ইউরোপের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাবে লাতিনরা?

সর্বশেষ ২০০২ বিশ্বকাপে লাতিন আমেরিকার দল হিসেবে নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। এরপর থেকেই বিশ্বকাপ মানেই ইউরোপিয়ান দেশগুলোর জয়জয়কার। এমনকি ব্রাজিল থেকেও শিরোপা নিয়ে ফিরেছে জার্মানি। কাতারে লাতিন আমেরিকার দলগুলো কি ভাঙতে পারবে ইউরোপিয়ান দলগুলোর জয়ের ধারা? 

সর্বশেষ ২০০২ বিশ্বকাপে লাতিন আমেরিকার দল হিসেবে নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। এরপর থেকেই বিশ্বকাপ মানেই ইউরোপিয়ান দেশগুলোর জয়জয়কার। এমনকি ব্রাজিল থেকেও শিরোপা নিয়ে ফিরেছে জার্মানি। কাতারে লাতিন আমেরিকার দলগুলো কি ভাঙতে পারবে ইউরোপিয়ান দলগুলোর জয়ের ধারা? 

আল জাজিরার ফুটবল পন্ডিত জুয়ান আরাঙ্গো টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাথে কথা বলেছেন লাতিন আমেরিকার দলগুলোর বিশ্বকাপ সম্ভাবনা নিয়ে। কথা বলেছেন স্বাগতিক কাতার, ফেবারিট এবং ডার্ক হর্স দলগুলো নিয়ে এবং অবশ্যই ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা নিয়ে। 

  • বিশ্বকাপে লাতিন আমেরিকার দলগুলোর কেমন সম্ভাবনা দেখেন?

– আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল অবশ্যই ফেবারিট। বিশ্বকাপ জেতার কথা উঠলেই এই দুল দল অবশ্যই আলোচনায় থাকবে। 

তাঁরাই জিততে যাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ? এর উত্তর আমার জানা নেই। ব্রাজিল ২০ বছর এবং আর্জেন্টিনা ৩৬ বছর ধরে বিশ্বকাপ জিততে পারছে না। তবুও বিশ্বকাপের ফেবারিটের কথা উঠলে এই দুই দলের নাম সবার আগে আসবে। লাতিন আমেরিকার আরেক দল উরুগুয়েরও ভাল করার প্রবল সম্ভাবনা আছে। সর্বশেষ বিশ্বকাপগুলোতে তাঁরা টানা ভাল খেলেছে এবং ২০১৮ বিশ্বকাপে তো পঞ্চম হয়েছিল। 

তবে এবারের বিশ্বকাপ তাঁদের জন্য বেশ আবেগের। ২০১০ বিশ্বকাপের প্রজন্মটা ইতি টানছে এবারের বিশ্বকাপ দিয়ে। লুইস সুয়ারেজ, এডিনসন কাভানি, ফার্নান্দো মুসলেরা, ডিয়েগো গডিনরা চাইবেন নিজেদের শেষ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলতে। স্বপ্নের ঈষাণকোণে নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপ জয়ের কথাই ভাবছেন তাঁরা। 

ইকুয়েডরের গল্পটা অবশ্য আলাদা, বিশ্বকাপের সবচেয়ে তরুণগুলোর একটি তাঁরা। সম্ভবত তাঁদের দলের ফুটবলারদের গড় বয়স ২৫.৪ বছর। তাঁদের নিয়ে অনুমান করাটা কঠিন। তাঁরা গ্রুপপর্ব থেকেও বিদায় নিতে পারে, আবার শেষ আটে পৌঁছে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

  • ইকুয়েডর দলটা কতটা শক্তিশালী?

– সামগ্রিকভাবে ইকুয়েডর দলটা বেশ শক্তিশালী। অভিজ্ঞতার ভান্ডারও একেবারে কম নয়, বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে একসাথে খেলে নিশ্চিতভাবেই আরও অভিজ্ঞ হয়েছে তরুণ ফুটবলাররা। আপনাকে মনে রাখতে হবে, মাত্র দুই বছর আগেও এই ইকুয়েডর দলটাকে কেউ গোণায় ধরেনি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। 

জর্দি ক্রুইফ দায়িত্ব পাবার মাত্র ছয় মাসের মাথায় পদত্যাগ করেন। এরপর করোনা মহামারি সবকিছু বদলে দিয়েছে। ইকুয়েডরের ফুটবল ফেডারেশন গুস্তাভো আলফারোকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। সে এসেই দলে তরুণদের প্রাধান্য দিয়েছে এবং তাঁদের উপর ভরসা রেখেছে। 

তরুণদের মাঝে বেশিরভাগ ফুটবলারই উঠে এসেছে ঘরোয়া বয়সভিত্তিক দল থেকে। যেমন বর্তমানে ইপিএলে খেলা  মইসেস কাইসেদো উঠে এসেছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট দি ভ্যালে থেকে। লাতিনের বাকি দেশগুলোর মত আর্থিক সংগতি না থাকলেও ইকুয়েডরের ফুটবল ফেডারেশন বেশ নিবেদিতপ্রাণ। অনূর্ধ্ব-২০ কোপা লিবার্তেরোস জিতেছে তাঁরা। 

  • আলফারো দলে আর কি কি পরিবর্তন এনেছেন?

– সে পুরো দলটার মানসিকতা বদলে দিয়েছে। দলটার মাঝে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। সে তরুণদের সুযোগ করে দিয়েছে। ম্যাচ খেলার মাধ্যমে তাঁরা ধীরে ধীরে অভিজ্ঞ হচ্ছে। 

দারুণ প্রতিভাবান এক দল গঠন করেছে। যেমন পিয়েরে হিনকাপি বায়ার লেভারকুসেনে দারুণ খেলছে। ডিফেন্ডার জাভিয়ের আরাগা সিয়াটলে খেলছে, তাঁর দারুণ সম্ভাবনা আছে ইউরোপে ভাল করার। আক্রমণাত্নক ফুটবল খেলাচ্ছেন আলফারো। মাঝখান দিয়ে পাসিং ফুটবল খেলার চাইতে বরং উইংয়ে গতির ঝড় তুলতেই বেশি পছন্দ করে তাঁর দল।

  • আর্জেন্টিনার কেমন সম্ভাবনা দেখেন?

– তাঁরা কি ফেবারিট? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না। আপনি হয়তো বলতে পারেন তাঁরা শেষ ৩৫ ম্যাচ ধরে অপরাজিত। গত সাড়ে তিন বছরে তাঁরা ম্যাচ হারেনি। তাঁদের দলগত বোঝাপড়া বেশ ভাল। তাঁদের আলাদা ফিলোসফি আছে, জানে কে কোথায় আছে, কোথায় পাস দিতে হবে। তবে আমি মনে করি তাঁদের হারানোর কিছু নেই। 

চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তায় ছিল। মেসি ধীরে ধীরে বুড়িয়ে যাচ্ছিলেন, স্কালোনি সবেমাত্র অনূর্ধ্ব-২০ দল সামলাচ্ছেন। সুতরাং তাঁকে জাতীয় দলের কোচ কেন বানানো হলো এ নিয়ে প্রশ্নের অন্ত ছিল না।

তবে তারকাদের সামলানো, নিজস্ব দর্শন ছড়িয়ে দেয়া, কাজের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য স্কালোনি বাহবা পাবেন। কেবল জাতীয় দল নয়, বয়সভিত্তিক দলেও তিনি যোগ করেছেন সাবেক ফুটবলারদের। ডিয়েগো প্লাসেন্তা অনূর্ধ্ব-১৫, পাবলো আইমার অনূর্ধ্ব-১৭, জাভিয়ের মাসচেরানো অনূর্ধ্ব-২০ এবং ওয়াল্টার স্যামুয়েল জাতীয় দলের সাথে যুক্ত আছেন।

  • মেসির শেষ বিশ্বকাপ সম্পর্কে?

– বিশ্বকাপে আরও ফুটবলার আছে যাদের এটাই শেষ বিশ্বকাপ। ব্রাজিল এবং ফ্রান্সের মতো দলগুলো আছে, যারা ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি শক্তিশালী। 

আর্জেন্টাইনরা চায় তাঁদের দল বিশ্বকাপ জিতুক? অবশ্যই। তবে তাঁদের মনে রাখতে হবে ব্রাজিল কোনো হেলাফেলার দল না। তাঁদের পুরো দলটাকে দেখুন। দারুণ শক্তিশালী এক দল এবং অসাধারণ সব ফুটবলারে পরিপূর্ণ। একই কথা প্রযোজ্য ফ্রান্সের ক্ষেত্রেও।

ক্রিস্টোফার এনকুকু ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল এবং তাঁরা অন্য একজনকে নিয়ে নিল। ব্যাপারটা এতোটাই সাধারণ, তাঁদের পাইপলাইন এতোটাই শক্তিশালী। 

  • ফ্রান্স বিশ্বকাপের জন্য তিনটি দল গঠন করতে পারবে…

– হ্যাঁ, হতেই পারে তাঁরা এবার শিরোপা জিতবে না। মেসি আগের চাইতে অনেক বেশি মোটিভেটেড। আর্জেন্টিনার বাকি ফুটবলাররাও অনেক বেশি সাফল্যের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। 

চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তায় ছিল। মেসি ধীরে ধীরে বুড়িয়ে যাচ্ছিলেন, স্কালোনি সবেমাত্র অনূর্ধ্ব-২০ দল সামলাচ্ছেন। সুতরাং তাঁকে জাতীয় দলের কোচ কেন বানানো হলো এ নিয়ে প্রশ্নের অন্ত ছিল না।

তবে তারকাদের সামলানো, নিজস্ব দর্শন ছড়িয়ে দেয়া, কাজের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য স্কালোনি বাহবা পাবেন। কেবল জাতীয় দল নয়, বয়সভিত্তিক দলেও তিনি যোগ করেছেন সাবেক ফুটবলারদের। ডিয়েগো প্লাসেন্তা অনূর্ধ্ব-১৫, পাবলো আইমার অনূর্ধ্ব-১৭, জাভিয়ের মাসচেরানো অনূর্ধ্ব-২০ এবং ওয়াল্টার স্যামুয়েল জাতীয় দলের সাথে যুক্ত আছেন।

  • ব্রাজিলের সম্পর্কে কি বলবেন? তাঁরা কি দল নির্বাচনে খানিকটা চমকে দিয়েছে?

ব্রাজিল অনেকদিন ধরেই নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে। সেই ১৯৯০ সালের পর আর জোগো বোনিতোর সৌন্দর্য ব্রাজিলের খেলায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। যখন কেউ ব্রাজিলের স্কোয়াড দেখবে তখন অনেকেই ফ্ল্যামেঙ্গোর পেদ্রোর দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

ফ্লোরেন্টিনাতে অনেকদিন কাটানোর পর সে ফ্ল্যামেঙ্গোতে ফিরে আসে। বেশিরভাগ ম্যাচেই তাঁকে হয়তো সুপার সাব হিসেবে ব্যবহার করা হবে এবং আমার ধারণা সে নিয়মিতই গোল করবে। সে দুর্দান্ত এক গোল স্কোরার।

বিশ্বকাপে আর কোন দলকে নজরে রাখা যেতে পারে?

আমি সেনেগালকে পছন্দ করি। 

  • সাদিও মানেকে ছাড়াও?

সেনেগালের বর্তমান দলের দিকে তাকান এবং বলুন কোথায় দুর্বলতা তাঁদের। হ্যাঁ, মানেকে হারানো অবশ্যই দলের জন্য বড় ক্ষতি। তবে তাঁকে ছাড়া সেনেগাল দুর্বল দল হয়ে যায়নি। 

নেশন্স কাপের ফাইনাল এবং বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্লে অফে মিশরের বিপক্ষে তাঁদের একাদশের দিকে তাকান। বিশ্বকাপের বাকি দলগুলোর চাইতে এই দলটার কমতি কোথায়?

  • বিশ্বকাপের বাকি ফেবারিট দল?

– আমার ধারণা স্পেন এবং জার্মানি। এক দল বিশ্বকাপ এলেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করে, অন্যদল বেশ কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিক ফুটবল খেলছে।

  • এবারের বিশ্বকাপে কি সব দলেরই সুযোগ আছে?

– হ্যাঁ, অবশ্যই। যেকোনো দল যেকোনো কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তবে দিন শেষে আপনি দেখবেন শেষ আটে প্রত্যাশিত দলগুলোই খেলছে। হয়তো এক কিংবা দুইটি দল সবাইকে অবাক করে কোয়ার্টারে খেলতে পারে।     

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...