২০১২ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় শীতের এক বিকেলে, নেটে ঘাম ঝাড়াচ্ছে ২৪ বছরের তরুন বিরাট কোহলি। প্রথম দুই টেস্টে ব্যর্থ কোহলির জন্য সেবারের পার্থ টেস্টটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পা ফসকে গেলেই চলে যাবেন দলের বাইরে।
কেননা টিম ম্যানেজমেন্ট তার পরিবর্তে রোহিত শর্মাকে সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে। তবে, ভাগ্য সঙ্গ দেয় কোহলির। রোহিতের উদাসীন ভাবে মাঠ ঘুরে দেখা আর নিজেকে নিয়ে বিরক্তিই যেন বলে দিচ্ছিলো পার্থ টেস্ট অবধি অন্তত রোহিতের দরজা বন্ধ, কোহলি পাচ্ছে আরেকটি ‘শেষ সুযোগ’।
কি দারুন ভাবেই না তা লুফে নিয়েছিলেন কোহলি। ক্রিজে যখন আসেন তখন দলের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৬৩ রান। ইনিংস সেরা ৪৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটে ভারতের। মাত্র ১৭১ রানে গুটিয়ে যাওয়া ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৫ রান আসে কোহলির ব্যাট থেকে।
সেই থেকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই টেস্টে ৪২ ইনিংসে ৪৮.২৬ গড়ে ১৯৭৯ রান করেছেন কোহলি। সেঞ্চুরি আটটা, অর্ধশতক পাঁচটা। ২০১২ থেকে ২০২৪, মাঝে কেটে গেছে একটি যুগ। আবারও যেন একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।
যদিও তরুন সেই টগবগে আগ্রাসী বিরাট এখন আর নেই। তবে ৩৬ বছর বয়সেও তার ফিটনেসটা চোখ কপালে তোলার মতই। ভারতের সাবেক চার স্তম্ভ বীরেন্দ্র শেবাগ, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, শচীন টেন্ডুলকাররাও যখন অবসরে যান তাদের মধ্যেও এমন ফিটনেস এই বয়সে এসে কমই দেখা গেছে।
তাহলে কোহলির সমস্যা হচ্ছে কোথায়? কেন তিনি সর্বশেষ বেশ কয়েকটি ইনিংসে রান খরায়? কোহলি এক পডকাস্টে বলেছিলেন- ‘রান করতে পারছি না, এমনটা শুনে ঘুমতে উঠতে বেশ বিরক্তি লাগে আমার। নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে একাকী লাগে তখন।’
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেটটা শতকরা ৭০ ভাগই টেকনিক্যাল। জানি অনেকে হয়ত বলবে যে, না মেন্টালিটি বেশি দরকার। হ্যা প্রস্তুতির জন্য তা ঠিক বটে। তবে আমি বিশ্বাস করি আপনার টেকনিক যদি পোক্ত না হয় আপনি মেন্টালি শক্ত হতে পারবেন না, কারণ আপনার মধ্যে নিজেকে নিয়েই সন্দেহ তৈরি হবে। আর আপনি নিজে কি পারেন তা নিয়ে নিজেই নিজের সাথে লড়তে হয় তখন।’
তবে সম্প্রতি নিজেই টেকনিক্যাল ইস্যুতে ভুগছেন তিনি। স্পিনটা যেন খেলতেই পারছেন না। বলের গতিবিধিও আগের মত দ্রুত আন্দাজ করতে পারছেন না। লেগ বিফোর উইকেট (এলবিডব্লু) এর ফাঁদেও বেশ পরছেন তিনি ইদানীং।
লেগ স্টাম্পের লাইনের দিকে দাঁড়িয়ে ফ্রন্ট ফুটটা একদম স্ট্রেইট ডাউনে রাখতে দেখা যাচ্ছে তাকে। যার ফলে, টার্ন নেওয়া বলগুলোতে বোকা বনে যাচ্ছেন বারবার। বয়সটা একটু হলেও ইস্যু। আগুনে পেসের সামনে পা আর কোমড়টা আগের মত নাড়াতে পারেন না। যার ফলে সামান্য ভুলের খেসারতও দিতে হয় উইকেটটা হারিয়েই।
এমন না যে কোহলি এসব বোঝেন না। তিনি বরাবরই এসব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। নেটে চেষ্টা করেই যাচ্ছেন পরিবর্তনের জন্য। ২০১২ সালের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি তাকে ভরসা জুগিয়েছিলেন। এখন দেখা যাক পুরানো সেই উদ্যম নিয়ে আবারও ফিরতে পারেন কিনা ‘কামব্যাক কিং’ খ্যাত বিরাট কোহলি।