রাজাপাকশে, ফাইনালের রাজা

ইনিংসের শেষ বল। নাসিম শাহ চাইলেন একটা বিধ্বংসী ইয়োর্কারে পরাস্ত করবেন দারুণ ছন্দে থাকা ভানুকা রাজাপাকশেকে। তবে না পরাস্ত করতে পারলেন না তরুণ নাসিম। বরং দারুণ এক ছক্কা হাঁকান ভানুকা। আর তখন কমেন্ট্রি বক্স থেকে ভেসে আসলো ‘ওয়াট আ ওয়ে টু ফিনিশ!’

সেই বিস্ময় বড্ড বেশি যথাযথ, সেই বিস্ময় জাগাটাই যেন সবচেয়ে বেশি স্বাভাবিক। ভানুকা রাজাপাকশের হাত ধরেই তো শ্রীলঙ্কা পেল এক লড়াকু সংগ্রহ। এশিয়া কাপের ফাইনাল। স্বাভাবিকভাবেই চাপটা বেশি। আর পাকিস্তান টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে খানিকটা ব্যাকফুটে ফেলে দেয়। কারণ পরে ব্যাটিং করাদের পক্ষেই তো এবারের এশিয়া কাপের সব পরিসংখ্যান। বাবর আজম স্বাভাবিকতার বাইরে নিজেকে নিয়ে যাননি।

টস জিতেই বোলিং করবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। আর সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে দারুণভাবে নিজেদের মেলে ধরেন পাকিস্তানের পেসাররা। শুরুর ওভারেই আঘাত হানেন নাসিম শাহ। ফর্মে থাকা খেলোয়াড় কুশল মেন্ডিসের উইকেট উপড়ে ফেলেন নাসিম। সেই শুরু। ধারাবাহিকভাবে উইকেট পড়তে থাকে শ্রীলঙ্কার। একটা পর্যায় শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ১২০ এর কাছাকাছি থমকে যাওয়ার শঙ্কা।

তবে না, সে শঙ্কাকে সত্যি হতে দেননি ভানুকা রাজাপাকশে। তিনি একা হাতে ধরে রাখলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপ। ঠিক ধরে রাখলেন না। তিনি শ্রীলঙ্কার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন জয়ের আশাটাও খানিক বাঁচিয়ে রাখলেন। যখন প্রায় সব শেষ ধরেই নিয়েছে সবাই ঠিক তখনই গর্জে ওঠে ভানুকার ব্যাট। তিনি পাকিস্তানি বোলারদের গতিকে নিজের অস্ত্রে পরিণত করেন। একের পর এক বাউন্ডারি আছড়ে পড়তে থাকে সীমানার বাইরে।

ফাইনালের একটা চাপ, সেই সাথে দলের ব্যাটিং অর্ডার ধসে যাওয়ার একটা চাপ। সব চাপকেই তুচ্ছ করে দেন ভানুকা রাজাপাকশে। নিজের স্নায়ুচাপটাকে ঠিক কি করে নিয়ন্ত্রণে রাখার টোটকা কেবল তিনিই জানেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে উঠবেন বলেই হয়ত অপেক্ষায় ছিলেন রাজাপাকশে। অবশ্য হার্ডহিটার হিসেবে বেশ প্রশংসাই কুড়িয়েছেন রাজাপাকশে এর আগেও। সুতরাং তাঁর উপরে নিশ্চয়ই ভরসা ছিল লংকানদের।

সে ভরসার প্রতিদানই দিলেন তিনি। ব্যাট করলেন প্রায়  ১৫৭ স্ট্রাইকরেটে। একটা প্রান্ত আগলে রেখে শেষ অবধি খেলে গেছেন। রান করেছেন ৭১। শ্রীলঙ্কার লড়াই করবার পুঁজিটুকু এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। শুরুতে খানিকটা সময় নিয়ে খেলেছেন। এরপর বাইশ গজে থিতু হয়ে তিনি রান তুলেছেন টি-টোয়েন্টি মেজাজ বুঝে। ছয় খানা বাউন্ডারির পাশাপাশি তিনি তিন খানা বল করেছেন মাঠ ছাড়া।

নাসিম শাহের শেষ ওভারে শেষ দুই বলে তিনি নিয়েছেন দশ রান। উইকেট কিপারের মাথার উপর দিয়ে দারুণ ধূর্ততায় চার আদায় করেছেন। তাঁর পরের বলে কাভার অঞ্চল দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করে গেলেন শ্রীলঙ্কার এই দলটার ব্যাটিং অর্ডার ঠিক ততটাও ভঙ্গুর নয়। তাঁকে অবশ্য একটা লম্বা সময় সঙ্গ দিয়েছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। দুই জনে মিলে গড়েন ৫৮ রানের জুটি। সে জুটিতেই আসলে ঘুরে দাঁড়ায় লংকানরা।

রাজাপাকশে আর হাসারাঙ্গার সেই জুটির সুবাদেই শেষমেশ ১৭১ রানে টার্গেট দেয় শ্রীলঙ্কা। দুবাইয়ের এই উকেটে সে রান লড়াই করার জন্যে যথেষ্ট বলেই মনে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link