্চয়ই কারও ভাল জানা নেই। আর দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি ঠিক কতটুকু নিজের মধ্যে ধারণ করেন তা তো দিনের আলোর মত স্পষ্ট। তাই ভারতের সর্বকালের সেরা একাদশের অধিনায়কের দায়িত্বটাও তাঁর উপরই ন্যাস্ত থাকছে।
- কপিল দেব (সহ-অধিনায়ক)
ভারতকে প্রথম বিশ্বদরবারে সমীহ আদায় করে দেওয়া অধিনায়ক ছিলেন কপিল দেব। ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে শুরু করা বিশ্বকাপ যাত্রা তিনি শেষ করেছেন দলকে শিরোপা জিতিয়ে। ব্যাটে-বলে পারফর্ম করার পাশাপাশি তিনি দলকে এক সুঁতোয় গেঁথে রেখেছিলেন। তাছাড়া বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানো ১৭৫ রানে অনবদ্য ইনিংস নিশ্চিয়ই ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা। কপিল দেবকে ছাড়া ভারতের যে কোন একাদশ সাজানো প্রায় অসম্ভব।
- রবিচন্দ্রন অশ্বিন
ঘূর্ণির জাদুতে ম্যাচ কি করে পক্ষে নিয়ে আসতে হয় সেটা বেশ ভাল করেই জানা রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ভারতের ক্রিকেটে এখনও তাঁর প্রতাপ বিদ্যমান। ঠিক এমন প্রতিভাবান বোলারকে এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া দুষ্কর। অশ্বিনের অস্ত্রাগারও বেশ সমৃদ্ধ। সময় আর কন্ডিশন বুঝে তিনি বলের বৈচিত্র্যের ছোবলে উইকেট নিতে বেশ পারদর্শী। রেকর্ডেও রয়েছে তাঁর বেশ দখল।
- হরভজন সিং
ভারত সম্ভবত বিশ্বমানের স্পিনার সংকটে ভোগেনি। হরভজন সিংদের মত বোলাররা কখনো সে অভাবটা অনুভব করতে দেননি। সাদা বলের ক্রিকেটের হরভজনের পরিসংখ্যানটা দারুণ। একটু ব্যতিক্রম বোলিং অ্যাকশন যেমন তাকে আলাদা করেছে, ঠিক তেমনি তাঁর বোলিং দক্ষতাও তাকে অন্য সবার থেকে একটু বাড়তি উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তাইতো তিনি থাকছেন আজকের এই একাদশে।
- জহির খান
জহির খানের প্রস্থানের পর একজন বিশ্বমান তো দূরে থাক, একজন ভাল মানের বাঁ-হাতি পেসার খুঁজছে হন্যে হয়ে। তবুও ঠিক জহির খানের ফেলে যাওয়া জায়গাটা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জহির তাঁর গতি আর সুইংয়ে কাবু করতেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের। আর সেটা করতেন নিয়ম করে। উইকেট নেওয়াতে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।
- ভেঙ্কটেশ প্রসাদ
ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তবে তিনি তাঁর ক্রিকেট প্রতিভাটা ঠিকই দেখিয়ে গেছেন। স্লোয়ার কিংবা দুইদিকে স্যুইং করতে পারার ক্ষমতা দিয়ে তিনি লড়ে গেছেন ভারতের হয়ে। গতিশীল তিনি ছিলেন না। তাতে কিছু যায় আসে না। বাইশ গজে তিনি আতঙ্ক ঠিকই ছড়িয়েছেন। আর উইকেট নিজের পকেটে পুড়েছেন।
- দ্বাদশ ব্যক্তি- মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
বেশ একটা বিতর্কিত চরিত্র ছিলেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। তা অবশ্য মাঠের বাইরে। মাঠের ভেতরে সদা হাস্যজ্জ্বল ছিল তাঁর ব্যাট। বোলারদের মারতে পারাটাই ছিল তাঁর প্রধান কাজ। বল বাউন্ডারি ছাড়া করতেই যেন তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। অদম্য এক ক্রিকেটারের ওয়ানডেতে সাতখানা শতক রয়েছে। লম্বা ক্যারিয়ারটা বর্ণাঢ্যই বটে।