‘কখনো বিষ্ণু দে কখনো যামিনী রায় এই নিয়ে তর্কটা চলতো…’
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ – কিন্তু তর্কপ্রিয় বাঙালিদের তর্ক থেমে থাকার নয়। রাজনীতি,অর্থনীতি,বিদেশনীতি, সিনেমা থেকে ক্রীড়া সবগুলোকে সেই তর্কের গনগনে আঁচে সেঁকতেই হবে। আর সেটা যদি ‘কে বড়ো আর কে ছোট’ এই বিষয়ে হয় তাহলে তো কথাই নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তে সেই আড্ডা এবং বিতর্কগুলো আরও জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
আমরা এখন আর নিছকই ক্রীড়াপ্রেমী নই আমরা এখন ব্যক্তিপূজায় বেশি বিশ্বাসী হয়ে উঠেছি অর্থাৎ এক এক খেলোয়াড়ের এক এক ফ্যানবেস। ফলে যুক্তি,পাল্টা যুক্তিতে নিজেদের আইডলকে যে কোন ফ্রেম অব রেফারেন্সে এগিয়ে রাখতেই হবে। আমির-শাহরুখ থেকে শুরু করে উত্তম-সৌমিত্র,ফেলুদা-ব্যোমকেশ, পেলে-ম্যারাডোনা, মেসি-রোনালদো সবাইকে নিয়ে যখন ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চায়ের কাপ থেকেও ধোঁয়া ওঠে তখন ধোনী ও দাদার ক্ষেত্রেই বা তার ব্যতিক্রম হবে কেন?
ধোনী নাকি দাদা-কে বড় অধিনায়ক এ বিতর্ক শেষ হওয়ার নয়। দু’জন যেহেতু দুটো আলাদা প্রজন্মের তাই তুলনা টানাও ঠিক নয়। সব পরিস্থিতিকে একই লেভেলে এনে তুলনা টানতে হয়। তাই কে বড় বা কে ছোট তা এককথায় বলা সম্ভব নয়। তবে কিছু বিষয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে।
প্রথমেই আসা যাক কে কোন পরিস্থিতিতে ক্যাপ্টেন্সি পেয়েছিল। অধিনায়ক শচীন যখন তার অধিনায়কত্বের দ্বিতীয় ফেজেও সাফল্য না পেয়ে আর নিজের ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য এবং অবশ্যই ১৯৮৬ সালের(পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ০-১) পর দেশের মাটিতে প্রথমবারের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ০-২ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হেরে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয় তখন ওয়ানডে সিরিজে সৌরভ গাঙ্গুলির হাতে অধিনায়কত্ব তুলে দেওয়া হয়। ভারত সেই সিরিজ জেতে ৩-২ ব্যবধানে।
‘ভারতীয় দল যখন ম্যাচ গড়াপেটায় জর্জরিত, কেউই যখন অধিনায়কত্ব নিতে চায়নি এরকম পরিস্থিতিতে তখন সৌরভ গাঙ্গুলি অধিনায়কত্ব নেয়’ – একথা মোটেই ঠিক নয় কারন এই গড়াপেটা কাণ্ড তখনও বাইরে আসেনি। আর ক্যাপ্টেন হিসেবে সৌরভের প্রথম সিরিজে (মার্চ, ২০০০) তার টিমে আজহার যেমন ছিল, ছিল অজয় জাদেজাও। আর এশিয়া কাপের পঞ্চম ম্যাচ(৩রা জুন,২০০০) ছিল আজহার ও জাদেজার শেষ ম্যাচ।
আবার অন্যদিকে ধোনি ইংল্যান্ড সফরের পর শচীন, দ্রাবিড়, সৌরভ, জহিরের মতো সিনিয়রদের ছাড়া শুধু নয় টিমের মাত্র একটা আন্তর্জাতিক টি-২০ খেলার অভিজ্ঞতা সম্বলিত টিমের অধিনায়ক হয় দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ২০০৭ এর ওয়ানডে বিশ্বকাপে হারাকিরির পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও যখন ওয়ানডে সিরিজ হারে তখনই দ্রাবিড় মনস্থির করে ফেলেছিল এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীনই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়।
ভারতের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে অধিনায়কত্ব পায় ধোনি। আর ভারত সেই সিরিজ হারে ২-৪ ব্যবধানে। অন্যদিকে ২০০৮ সালে ১-০ তে এগিয়ে থাকা অবস্থায় কুম্বলের চোট এবং তার ফলে তার অবসরের দরুন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্টে অধিনায়কত্ব পায় ধোনি এবং ভারত সেই টেস্ট জেতে, সিরিজের ফল ২-০।
এখানে উল্লেখ্য যে সৌরভ বা ধোনি অধিনায়ক হিসেবে দু’জনেরই নাম প্রস্তাবনার পেছনে শচীন টেন্ডুলকরের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।
১৯৯২ সালে ওয়ানডেতে চান্স পেয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাটি শক্ত করতে সৌরভকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও চার-চারটি বছর। সৌরভ যেখানে ক্যাপ্টেনের(পড়ুন আজহার) কাছ থেকে সহযোগিতা পায়নি আবার অন্যদিকে প্রথম চারটে ওয়ানডে ইনিংসে ধোনি যথাক্রমে ০, ১২, ৭, ৩ রান করলেও ক্যাপ্টেন সৌরভের কিন্তু দীনেশ কার্তিকের মতো ট্রিটমেন্ট ধোনির ক্ষেত্রে করেনি। বরং পাকিস্তানের ভারত সফরের দ্বিতীয় ম্যাচে বিশাখাপত্তনমে অধিনায়ক সৌরভ নিজের তিন নম্বর স্থানে ধোনীকে ব্যাট করে পাঠায় আর শুরু হয়ে যায় ‘ধোনী ধামাকা!’ তবে একথাও ঠিক যে, ওই ১৯৯৬ এ সৌরভের চান্স পাওয়াতেও পূর্বাঞ্চল লবি ও সম্বরণ ব্যানার্জীর অনেক ভূমিকা আছে!
শুধু ধোনিকে ওপরে তোলা নয় শেবাগকে ওপেনে পাঠানোর সিদ্ধান্তটাও যে রেনেসাঁস ছিল বিশেষ করে টেস্টে যখন সেওয়াগ ৬ নং এ নেমে ৭০ গড় করা সত্ত্বেও তাকে ৬ থেকে ৭ নং এ নামানোর জন্য তেমন পারফরমেন্স করতে পারেনি আর অন্যদিকে ওপেনে নতুন হাওয়ার দরকার ছিল। একইভাবে দুর্ধর্ষ ট্যালেন্ট থাকা সত্ত্বেও রোহিত শর্মা যখন থিতু হতে পারেনি তখন তাকে শর্টার ভার্সানে ওপেনে নামিয়ে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে ধোনীও।
হ্যাঁ,এই রোহিতকেও অনেক ব্যাক করেছে ধোনি যা সৌরভের যুবিকে ব্যাক করার সাথেই তুলনীয়। প্রথম ১০০ ম্যাচে ৩০.৭৪ গড়,১৫ টা হাফ সেঞ্চুরি, ২ টি সেঞ্চুরি সহ যুবির মোট রান যেখানে ২৩৬৭..সেখানে সমসংখ্যক ম্যাচে ৩১.৭৯ গড়ে ১৭টি হাফ সেঞ্চুরি এবং ২টি সেঞ্চুরি সহ রোহিতের রান ২৪৮০। প্রথম ১৫৩ ওয়ানডে ম্যাচে রোহিত ব্যাট করেছে ১৪৮ ইনিংসে, নট আউট ২৩ আর মোট রান ৫১৩১, গড় ৪১.০৪৮। যুবি ১৫৯ ম্যাচে ব্যাট করেছে ১৪৪ ইনিংসে, নট আউট ২১, মোট রান ৪২৮৬,গড় ৩৪.৮৪৫৫।
যুবির ৬ নম্বরে ৫৯ ইনিংসে গড় ৩৬.৭১, রোহিতের ৬ নং এ ২৫ ইনিংসে গড় ৪৫.৩৭। ব্যাক তাদেরকেই করতে হয় যাদের ট্যালেন্ট আছে। অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়ে আসা, নাইরোবিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮৪ বা ন্যাটওয়েস্ট ফাইনালে ৬৯ দেখেই কিন্তু যুবির কোয়ালিটি বোঝা গিয়েছিল। ঠিক তেমনি ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বা সি.বি. সিরিজের পারফরমেন্স দেখে রোহিতের ক্ষেত্রেও তাই।
তবে টেস্টে ওপেনে ব্যর্থ হলে সেওয়াগ যে আবারও মিডল অর্ডারে চান্স পাবে সেরকম প্রতিশ্রুতি সৌরভ দিয়ে রেখেছিল আর অন্যদিকে রোহিত ওপেনে ব্যর্থ হলে তার কেরিয়ারের উপর বড় প্রশ্নচিহ্ন পড়ে যেত যেমনভাবে হাল আমলে টেস্টে ওপেন করতে নেমে রোহিত ব্যর্থ হলে লাল বলের ক্রিকেটের দরজা হয়তো বন্ধ হয়ে যেতে পারতো। এই যে সাহস জোগানোটাই একজন ক্যাপ্টেনের আসল উদ্বুদ্ধকরণ শক্তি। শুধু সেওয়াগ বা যুবরাজ নয় হরভজন,নেহেরা থেকে শুরু করে জাহির পর্যন্ত ক্যাপ্টেনের জোগানো সাহসের উপর নির্ভর করে গেয়েছে, “আমরা নতুন যৌবনেরই দূত!”
ক্যাপ্টেন সৌরভ সেই আস্থাটা কাম্বলি বা সোধীর উপর রাখতে পারেনি। রাখতে পারেনি পার্থিবের উপরও। একদিকে যেমন অবসর থেকে শ্রীনাথকে ফিরিয়ে এনেছে তেমনি অন্যদিকে সৌরভের আমলে হারিয়ে গেছে সুনীল যোশী, দেবাশীস মোহান্তিরাও। ৪.৯৯ ইকনমিতে ২৯.৫৫ গড়ে ৪৪ ম্যাচে ৫৭ উইকেট ওয়ানডেতে মোটেই খারাপ ফিগার নয়। কিন্তু শেষ ৫ ম্যাচের (০/৩৯, ৩/১৮, ১/৩৯, ০/৪৩, ০/২৭) পারফরমেন্সের সময় ক্যাপ্টেনের সাপোর্টের যখন প্রয়োজন ছিল তখনই তাকে দল থেকে বাদ পড়তে হয়।
২০০৩ বিশ্বকাপে লক্ষ্মণের পরিবর্তে দীনেশ কার্তিককে নিয়ে যায় সৌরভ আর সেই লক্ষ্মণ তারপরের (২০০৩-০৪) অস্ট্রেলিয়া সফরে এক সপ্তাহে তিনটে সেঞ্চুরি (১০৩*, ১০৬*, ১৩১) হাঁকায়। কে বলতে পারে যে ২০০৩ এর ২৩ শে মার্চ জোহানেসবার্গে লক্ষ্মণ থাকলে হয়তো ইডেনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারতো সেওয়াগের সাথে জুটি বেঁধে ! শুধু তাই নয় সেই বিশ্বকাপে কুম্বলেকেও প্রথম একাদশে স্থান দেয়নি সেরকমভাবে।
আবার অন্যদিকে ২০০৭-০৮ মৌসুমে ৪৪.২৯ গড়ে ৩০ ইনিংসে ১২৪০ রান করা সৌরভকে ওয়ানডে টিম থেকে বাদ দেওয়াটাকে মেনে নেওয়া যায়না। স্ট্রাইক রেট আর ফিটনেসের কথাই যদি ধরি তাহলে বদ্রীনাথ বা ২০১০ এর আগের বিরাটের স্ট্রাইক রেট এবং শেবাগের ফিটনেস এমন কিছু আহামরি ছিল না। বুড়োদের বাদ দেওয়া বা স্ট্রাইক রেটের দিকে নজর যদি এতই হয় তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৯ সালের চাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে ওয়ানডেতে দ্রাবিড়কে ফিরিয়ে আনা কেন?
সেঞ্চুরি করার পরও মনোজ তিওয়ারিকে চান্স না দিয়ে বসিয়ে রাখার যৌক্তিকতাও খুঁজে পাইনা।২০১২ সালের চাার আগস্ট পাল্লেকলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পঞ্চম এক দিনের ম্যাচে ২৮ বলে অপরাজিত ২৯ রান ছাড়াও ১০ ওভারে ৫ উইকেট নেয় ইরফান। তারপরেও তার ডাক পড়েনা। আচ্ছা, স্টুয়ার্ট বিনির চেয়েও কি খারাপ খেলতো ইরফান? ২ রা অক্টোবর ২০১২, প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেও জাহিরের আর ডাক পড়েনি। ২০১২ সালের সিবি সিরিজে শচীন,গম্ভীর ও সেওয়াগকে ফিটনেসের ধুয়ো দিয়ে রোটেশনে খেলানোটাকে সমর্থন করা যায়না।
ধোনীর আমলে সিনিয়রদের বাদ পড়া নিয়ে বা তাদের ফেয়ারওয়েল ম্যাচ না দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ চরমে। গম্ভীর,জাহির, সেওয়াগ সহ অনেকেই এরকম ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী। তবে সৌরভের আমলে রবিন সিং বা ভেঙ্কটেশ প্রসাদকেও ভুলে গেলে চলবেনা।
হয়তো সৌরভ ম্যাচ গড়াপেটার পরবর্তী অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে অধিনায়কত্ব পায়নি কিন্তু তার অধিনায়কত্বের শুরুর দিকেই ঘটনা গুলো ঘটে গিয়েছিল আর ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের নিয়ে অবিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছিল। প্রকাশ্যেই ক্রিকেটারদের ‘ফিক্সার’ টিপ্পনী শুনতে হ’ত। ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলি সেই অন্ধকারময় টানেল থেকে যেভাবে টিমকে বের করে এনেছিল তাতে কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। তবে এটা ঠিক যে, দলের মধ্যে আজহার বা জাদেজারা যা ঘোঁট পাকাতো বিশেষ করে ক্যাপ্টেন শচীনের সময় সেরকম অসুবিধা থেকে বেঁচে যায় সৌরভ এরা বাদ পড়তে। এরই সঙ্গে কাইফ, যুবরাজ, জহিরের মতো একঝাঁক প্রতিভাবান যুবা এসেই দলের শূন্যস্থানগুলো সুন্দরভাবে পূরণ করতে পেরেছিল। সবাইকে নিয়ে সৌরভ গঠন করেছিল ‘টিম ইন্ডিয়া’!
অন্যদিকে গ্রেগের জমানায় সেই ‘টিম ইন্ডিয়া’ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, যার ফলস্বরূপ ২০০৭-এর ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয় ভারতের। তার চারবছর পরেই আবার দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ, এমন অবস্থায় দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়েছিল ধোনী। তবে ধোনীর কৃতিত্ব এখানেই যে কোন পজিশনে কাকে লাগবে বা দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জেতার জন্য কী কী অস্ত্রের প্রয়োজন তা সে চারবছর আগে থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিল।
সেজন্য সৌরভ বা দ্রাবিড়কে বাদ দিয়ে টিম সেট করতে সুবিধেই হয়েছিল। ওপেনে শচীন-শেবাগ আর তিন নম্বরে গম্ভীর, মিডল অর্ডারে যুবরাজ, ধোনি নিজে – টিমটা ঠিকই হয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষানিরীক্ষা চলছিল একজন স্পেশালিষ্ট মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আর একজন ব্যাটসম্যান যে কিছু ওভার বল করতে পারবে তা নিয়ে।
বিশাখাপত্তনমে ধোনীকে নিজের ৩নং পজিশন ছাড়লেও সতীর্থের ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করা নিয়ে অধিনায়ক সৌরভের কিছু সিদ্ধান্তের অবতারণা না করে পারছিনা। সৌরভের জন্য অনেকবার শচীনকে ব্যাটিং অর্ডারে নীচে নামতে হয়ে আপত্তি সত্ত্বেও। দলের সেরা অস্ত্রকে তার সহজাত স্থানে না দেওয়াটাকে সমর্থন করা যায়না। আবার ২০০৩ বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত সৌরভ অনড় ছিল পরে রাইটের দৃঢ়তায় সৌরভ শচীনকে ওপেনিং স্লট ছাড়তে বাধ্য হয়।
আবার টেস্টেও শেবাগকে ৬ নং থেকে ৭ নং এ পিছিয়ে যেতে হয়েছে, কিছু ভালো পারফরমেন্স করেও যুবরাজকে অনিয়মিত হতে হয়েছে। সেদিক দিয়ে দেখলে ক্যাপ্টেন ধোনীর জন্য ব্যাটিং অর্ডারে কাউকে সমঝোতা করতে হয়নি বরং ঘরোয়া ক্রিকেটে ওপেন করা বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন নম্বরে ব্রেক পাওয়া ধোনি নিজেই পিছিয়ে গেছে অনেকবার। মানে তোমরা আগে যা করছো করো আমি আছি পেছনে, এভাবেই হয়ে উঠেছে ওয়ানডে ক্রিকেটে ভারতীয় দলের অন্যতম ফিনিশার। আবার প্রয়োজনে বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো ম্যাচে উপরে উঠে ব্যাট করে ম্যাচও জিতিয়েছে। রোহিতকে ওপেনে তোলাই শুধু নয় বিরাটকে ওয়ানডেতে ৩ নং এ সেট করিয়েছে।
ধোনী আসার আগে অধিনায়ক সৌরভ কিন্তু তার টিমে একজন উইকেটকিপারকেও থিতু করতে পারেনি। দ্রাবিড়কে জোড়াতালি দিয়ে কিপিং করানোটা আর যাইহোক স্থায়ী সমাধান ছিলনা। অন্যদিকে ধোনী তার টিমে ধোনীকে পেয়েছিল। সৌরভকে যেমন উইকেট কিপার, ওপেনার নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল ধোনীর ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র সমস্যা হয়নি সে বিষয়ে। আবার ধোনির হাতে পরিণত যুবরাজ, জহির, নেহরা থাকলেও সৌরভের হাতে তারা ছিল নেহাৎই আনকোরা।
একটা কথা বলতে পারি যে ওয়ানডে টিম সৌরভ যেভাবে রেখে গিয়েছিল আর ধোনি যেভাবে রেখে গিয়েছিল তাতে দুটোই তুল্যমূল্য হলেও টেস্টের ক্ষেত্রে অধিনায়ক সৌরভ ধোনীর চেয়ে সে বিষয়ে কয়েকগুণ এগিয়ে থাকবে। টেস্টে সৌরভের ক্যাপ্টেন্সিতে অভিষেক ঘটেছিল ১৯ জন ক্রিকেটারের আর ধোনীর আমলে ২৫ জন ক্রিকেটারের। অন্যদিকে ওয়ানডেতে সৌরভের ক্যাপ্টেন্সিতে অভিষেক হয়েছিল ৩০ জন ক্রিকেটারের আর ধোনীর আমলে ২৫ জন ক্রিকেটারের।
এর থেকে বোঝা যায় যে টেস্ট টিম পুনর্গঠনে ধোনিকে বেশি বেগ পেতে হয়েছে বিশেষ করে ক্যাপ্টেন্সির শেষ পর্যায়ে যেটা সৌরভকে পেতে হয়েছিল ওয়ানডেতে। তবে সৌরভ, দ্রাবিড়কে বাদ দিয়ে গম্ভীর, কোহলিকে টিমে সেট করার ঝুঁকি নেওয়াটা অত সহজ ছিলনা ধোনির ক্ষেত্রে। সবকিছু মাথায় রেখেই বলা যায় যে টিম পুনর্গঠনে অধিনায়ক সৌরভ ধোনীর চেয়ে এগিয়েই থাকবে।
এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে চোখ ফেরানো যাক। ঘরের মাঠে টেস্ট জয়ের ব্যাপারে অধিনায়ক ধোনি যেখানে ৩০ টি টেস্টে জয় পেয়েছে ২১ টি আর হার ৩টি ম্যাচে সেখানে ক্যাপ্টেন সৌরভের ২১ ম্যাচে জয় ১০ টি তে আর হার ৩ টি ম্যাচে। ক্যাপ্টেন সৌরভ যেমন দেশের মাঠে ২০০১ সালে পিছিয়ে পড়েও পরাক্রমশালী স্টিভের অশ্বমেধের ঘোড়া রুখে দিতে পেরেছিল, ধোনি আবার দেশের মাঠে ২০১৩ সালের অস্ট্রেলিয়াকে ৪-০ তে হোয়াইটওয়াশ করেছিল।
আবার এই ধোনির অধিনায়কত্বে ইংল্যান্ড ২০১২ সালে ভারতের মাটিতে ১৯৮৪ সালের পর প্রথমবারের জন্য টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় ২-১ ব্যবধানে। অন্যদিকে ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে সেই বিতর্কিত গ্রিনটপ নাগপুর টেস্টের আগে সৌরভ যখন সিরিজের বাকি ২ ম্যাচের জন্য দ্রাবিড়কে অধিনায়কত্ব সঁপে দিয়ে যায় তখন ভারত ০-১ তে পিছিয়ে এবং সিরিজ শেষে ভারত যথারীতি হারে ১-২ ব্যবধানে। এক্ষেত্রে একটা কথা বলা যায় যে সৌরভ একসঙ্গে হরভজন এবং কুম্বলে দু’জনকেই পেয়েছিল, অধিনায়ক ধোনীর ক্ষেত্রে কুম্বলের সার্ভিস পাওয়ার সৌভাগ্য ঘটেনি।
তবে মোট টেস্ট জেতার শতকরা হারে (৪৫%) সৌরভের (৪২.৮৫%) চেয়েও ধোনি এগিয়ে থাকলেও অ্যাওয়ে ম্যাচে অধিনায়ক সৌরভ (২৮ ম্যাচে ১১ জিত,৭ ড্র) ধোনির চেয়ে (৩০ ম্যাচে ৬ জিত, ৯ ড্র) এগিয়ে। শতকরা হারে যেটা ৩৯.৩%>২০%, অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ২০১১ সালে টেস্টে ০-৪ করে হোয়াইটওয়াশ ও ভোলার নয়। সেই সাথে পরপর ছয়টি অ্যাওয়ে সিরিজ হেরেছিল (অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ০-২ তে পিছিয়ে থাকা ধরে)।
ক্যাপ্টেন সৌরভের টেস্ট টিম ক্যাপ্টেন ধোনির টেস্ট টিমের চেয়ে যে বেশি ভালো ছিল তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে ২০১২ এর জানুয়ারির পর যখন দ্রাবিড় ও লক্ষ্মণ অবসর নেয় তখন টেস্ট টিমটা এক্কেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে। আসলে ক্যাপ্টেন্সির সাথে টিমও ভালো হতে হয়। একটার অভাব হলেই সমস্যা। আর নিজে সামনে থেকে পারফর্ম করে টেস্টে দলকে প্রেরণা দেবে, সেটা ধোনি করতে পারেনি ট্রানজিশন ফেজে। যেমন ২০০৩-এর অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রথম টেস্টে ব্রিসবেনে সৌরভের ১৪৪ রান পুরো দলটাকে উজ্জীবিত করে দেয়, আর যা সঞ্চারিত হয় পুরো টেস্ট সিরিজটাতেই।
এমনটা নয় যে ভারত আগে বিদেশে টেস্ট জিততো না। ১৯৭১ ও ১৯৮৬ তে ইংল্যান্ডে,১৯৬৭-৬৮ তে নিউজিল্যান্ডে ভারত টেস্ট সিরিজ জিতে আসে। ১৯৭১ সালে অজিত ওয়াদেকরের ভারত লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ৫ টেস্টের সিরিজ ১-০ তে জিতে আসে। আসলে ভারত নিজেদের দলীয় রাজনীতি, আঞ্চলিকতা ও ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’-র জন্য দিনদিন আন্ডার পারফর্ম করেই যাচ্ছিল বিশেষ করে বিদেশে।সেই জায়গায় অধিনায়ক সৌরভ ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের সাথে সিরিজ ড্র করে তাদের ঘরের মাঠে, ২০০৩-০৪ এ পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাদের মাঠেই চার টেস্টের সিরিজ ড্র করে ১-১ এ, আর ২০০৪ সালে পাকিস্তানের মাটিতে ভারত ২-১ এ সিরিজ জেতে। এছাড়া বাংলাদেশের সাথে সিরিজ জেতা তো আছেই। জিম্বাবোয়ে গিয়ে ১-১ এ সিরিজ ড্রও করে।
অন্যদিকে ধোনীর অধিনায়কত্বে ভারত ২০০৯ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১-০ , ২০১১ সালে ওয়েস্টইন্ডিজের মাটিতে ১-০ তে টেস্ট সিরিজ জেতে। আর ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১-১ এবং ২০১০-১১ তে সাউথ আফ্রিকার মাটিতে ওই একই ব্যবধানে ড্র করে। বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ জয় অধিনায়ক ধোনির ঝুলিতেও রয়েছে। এসব সাফল্য সত্ত্বেও বিদেশে ব্যর্থতা ও নিজের ব্যাটিং পারফরমেন্সই অধিনায়ক ধোনীকে বিদেশে টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে পিছিয়ে রেখেছে। অধিনায়ক ধোনীর আমলে ভারতীয় টেস্ট টিম ১ নং র্যাঙ্কিং লাভ করলেও ধোনী যখন টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ে তখন কিন্তু ভারতের র্যাঙ্ক ৭ এ নেমে যায়।
অধিনায়ক থাকাকালীন ব্যাটিং পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলে ধোনী কিন্তু সৌরভের চেয়ে এগিয়েই থাকবে। ৪৯ টেস্ট ইনিংসে ৩৭.৬৬ গড়ে সৌরভের রান ২৫৬১ সেখানে ৬০ ইনিংসে ৪০.৬৬ গড়ে ধোনীর রান ৩৪৫৪। তবে সৌরভকে যে কন্ডিশন ও বোলারদের বিরুদ্ধে রান করতে হয়েছে তা যে ধোনীকে করতে হয়নি তা বলাই বাহুল্য। আবার ওয়ানডেতে ১৭২ ম্যাচে ৫৩.৫৫ গড়ে ধোনীর রান ৬৬৪১ আর ১৪২ ম্যাচে ৩৮.৭৯ গড়ে সৌরভের রান ৫০৮২। ওয়ানডেতে প্রভাবের দিক দিয়ে অধিনায়ক ধোনী অনেকটাই এগিয়ে। শুধু তো রান নয় উইকেট কিপিংটাও ছিল ধোনীর প্লাস পয়েন্ট আর অন্যদিকে সৌরভের বোলিং। স্টাম্পিংকে তো ধোনী অন্যমাত্রায় নিয়ে গিয়েছে।
আন্তর্জাতিক টি-২০ বা IPL-এর মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অধিনায়কত্বের প্রসঙ্গ এখানে আলোচনা করছিনা বা আলোচনাটা সমিচীন নয় তবে আন্ডারডগ থেকে ভারতকে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয়ী করাটা অবশ্যই কৃতিত্বের দাবী রাখে। অধিনায়ক ধোনির আসল জায়গা কিন্তু একদিনের ক্রিকেট। ১৪৬ টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে সৌরভের অধিনায়কত্বে ভারতের জয় ৭৬ ম্যাচে আর হার ৬৫ ম্যাচে। আর ২০০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ধোনীর অধিনায়কত্বে ভারতের জয় ১১০ ম্যাচে আর হার ৭৪ ম্যাচে।
জয়ের শতকরা হিসেবে দু’জনেরই রেকর্ড কাছাকাছি হলেও ট্রফি জয়ের ব্যাপারে ধোনি অনেক এগিয়ে। ২০০২ সালের ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি, যুগ্মভাবে ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর ২০০৪ সালে প্রথমবারের জন্য পাকিস্তানের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজের মতো কৃতিত্ব অধিনায়ক সৌরভের ঝুলিতে। তবে অধিনায়ক সৌরভের আসল কৃতিত্ব ২০০৩ এর বিশ্বকাপ ফাইনালে দলকে তোলা।
২০০২-০৩ নিউজিল্যান্ড সফরে ১-৪ এ ভরাডুবি, বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সব উইকেট হারিয়ে মাত্র ২০৪ রান করা বা তার পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাত্র ১২৫ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর অতি বড় ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীও আশা করেননি যে ভারত দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সেই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে! আর আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ ছাড়া সেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনাল জেতা অত সহজ ছিলনা। ভারতকে যদি সান্দাকফু ধরি তবে অস্ট্রেলিয়া সেইসময় ছিল এভারেস্ট। তবে ফাইনালে উঠে ভারত যে স্বপ্ন দেখেছিল তা ভবিষ্যৎ সাফল্যের রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছিল।
অন্যদিকে ধোনীর অধিনায়কত্বে ২০০৮ সালে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কমনওয়েলথ ব্যাঙ্ক সিরিজ জেতে ভারত, ২০১০ এবং ২০১৬ সালে জেতে এশিয়া কাপ। ২০১৩ সালে শচীন,সেওয়াগ,যুবরাজ,গম্ভীর,জাহিরদের ছাড়াই ইংল্যান্ডে ইংল্যান্ডকেই ফাইনালে হারিয়ে জেতে চাম্পিয়ন্স ট্রফি।
সবকিছু ছাপিয়ে ২০১১ এর ২রা এপ্রিল ভারতকে আরবসাগরের তীরে উদ্বেলিত করতে পেরেছে ২৮ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের স্বাদ দিয়ে। ৭৯ বলে ৯১ রানে অপরাজিত থেকে ধোনী দেখিয়ে দিয়েছিল একেই বলে ‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’। যেখানে ভারত অতীতে জেতার কাছে গিয়েও অনেক ম্যাচ হেরেছে আর এত দর্শকের প্রত্যাশার চাপ কাটিয়ে ফাইনাল জেতানোটা অত সহজ নয় কিন্তু।
এবার ‘সাজানো বাগানে ফুল ফোটানো’ তত্ত্বের দিকে চোখ ফেরানো যাক। বাস্তবে ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী টিমের মাত্র চারজনের অধিনায়ক সৌরভের আমলে অভিষেক হয়েছিল। যার মধ্যে যুবি ও জাহির ছিল এই টিমের অন্যতম কারিগর। আর অধিনায়ক সৌরভের আমলে অভিষেক হলেও গম্ভীর পূর্ণতা পায়নি তার আমলে। ইউসুফ ফ্লপ করাতে লোয়ার মিডল অর্ডারে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, বিশ্বকাপের মাঝপথে তার বদলে রায়নাকে খেলানোটা ছিল ধোনীর একটা মাস্টারস্ট্রোক। আবার ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেই সাজানো বাগান থাকা সত্ত্বেও কিন্তু ভারত চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিল।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতা কিন্তু অত সহজ নয়। ভারত অনেকবার ফেভারিট হয়েও আইসিসি টুর্নামেন্টে কোনদিনই ঘরের মাঠে খেলার ফায়দা তুলতে পারেনি। যেখানে পাটা পিচ, শিশিরের জন্য টস ফ্যাক্টর সেখানে হোম অ্যাডভান্টেজ কথাটাই বাতুলতা। ১৯৮৭ ও ১৯৯৬-র ওয়ানডেতে বা ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হট ফেভারিট হয়েও ভারত কাপ জিততে পারেনি। এর মাঝে ভারতে চ্যা ম্পিয়ন্স ট্রফিও হয়েছে এবং ভারত রীতিমতো ব্যর্থ ।
২০১১ সালের এর আগে কোন আয়োজক দেশই ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। আবার ইংল্যান্ডের কাছে হারতে হারতে ড্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর ভারতের অনেক সমর্থকই বিশ্বকাপ জেতার ব্যাপারে সন্দিহান ছিল। সেদিক দিয়ে দেখলে ধোনীর অধিনায়কত্বে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতা মোটেই কম কৃতিত্বের নয়। তবে একথাও মানতে হবে যে ২০০৩ সালের অস্ট্রেলিয়া আর ২০১১ সালের অস্ট্রেলিয়া এক জিনিস নয়।
স্টিভ ওয়াহর কথায়, ‘Ganguly was the first captain that changed the perception of the way India played their cricket. Now, there is not much difference between the Indian and Australian teams.’
হ্যাঁ, নবজাগরণের কাজটা শুরু করেছিল অধিনায়ক সৌরভই আর তাকে শিখরে নিয়ে গিয়েছিল ধোনিই। কারুরই অবদান অস্বীকার করা যায়না। আর অধিনায়ক সৌরভ এই পুনর্গঠনের কাজটা ঠিকঠাক না করে গেলে ধোনীর পক্ষে সাফল্যলাভ এত মসৃণ হ’ত না। ধোনীর কৃতিত্ব এখানেই যে সে সম্ভাব্য সবধরনের সাফল্য লাভ করেছে। তাই তো শচীন পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছে, ‘Dhoni Is The Best Captain I Have Played Under.’
ভাগ্যের কথা যদি বলতেই হয় তাহলে বলি ভাগ্য তাদেরই সহায় হয় যারা সাহসী হয়। অধিনায়ক ধোনি সেদিক দিয়ে তার ব্যাটিং স্টাইলের মতোই আনঅর্থোডক্স। গ্রুপ লিগে আগে ব্যাট করে ১২৫ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল বলে অধিনায়ক সৌরভ যেখানে ফাইনালে টসে জিতে ফিল্ডিং নেয় তখন অধিনায়ক ধোনী আগের ওভারে মার খাওয়া ইশান্তকে ১৮তম ওভারে চাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল জেতার পথ সুগম করে তোলে। সবাই যখন ভাবছে ম্যাচটা হেরে যাবে বা ‘এ বোলার আবার কেন’ – সেসব ভাবনাকে উল্টে দিয়ে বহু ম্যাচ জিতেছে ভারত।
এটাই ধোনির অধিনায়কত্বের আসল কৃতিত্ব। প্রচন্ড সাহসী বলেই কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফাইনালে যোগিন্দর শর্মাকে শেষ ওভার বল দিতে পারে। কথায় আছে, ‘Fortune favours the brave’ & ‘Fortune favours the bold.’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ধোনি একদিকে যেমন জুয়া, অন্যদিকে সাহসীও বটে।
ধোনীর যেখানে হিমশীতল মস্তিষ্ক আর হারার আগেও জয়ের গন্ধের আঘ্রাণের মানসিকতা অন্যদিকে অধিনায়ক সৌরভ লড়ে যেত বাঘের মতো গর্জন করতে করতে,বিপক্ষের চোখে চোখ রেখে। ২ জনের মধ্যেই ছিল তীব্র জিগীষা।
একজন যেখানে সবাক যুদ্ধেও পিছপা হয়নি, অন্যজন সেখানে সাইলেন্ট কিলার। ‘শুধু বাঘের গর্জনই ভয়ের নয়, সাপের হিসিহিসানিও হাড় হিম করে দেয়!’ তবে সতীর্থদের মাঠের বাইরে পাশে থাকা প্রসঙ্গ বিবেচনা করলে বলা যায় ধোনি যেখানে মাঠে ক্যাপ্টেন, সৌরভ সেখানে শুধু মাঠে নয় মাঠের বাইরেও ক্যাপ্টেন।