ইনজুরি বা টিম কম্বিনেশন – স্কোয়াডে থেকেও এমন অনেক কারণে কোনো ক্রিকেটার থাকতে পারেন দলের বাইরে। সেটা তিনি দলের অন্যতম সেরা পারফরমার হওয়ার পরও হতে পারে। তবে, ব্যক্তিগত কারণে সাধারণত কোনো ক্রিকেটারদের একাদশের বাইরে রাখার ঘটনা আগে প্রায় কখনোই শোনা যায়নি। আর দলের অন্যতম সেরা ব্যাটারের এভাবে দলের বাইরে থাকাটা রীতিমত অভাবনীয় একটা ব্যাপার।
আর এমন অভাবনীয় ঘটনাই যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মত বড় কোনো আইসিসি ইভেন্টে ঘটে – তখন আসলে নড়েচড়ে বসতেই হয়। দলের নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ব্যক্তির নাম কুইন্টন ডি কক – দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য যার গুরুত্ব আসলে বলেও বোঝানো যাবে না।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরেন পোলার্ডের সাথে টস করতে নেমে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা প্রথম বোমাটা ফাঁটালেন। তিনি জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে কক নিজেই ম্যাচটি না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর জায়গায় একাদশে এসেছেন রিজা হেনড্রিক্স। স্টার স্পোর্টসে বসে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট শেন ওয়াটসন সাফ বলে দিলেন, ‘হিউজ শক! নিশ্চয়ই দলের ভিতরে বড় কিছু ঘটেছে।’
তবে, ঘটনা এখানেই শেষ নয়। টসের খানিক্ষণ বাদেই একটা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে দেশটির ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ)। সেখানে বলা হয় যে, দলের সবাইকে ম্যাচের আগে হাঁটু গেড়ে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে বাধ্যতামূলকভাবে সংহতি জানাতে হবে।
গত বছর থেকে শুরু হওয়া ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার’ প্রচারণায় অনেক দল হাঁটু গেড়ে সংহতি জানালেও দক্ষিণ আফ্রিকা জানায়নি। কারণ, তাঁদের দলের সবাই এর পক্ষে কখনোই মত দেয়নি। তবে, এবার বোর্ড সাফ জানিয়ে দিয়েছে, দলের সবাইকেই হাঁটু গেড়ে বসে সংহতি প্রকাশ করতে হবে।
তখনই গুঞ্জন ছিল, বোর্ডের এই বাধ্যবাধকতার পরই ডি কক না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিএসএও এক বিবৃতিতে এই গুঞ্জনকে সত্যি বলে প্রমাণ করেছে। তাঁরা বলেছে, ‘ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে কুইন্টন ডি কক হাঁটু গেড়ে সংহতি জানাতে অস্বীকৃতি জানান, সেজন্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁকে খেলতে দেখা যায়নি।’ এখন প্রশ্ন উঠছেই – আবারও কি বর্ণবাদ দানা বেঁধে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে?
বিশ্বকাপে এবার ঠিক ফেবারিটদের তালিকাতে নেই দক্ষিণ আফ্রিকাতে। তার ওপর টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে পিছিয়ে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা দল। তবে, প্রোটিয়াদের স্পিন আক্রমণ দুর্দান্ত। তবে, তাঁদের ভবিষ্যত অনেকটাই নির্ভর করছে ব্যাটারদের ওপর। আর ডি কক যে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান – সেটা ভেঙে বলে না দিলেও চলে।
তাই, ডি কককে হারানো তাঁদেরকে নিশ্চিত ভাবে ঠেলে দিল ব্যাকফুটে। তবে, ডি ককের বিশ্বকাপ এখানেই শেষ কি না – সেটা এখানেই বলা যাচ্ছে না। কারণ, কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে, যদি ডি কক আর না খেলেন তাহলে বিশ্বকাপের ইতিহাসেই এটা অন্যতম বিতর্কিত ঘটনা হয়ে থাকবে।
বর্ণবাদ নতুন করে দানা বেঁধেই উঠলে তাঁহলে। ধারাভাষ্যে বসে সবচেয়ে বড় বার্তাটাই দিলেন জিম্বাবুয়ের পমি মাঙওয়া। বললেন, ‘এরকম একটা উদ্যোগে সমর্থন না জানানোর অর্থ হল দলের ভেতরেও ভিন্ন বর্ণের মানুষের প্রতি তাঁর কোনো সমর্থন নেই। বিষয়টা দক্ষিণ আফ্রিকায় এমন, বাইরের বিশ্বের জন্যও নিশ্চয়ই তাঁর ভাবনাটা এমন। আমার কথাগুলো রাজনেতিক শোনাতে পারে, সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। তাই বলে আমি তো আর চামড়া পাল্টে ফেলতে পারি না।’