বিশ্বসেরা সব তারকারা নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন বিশ্বকাপে। এবারের বিশ্বকাপ সামনে রেখে দলগুলো ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে কারা কাতারে প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশকে। আশ্চর্যজনক হলেও বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলার বাদ পড়েছেন দল থেকে। অথচ তাঁদের নিয়েই সাজিয়ে ফেলা যায় শক্তিশালী এক একাদশ, যারা কিনা হারিয়ে দিতে পারে বিশ্বের যেকোনো দলকে। আসুন দেখে নেয়া যাক বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়াদের একাদশ।
- ডেভিড ডি গিয়া – গোলরক্ষক (স্পেন)
নিজেদের সেরা সময়টা পেছনে ফেলে এলেও ডেভিড ডে গিয়া এখনো বিশ্বের সেরা শট স্টপারদের একজন। স্পেনের কোচ লুইস এনরিকে অবশ্য জানিয়েছেন ডে গিয়া তাঁর পছন্দের গোলকিপারদের একজন নন।
অন্তত তিনি যেসব গুণাবলি চান সেগুলো ডি গিয়ার মাঝে বিদ্যমান নয়। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের অনবদ্য পারফরম্যান্সের সুবাদে দল জায়গা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন অভিজ্ঞ এই গোলরক্ষক।
- ম্যাটস হামেলস – সেন্টারব্যাক (জার্মানি)
ম্যাটস হামেলসের মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারের দল থেকে বাদ পড়া চমকে দিয়েছে খোদ জার্মান সমর্থকদের। বরুশিয়া ডর্টুমুন্ডের হয়ে এবারের মৌসুমে দারুণ ফর্মে ছিলেন এই সেন্টারব্যাক।
তবে, তাঁকে না নেয়ার পেছনে জার্মানি কোচ হ্যান্সি ফ্লিক বলেছিলেন বর্ষীয়ান নয়, বরং তরুণদের উপরেই বাজি ধরতে চান তিনি। কে জানে তাঁর এই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে কিনা জার্মানির জন্য।
- সার্জিও রামোস – সেন্টারব্যাক (স্পেন)
ইনজুরির কারণে সর্বশেষ ইউরোতে খেলতে না পারলেও এবারের বিশ্বকাপে তাঁর জায়গা পাওয়া নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন সবাই। কারণটাও অনুমেয়, বয়সটা ছত্রিশ পেরোলেও এবারের মৌসুমে পিএসজির হয়ে ছিলেন দারুণ ফর্মে। কাতারে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্ব নিশ্চিতভাবেই মিস করবেন এনরিকে।
- ফিকায়ো তোমোরি – সেন্টারব্যাক (ইংল্যান্ড)
এসি মিলানের হয়ে টানা কয়েক মৌসুম যাবত ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে গেলেও গ্যারেথ সাউথগেট দলে ডাকেননি ফিকায়ো তোমোরিকে। কিংবা কে জানে হয়তো পূর্বের চেলসির সেই তোমোরিকে স্মৃতি থেকে সরাতে পারেননি। তবে এবারের বিশ্বকাপে ফর্মহীন হ্যারি ম্যাগুয়ারের বদলে তোমোরিকে রাখতে পারতেন ইংল্যান্ড কোচ।
- জ্যাডন সাঞ্চো – রাইট মিডফিল্ডার (ইংল্যান্ড)
এক সময়ে ইংল্যান্ড ফুটবলের নেক্সট বিং থিং ভাবা হতো জ্যাডন সাঞ্চোকে। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের জার্সিতে নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন দারুণভাবেই। তবে বড় অংকের ট্রান্সফার ফি’তে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসার পর থেকেই ফর্মে ভাটা পড়ে এই তারকার।
তবে বিগত কয়েক ম্যাচে পুরনো ফর্মে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সাঞ্চো। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে বাদ দিয়েই দল ঘোষণা করেছেন ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট।
- থিয়াগো আলকান্তারা – মিডফিল্ডার (স্পেন)
সর্বশেষ ইউরোতে না খেললেও এবারের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল থিয়াগো আলকান্তারার। মৌসুমের শুরুতে ইনজুরিতে ভুগলেও থিয়াগো এখনও বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডারদের একজন।
লিভারপুলের হয়ে দারুণ ফর্মেও ছিলেন এই তারকা। তবুও তাঁর বদলে গত কয়েক বছরে ক্রমশ বাজে পারফর্ম করা সার্জিও বুসকেটসকে সাথে নিয়েই বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছেন লুই এনরিকে।
- রায়ান গ্রাভেনবার্গ – মিডফিল্ডার (নেদারল্যান্ডস)
এবারের মৌসুমের দলবদলে আয়াক্স থেকে বায়ার্ন মিউনিখে পাড়ি জমানোর থেকেই প্রতিভাবান ডাচ মিডফিল্ডার রায়ান গ্রাভেনবার্গের ক্যারিয়ারে পড়তির সুর। মৌসুমের কোনো ম্যাচেই শুরুর একাদশে জায়গা পাননি। ফলে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়াটা একপ্রকার অনুমিতই ছিল এই মিডফিল্ডারের জন্য।
- রেনাতো সানচেজ – মিডফিল্ডার (পর্তুগাল)
ক্লাবের ফর্ম যেমন তেমন, জাতীয় দলে দুর্দান্ত। এখনো পর্যন্ত পর্তুগিজ মিডফিল্ডার রেনাতো সানচেজের ক্যারিয়ারের গ্রাফ অনেকটা এমনই। জাতীয় দলকে ইউরো জেতাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই মিডফিল্ডার। কিন্তু এবারের মৌসুমে পিএসজিতে পাড়ি জমানোর পর থেকেই ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তেমনভাবে। ফলে তাঁকে ছাড়াই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছেন পর্তুগালের কোচ সান্তোস।
- রবিন গসেন্স – লেফট মিডফিল্ডার (জার্মানি)
সর্বশেষ ইউরোতে জার্মানির সেরা তারকা ছিলেন লেফট উইংব্যাক রবিন গসেন্স। বাঁ প্রান্তে রীতিমতো গতির ঝড় তুলে প্রতিপক্ষের রক্ষণে কাঁপুনি ধরিয়ে দিতেন। পাশাপাশি রক্ষণ সামলাতেও দারুণ পটু ইন্টার মিলানে খেলা এই ফুটবলার। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাঁকে ছাড়াই বিশ্বকাপের দল সাজিয়েছেন জার্মান কোচ হ্যান্সি ফ্লিক।
- রবার্তো ফিরমিনো – সেন্টার ফরোয়ার্ড (ব্রাজিল)
ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দল থেকে রবার্তো ফিরমিনোর বাদ পরা অবাক করেছে বিশ্ববাসীকে। অথচ কি দারুণ ফর্মেই না ছিলেন এই স্টাইকার, এই মৌসুমে ১২ ম্যাচ খেলে ইতোমধ্যেই করে ফেলেছেন আট গোল। অথচ তাঁর বদলে নেয়া হয়েছে এবারের মৌসুমে লিগে এখনো গোলের খাতা খুলতে না পারা রিচার্লিসনকে। আক্ষেপ লুকাতে না পারা ফিরমিনো তাই নিজের হতাশা ব্যক্ত করেছেন প্রকাশ্যেই।
- ট্যামি আব্রাহাম – সেন্টার ফরোয়ার্ড (ইংল্যান্ড)
চেলসি থেকে রোমাতে পাড়ি জমানোর পর থেকেই হোসে মরিনহোর অধীনে উন্নতির গ্রাফটা ক্রমশই ঊর্ধবগামী ট্যামি আব্রাহামের। যদিও শেষ কয়েকম্যাচে আশানুরূপ খেলতে পারেননি, তবুও হ্যারি কেইনের বদলি হিসেবে দলে জায়গা পেতে পারতেন তিনি। কিন্তু ইংল্যান্ড কোচ বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছেন দ্বিতীয় কোনো ফরোয়ার্ড ছাড়াই। ফলে আব্রাহামকে এবারের বিশ্বকাপ দেখতে হবে দর্শক হয়েই।