গিলক্রিস্ট হতে পারবেন পান্ত!

লাল বলের ক্রিকেটে ঋষাভ পান্ত ছয় কিংবা সাতে ব্যাটিং করেন। সেটি কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক অ্যাডাম গিলক্রিস্টও করতেন। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে তিনি আবার ব্যাটিংয়ে নামতেন ওপেনিংয়ে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে করা ৯৬১৯ রানের মধ্যে ৯২০০ রানই করেছিলেন ওপেনিংয়ে নেমে। গিলক্রিস্টকে দিয়ে ইনিংস শুরুর সুফল অস্ট্রেলিয়াও দল হিসেবে পেয়েছে। দারুণ সব স্ট্রোকে বাউন্ডারি মেরে অস্ট্রেলিয়াকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিতেন প্রায় নিয়মিতই। ঋষাভ পান্তের যেমন সহজাত ব্যাটিং স্টাইল, স্ট্রোক মেকিং সক্ষমতা তাতে অনেকটাই মিলে যায় অ্যাডাম গিলক্রিস্টের সাথে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, পান্ত কি একজন গিলক্রিস্টের মতো হতে পারবেন?

প্রশ্নটা হঠাৎ করেই উঠে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পর। কে এল রাহুলের অনুপস্থিতিতে এ দিন ওপেনিংয়ে ব্যাট করেছিলেন পান্ত। ২ চার আর ৩ ছক্কায় ২৭ রানের ছোট একটি ইনিংস খেলেছেন।

তবে ঐ ছোট ইনিংসেই তাঁর শট এক্যুরেসি, ক্লিন হিট বেশ নজরে পড়েছেন অনেকের। অনেকের ভাবনায় এমনও এসেছে যে, পান্তের মতো ব্যাটারকে দিয়ে পাঁচ সাতে ব্যাটিং করিয়ে কি ভারত তাঁর সামর্থ্যের পুরোটা আদায় করতে পারছে?

যদিও এর আগে আরো দুই ম্যাচে ওপেনিংয়ে ব্যাট করেছিলেন পান্ট। সে দুই ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে রান এসেছিল মোটে ২৭। তবে মাত্র ৩ ম্যাচেই তো সফলতা, ব্যর্থতা রায় দিয়ে ফেলা যায় না। তাই অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই ঋষভ পান্তকে দিয়ে ইনিংস শুরুর বিষয়ে বেশ শক্ত যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। 

ভারতের সাবেক ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় ব্যাঙ্গারও মনে করেন ভারতের অ্যাডাম গিলক্রিস্ট হতে পারেন ঋষাভ পান্ত। এখানে তিনি শচীন টেন্ডুলকারকেও টেনে আনেন। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমি এই ব্যাপারে গত ৩ বছর ধরে ভাবছি।  যদি আপনি শচীন টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন তিনি বেশি ছন্দ খুঁজে পেয়েছিল ওপেনিংয়ে। অথচ, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তিনি কিন্তু পুরোদস্তুর মিডল অর্ডার ব্যাটার ছিলেন।’

ব্যাঙ্গার আরও বলেন, ‘এখন টিম ইন্ডিয়া ডানহাতি-বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের কম্বিনেশন খুঁজছে। যেখানে পান্ত টিম ইন্ডিয়ার হয়ে তাই করতে পারে, যা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট করতেন।’ 

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি ভাল সময় কাটিয়েছিলেন কোচ জন বুকাননের অধীনে। সেই জন বুকাননকেও জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পান্তকে দিয়ে ওপেনিং করানো সম্ভব কিনা? 

জন বুকানন বলেন, ‘অবশ্যই সম্ভব। তবে অবশ্যই তাঁকে নিজে বুঝতে হবে যে সে আসলেই ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে প্রস্তুত কিনা। এখানেই ক্রিকেটার, ম্যানেজমেন্টের মধ্যে সমন্বয়তা খুবই জরুরি। তাছাড়া পান্টের ব্যাটিং স্ট্রোক বেশ ভাল। ও ওপেনিংয়ে ভাল করতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস।’ 

তবে জন বুকানন আরো যোগ করে বলেন, ‘কিন্তু এই মুহূর্তে রোহিত শর্মা-কে এল রাহুল জুটিটা প্রায় প্রতিষ্ঠিত। এজন্য হঠাত করেই রদবদল করলে অনেক ক্ষেত্রেই কম্বিনেশনের সমস্যা হতে পারে।’

উইকেটরক্ষক–ব্যাটারের সংজ্ঞাটাই বদলে দিয়েছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। একজন উইকেটকিপার যে ব্যাটার হিসেবেও দলের অন্যতম ভরসা হতে পারেন, অস্ট্রেলীয় তারকা সেটিই করে দেখিয়ে ছিলেন। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁর বিস্ফোরক ব্যাটিং ছিল দর্শকের জন্য উপভোগ্য।  গিলক্রিস্টের পথ অনুসরণ করেই ক্রিকেট পেয়েছে কুমার সাঙ্গাকারা ও মহেন্দ্র সিং ধোনিদের। এরপর এই রথীদের পথেই হাটছেন পান্ত। 

মহেন্দ্র সিং ধোনির অবসরের পর তাঁর শূণ্যতা ভালোভাবেই পূরণ করেছেন ঋষাভ পান্ত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তো ছাড়িয়ে গেছেন ধোনিকেও। পান্তই ভারতের একমাত্র উইকেটরক্ষক–ব্যাটার, যার ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ব্রিসবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের ঐতিহাসিক জয়ে তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংই বড় ভূমিকা রেখেছিল।

যে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের রোলে পান্ত কে ভাবা হচ্ছে সেই গিলির মতেও, পান্ত এই মুহূর্তে ক্রিকেটের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর তারকা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সে যখন মাঠে নামে, মঞ্চটাকে আলোকিত করে ফেলে। সে দুর্দান্ত একটা পরিবেশ তৈরি করে। তার খেলা দেখাটা চোখের জন্য প্রশান্তির।’

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ঋষাভ পান্ত কে নিয়ে ভবিষ্যতে ভারতীয় ম্যানেজমেন্টের কি ভাবনা সেটি আগে ভাগেই বলা কঠিন। তবে তাঁর সেরাটা কোন পজিশন থেকে আসতে পারে সেটি নিয়েও ভাবনার বেড়াজাল রয়েছে। টিম ইন্ডিয়াকে সেই বেড়াজাল থেকে দ্রুতই বের হতে হবে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link