স্যুইং বৈচিত্রের ভূবন মাঝি

তাঁর বলে বিশেষ কোনো গতি নেই। যেটুকু আছে আছে তাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে ভড়কে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট না। কিন্তু যা আছে তা হলো, দুর্দান্ত সুইংয়ের সাথে ধারাবাহিক ভাবে একই লেন্থে বল করে যাওয়ার ক্ষমতা। ঐ এক রসদেই ব্যাটারদের জন্য এক ত্রাসের নাম ভূবনেশ্বর কুমার।

তাঁর বলে বিশেষ কোনো গতি নেই। যেটুকু আছে আছে তাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে ভড়কে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট না। কিন্তু যা আছে তা হলো, দুর্দান্ত সুইংয়ের সাথে ধারাবাহিক ভাবে একই লেন্থে বল করে যাওয়ার ক্ষমতা। ঐ এক রসদেই ব্যাটারদের জন্য এক ত্রাসের নাম ভূবনেশ্বর কুমার। 

বয়স ত্রিশ পেরিয়েছে বছর দুয়েক আগেই। কিন্তু এই দুই বছরেই যেন আরো পরিণত ভূবনেশ্বর কুমার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পুরো ক্যারিয়ারে নেওয়া ৮৪ উইকেটের মধ্যে ৪৩ টি উইকেট নিয়েছেন এই দুই বছরেই। ম্যাচে ৪ উইকেট শিকার করেছেন ৪ বার। যেখানে আগের ৮ বছরে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র ১ বার। 

তবে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষের শুরুটা ভেবে ফেলেছিল অনেকেই। ২০২০ আইপিএলে ১১ ম্যাচে নিয়েছিলেন মাত্র ৬ উইকেট। এরপরে ইনজুরিতে পড়েন তিনি। ঐ ইনজুরির পরে সবাই ধরেই নিয়েছিল, ভূবি আর টপ ফর্মে ফিরছেন না। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আবারো মাঠে ফিরেন তিনি। ইংল্যান্ডের ফ্লাট পিচে সব বোলার যখন খাবি খাচ্ছিল সে সময় ৪১২ রানের পুরো ম্যাচে দিলেন ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান। একই সাথে জেসন রয় আর জস বাটলারের উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন তিনি। অথচ ভারতের অন্য কোনো বোলারেরই ইকোনমি রেট সেদিন ৮.৫০ এর নিচে ছিল না। 

ভূবনেশ্বর কুমারের সবচয়ে লক্ষণীয় দিক হলো তাঁর বোলিং ভ্যারিয়েশন। এর আগে ভারনন ফিলান্ডার আর মোহাম্মদ আব্বাসের কাছ থেকে এমন বোলিং দেখা যেত। তবে ভুবির বল মুভমেন্ট খুব দ্রুত হয়। এজন্য ইন স্যুইং, আউট স্যুইংটা তিনি ভাল পান। বেশিরভাগ সময় তিনি অফ স্ট্যাম্প বরাবর বল করেন। তবে অফ স্ট্যাম্পের দুই ফুট পাশে আউট স্যুইং দিয়ে আবারো ইনসুইং করার দৃশ্য মাঝেমধ্যেই তাঁর ডেলিভারিতে দেখা যায়। এটা স্বাভাবিক কোনো ডেলিভারি না। যেকোনো পেসারের জন্য তা সহজও না। 

পেসাররা সাধারণত ইনস্যুইং অথবা আউটস্যুইং, যেকোনো একটিতে পারদর্শী হয়ে থাকেন। কিন্তু ভূবনেশ্বর কুমার এ দুটিই পারেন। শুধু পারেন বললে ভুল হবে, নতুন বলে তাঁর সুইংয়ের অ্যাকুরেসি বরং আরো ভাল।

পাওয়ার প্লে’র জন্য ভূবি আদর্শ এক বোলার। ভারতও তাকে সেভাবেই ব্যবহার করে। পাওয়ার প্লে’র পাশাপাশি ডেথ ওভারেও খারাপ বল করেন না তিনি। সুইং যেহেতু তাঁর সহজাত প্রতিভা। এর সাথে স্লোয়ার যোগ করে ডেথ ওভারেও তিনি বেশ ভাল বল করেন। 

আইপিএলের পরীক্ষিত বোলার ভুবি। তবে এই লীগেই যেন উইকেট প্রাপ্তিতে পিছিয়ে থাকেন তিনি। শেষ আইপিএলে তিনি নিয়েছেন মাত্র ৬ উইকেট। ২০০ বল ডেলিভারি করার মধ্যে সবচেয়ে কম উইকেট নিয়েছিলেন তিনিই। তাই গতবারের আইপিএল ছিল ভূবনেশ্বর কুমারের জন্য ছিল রীতিমত হতাশার এক আসর।

তবে ভারতের দলে যে অবস্থায় ভুবিকে দরকার ছিল সে অবস্থাতেই পেয়েছে তাঁরা। ২০২২ এ ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৩১ টি উইকেট নিয়েছেন ভুবনেশ্বর কুমার। এর মধ্যে তিনবার ৪ উইকেট আর একবার ৫ উইকেট নিয়েছেন। একই সাথে ইকোনমি রেটটাও তিনি ধরে রেখেছেন, ৬.৬৩। এমনকি এ বছরে ভুবনেশ্বর কুমার এতোই দুর্দান্ত ছিলেন যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৪ বার মেডেন ওভার করেছেন। 

এবারের বিশ্বকাপে পেসারদের মধ্যে ভারত স্কোয়াডের মেইনম্যান হিসেবেই বিবেচিত করা হচ্ছে ভুবনেশ্বর কুমারকে। জাতীয় দলে তাঁর বর্তমান ফর্ম সেই ভাবনাকে আরো দৃঢ় করেছে। অজিদের দুর্গ পেসারদের জন্য স্বর্গরাজ্য। সে হিসেবে এবারের বিশ্বকাপেও নিশ্চয় সবার চোখ থাকবে ভুবনেশ্বর কুমারের উপর। কিছু না হোক, অন্তত ভুবির ভুবন ভুলানো সুইংয়ে তো সবার নজর থাকবেই।  

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...