লাহোর কালান্দার্সের টানা দুবার শিরোপা জেতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এবারের পিএসএলের আসর। টুর্নামেন্টজুড়েই অভিজ্ঞদের পাশাপাশি সমানতালে পারফর্ম করে গেছেন তরুণ ক্রিকেটাররাও। আসুন দেখে নেয়া যাক এবারের পিএসএলে আলো ছড়ানো ছয় তারকা ক্রিকেটারকে।
- শাহীন শাহ আফ্রিদি (লাহোর কালান্দার্স)
পিএসএলের ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে লাহোর কালান্দার্সকে টানা দুবার শিরোপা জিতিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। বাঁ-হাতি এই পেসারের বোলিং নৈপুণ্যের পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ প্রশংসিত হয়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে।
মাত্র ২২ বছর বয়সী এই তারকা ফাইনালে ব্যাট হাতেও আলো ছড়িয়েছেন। ইনিংসের মাঝপথে পথ হারানো লাহোর তাঁর ১৫ বলে ৪৪ রানে ভর করেই ২০০ রানের বড় সংগ্রহ পায়। এরপর বল হাতেও ছিলেন অনবদ্য, চার উইকেট নিয়ে একাই গুঁড়িয়ে দেন মুলতানের ব্যাটিং অর্ডার।
- ইমাদ ওয়াসিম (করাচি কিংস)
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লেও পিএসএলে ব্যাট এবং বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম। বাঁ-হাতি এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য ১৩৪.৬৬ গড় এবং ১৭০ স্ট্রাইকরেটে ৪০৪ রান করেন।
কেবলমাত্র টুর্নামেন্টের পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েই সন্তুষ্ট থাকেননি, এবারের পিএসএলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকার করেন তিনি। তাঁর চেয়ে কম ইকোনমিতে বল করেছেন মাত্র তিনজন বোলার।
যদিও তাঁর দল করাচি কিংসের সেমিতে না পৌঁছানোর দায়ভার কিছুটা হলেও অধিনায়ক ইমাদের কাঁধে বর্তায়। তবে খেলোয়াড় হিসেবে গোটা টুর্নামেন্টজুড়েই ইমাদের পারফরম্যান্স ছিল অনবদ্য। তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে পাকিস্তান জাতীয় দলে পুনরায় ডাক পেয়েছেন এই তারকা।
- ইহসানউল্লাহ (মুলতান সুলতান্স)
ভুলে যাওয়ার মতো এক ফাইনাল কাটালেও গোটা টুর্নামেন্টেই অনবদ্য বোলিং করেছেন ইহসানউল্লাহ। মুলতান সুলতান্সের হয়ে ২২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন এই তারকা।
সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী এবং তাঁরই সতীর্থ আব্বাস আফ্রিদির চাইতে মোটে এক উইকেট কম পেয়েছেন এই তারকা। তবে ইহসানউল্লাহর ইকোনমি যেখানে মাত্র ৭.৫৯, সেখানে আব্বাস আফ্রিদির ইকোনমি ৯.৪৫।
টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করার সুবাদে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন এই পেসার। অথচ পিএসএলে এবারের আসরে মাঠে নামার আগে গোটা টি- টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মোতে ১৪১ বল করেছিলেন। শুধু তাই নয়, পিএসএলের ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরষ্কার জেতেন এই তারকা।
- মোহাম্মদ রিজওয়ান (মুলতান সুলতান্স)
টানা দুই আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হওয়ার পর এবারের পিএসএলে প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের খেতাব জিতেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে টানা দুই আসরে লাহোরের কাছে ফাইনালে হার নিশ্চিচভাবেই আক্ষেপে পুড়াবে মুলতান সুলতান্সের অধিনায়ককে।
গত তিন আসরের প্রতিটিতেই ৫০০ কিংবা তাঁর অধিক রান করেছেন রিজওয়ান। যদিও ফাইনালে রশিদ খানের বিপক্ষে ভুগতে হয়েছে তাঁকে। তবে টানা তিন আসরে মুলতানকে ফাইনালে তোলার জন্য রিজওয়ান নিশ্চিতভাবে প্রশংসা কুড়াবেন।
- বাবর আজম (পেশোয়ার জালমি)
পিএসএলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। ২৯৩৫ রান নিয়ে পিএসএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফখর জামানের চাইতে তাঁর রান সংখ্যা পাঁচশোর বেশি।
যদিও তাঁর সাবেক ফ্যাঞ্চাইজি করাচি কিংসের হয়ে তাঁর অধিনায়কত্ব এবং ব্যাটিংয়ের ধরণ বারবার সমালোচিত হয়েছে ক্রিকেটবোদ্ধাদের কাছে। এবারের আসরে অবশ্য ব্যাট হাতে সকল অবহেলার জবাব দিয়েছেন এই তারকা।
এবারের মৌসুমে পেশোয়ারের হয়ে ব্যাট হাতে ৫২২ রান করেছেন এই তারকা। অন্যদিকে, তাঁর বদলি হিসেবে করাচিতে আসা শোয়েব মালিক এবং হায়দার আলি করেছেন যথাক্রমে ২০০ এবং ১০৯ রান। এছাড়া কিংসের ব্যাটারদের চাইতে বাবরের স্ট্রাইকরেটও ছিল বেশি।
- আব্বাস আফ্রিদি
টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হিসেবে আব্বাস আফ্রিদির নাম নিশ্চিতভাবে কেউ কল্পনাতেও আনেননি। ইহসানউল্লাহ এবং উসামা মিরকে সাথে নিয়ে মুলতানের বোলিংকে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছেন আব্বাস। টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট শিকার করেছেন এই পেসার।
তাঁর ইকোনমি খানিকটা বাজে ৯.৪৫ হলেও তাঁর দরকারী মূহুর্তে উইকেট তুলে নেবার দক্ষতাকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউই। প্রতি ১০.২ বলেই একটি করে উইকেট শিকার করেছেন আব্বাস, যা কিনা ন্যূনতম চার ওভার বোলিং করাদের মাঝে সেরা স্ট্রাইক রেট।
এছাড়া ফাইনালে ব্যাট হাতেও চমক দেখিয়েছেন এই তারকা, তাঁর ছয় বলে ১৭ রানের সুবাদেই ম্যাচ গড়িয়েছে শেষ বল পর্যন্ত। কে জানে হয়তো শেষ বলে তিনি স্ট্রাইকে থাকলে মুলতানের গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো!