নতুন বল হাতে বোলার, প্রথম বলেই বিশাল সুইং; ব্যাটার দেখে শুনে ছেড়ে দিবেন। এভাবেই কাটবে শুরুর দশ পনের ওভার; এরপর খোলস ছেড়ে বের হয়ে রান করায় মনোযোগ দিবেন ব্যাটসম্যান। আমার, আপনার কিংবা লম্বা সময় ধরে লাল বলের খেলা অনুসরণ করা যে কারো মনে টেস্ট ম্যাচের শুরুরটা দৃশ্যটা এমনই হবে।
বাজবল ঠিক এখনটায় আঘাত করেছে, রীতিমতো হেসেখেলে উড়িয়ে দিয়েছে মান্ধাতার আমলের এই ভাবনা; প্রথম বল থেকেই বোলারকে চাপে ফেলে দেয়াই লক্ষ্য এখন।
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, এইতো দুই বছর আগেও সাদা পোশাকে জিততেই ভুলে গিয়েছিল ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড। এরপরই আগমন ঘটে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম নামক এক পরশ পাথরের, আর তাঁর ছোঁয়াতেই বদলে গিয়েছিল ইংলিশরা। জো রুট, বেন ডাকেটরাও মানিয়ে নিয়েছিলেন দ্রুতই। সেই সাথে বেন স্টোকসের আগ্রাসী নেতৃত্ব যেন নবজন্ম দিয়েছে ব্রিটিশ টেস্ট দলকে।
স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেট বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছে এই বাজবল এপ্রোচ। নজর এড়ায়নি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদেরও, স্বয়ং স্টিভেন স্মিথ দেখতে চেয়েছিলেন তাঁদের বোলারদের বিপক্ষেও বাজবল দেখা যায় কি না। তাই তো অ্যাশেজ শুরুর আগেই ‘বাজবল বনাম প্রথাগত ক্রিকেট’ এমন এক অঘোষিত দ্বৈরথের জন্ম হয়েছিল।
একদিকে ইংলিশরা নতুন ব্র্যান্ডের বাজবল কৌশল চর্চা করছে অন্যদিকে, অজিরা মাঠে নেমেছিল পুরনো আমলের টেস্ট ক্রিকেট খেলার মনোভাব নিয়ে। এখন পর্যন্ত অবশ্য মূলধারার টেস্ট ক্রিকেটই প্রভাব বিস্তার করেছে নতুনত্বের মোড়কে আসা আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের উপর। এক্ষেত্রে বাজবলের অবদানও কম নয়।
সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম দিনে ফিরে যাওয়া যাক। ইংল্যান্ডের সংগ্রহ তখন আট উইকেটে ৩৯৩ রান; ক্রিজে তখন সেঞ্চুরিয়ান জো রুট, অথচ হুট করেই তখন ইনিংস ঘোষণা করে বসেন বেন স্টোকস। হয়তো দিনের শেষের ভাগে নতুন বলের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অজি টপ অর্ডারে আঘাত হানার উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের কিন্তু পরে সেই পরিকল্পনাই হিতে বিপরীত হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত দুই উইকেটে ম্যাচ হারতে হয়েছে জিমি-ব্রডদের। প্রথম দিনের সেই অপ্রত্যাশিত ডিক্লেয়ারকেই কাঠ গড়ায় তুলেছিল ক্রিকেটবোদ্ধারা; সেই ইনিংসে আরো ত্রিশ বা পঞ্চাশ রান করতে পারলে হয়তো ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো।
শুধু তাই নয়, প্রশ্ন উঠেছে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানের গেম রিডিং সেন্স নিয়েও। ঘুরে দাঁড়ানোর দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ শুরু করেছিল দলটির ব্যাটাররা। অথচ অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে হঠাৎই ভেঙে পড়েছে দলটির ব্যাটিং লাইনআপ। ১৮৮ রানে এক উইকেট থেকে হুট করেই ৩২৫ রানে অলআউট হয়েছে তাঁরা আর অজিরা পেয়ে যায় বিশাল লিড। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও ইতোমধ্যে নিয়ে নিয়েছে প্যাট কামিন্সের দল।
অবশ্য জয়-পরাজয় নিয়ে কখনইবা ভেবেছে বাজবলের কান্ডারিরা; ম্যাচের ফলাফল চাপিয়ে এমন ক্রিকেটের কারণ তো স্রেফ এন্টারটেইনমেন্ট। টেস্ট ক্রিকেট বিরক্তিকর এই ধারণাকে স্রেফ মাটিচাপা দিয়ে দেয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে বাজবলের। দর্শককে শুধু শেষদিনের নয়, বরং পুরো পাঁচ দিনের জমজমাট খেলা গিলতে বাধ্য করেছে ম্যাককালামের বাজবল।
তাই ফলাফল দিয়ে আসলে বাজবলের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা মাপতে গেলে ভুল-ই করবেন। এই যে গত কয়েক বছরের চেয়ে অ্যাশেজ নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে; দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে রোমাঞ্চের মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ এও কি বাজবলের সফলতা নয়!