সেই একই স্টান্স, হাই ব্যাকলিফট, জমাট ডিফেন্স দেখে খানিকটা ভ্রম বলেই মনে হচ্ছিলো। শিবনারায়ণ চন্দরপল কি তবে ফিরে এলেন! পার্থের দর্শকেরা খানিকটা নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলেন, ফিরে গিয়েছিলেন দুই দশক আগে। অভিষেক ইনিংসেই দারুণ এক ফিফটি হাঁকিয়ে বাবা শিবনারায়ণ চন্দরপলকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ছেলে তেজনারায়ণ চন্দরপল।
বাবার মতো ছেলে অভিষেকও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। ১৯৯৬ সালে ব্রিসবেনে গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্নদের সামলে ২৩০ বলে ৮২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে নিজের আগমনী বার্তার জানান দিয়েছিলেন শিব। অন্যদিকে তেজনারাইনকে ব্যাট করতে হয়েছে আরো চাপের মুখে, সবে ৫৯৮ রানের পাহাড় গড়ে ইনিংস শেষ করেছে স্বাগতিকরা। পাঁচ সেশন ফিল্ডিংয়ের পরই নেমে পড়তে হয়েছে ইনিংস শুরু করতে।
দলকে লড়াই করার মতো শুরু এনে দায়িত্বটা খানিকটা বর্তেছে তাঁর কাঁধেও। বাবা তো তবু মিডল অর্ডারে নামায় সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু লায়ন, স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজলউডদের আগুনে বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে অপেক্ষার অবকাশ ছিল না ত্যাগের সামনে। মজার ব্যাপার হলো, ২০১২ সালে স্টার্ক এবং লায়ন দুজনেই বল করেছেন শিবনারায়ণের বিপক্ষে এবং একবার আউটও করেছেন।
প্রথম বলেই খানিকটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলেন। হ্যাজলউডের আউটসুইংটা ব্যাটের কানায় লেগে বেরিয়ে যায় ফোর্থ স্লিপ। টেস্ট ক্যারিয়ারে রানের খাতাটা তাই বাউন্ডারি দিয়েই খোলা ত্যাগের। এরপর সময় যত গড়িয়েছে ত্যাগ স্মরণ করিয়েছেন সিনিয়র চন্দরপলকেই।
সেই জমাট ডিফেন্স, দারুণ ফুটওয়ার্ক, লেগস্ট্যাম্পের দিকে সরে স্টান্স নেয়া সবমিলিয়ে যেন পুরনো চন্দরপলের প্রতিলিপি। অভিষেকেই দারুণ ফিফটি জানান দেয় বাবার জুতোয় পা গলানোর সামর্থ্য তিনি রাখেন ভালোভাবেই।
ভালো বলগুলোকে যেমন সমীহ করেছে, তেমনি বাজে বলের ঠিকানা হয়েছে বাউন্ডারিতে। মাঝে কামিন্সের শর্ট বলকে পুল করে ফাইন লেগের উপর দিয়ে সীমানার ওপারে পাঠিয়ে ফিরিয়ে আনেন ২০০৩ সালের জর্জটাউনকে। সেবার ৬৯ বলের সেঞ্চুরি করার পথে আগুয়ান ব্রেট লির বলে একই শটে ছক্কা মেরেছিলেন বাবা শিবানারায়ণ চন্দরপল।
দ্বিতীয় দিন শেষে ছয় চার এবং এক ছক্কায় ৭৩ বলে অপরাজিত ছিলেন ৪৭ রানে। তাঁর ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি প্রায় দেড়দিন ফিল্ডিং করতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর ওপেনিং পার্টনার এবং ক্যারিবীয় কাপ্তান ক্রেইগ ব্রাথওয়েট অবশ্য ত্যাগনারাইনের এমন পারফরম্যান্সে মোটেই অবাক হননি।
তিনি বলেন, ‘সে একজন যোদ্ধা, সে কারণেই আমি আশ্চর্য হইনি। আমি তাঁকে অনেকদিন ধরেই চিনি, তাঁর বিরুদ্ধে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি। সে লড়াই করতে জানে, ক্রিজে সময় কাটাতে পছন্দ করে। একবার টিকে গেলে সে বড় ইনিংস খেলতে সক্ষম। সুতরাং অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমার ধারণা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের বড় তারকা হওয়ার সকল গুণই আছে তাঁর মাঝে।’
ব্রাথওয়েট আরো বলেন, ‘সে অসাধারণ কিছুই করতে যাচ্ছে আগামী বছরগুলোতে। আমি তাঁর সাথে আরো অনেকদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করে যেতে চাই।’
তৃতীয় দিন সকালে অবশ্য এই জুটি বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। হ্যাজলউডের বলে বাউন্ডারি মেরে ফিফটিতে পৌছুলেও ফিরতে হয়েছে পরেই বলেই। দারুণ এক ডেলিভারিতে তাঁকে স্লিপে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেছেন অভিজ্ঞ এই অজি পেসার।
২৬ বছর বয়সে অভিষিক্ত ত্যাগনারায়ণের জন্য তাঁর বাবার অসাধারণ ক্যারিয়ারের পুনরাবৃত্তি করাটা খানিকটা অসম্ভবই বটে। তবে নিজের প্রথম ইনিংসেই ত্যাগনারায়ণ বুঝিয়ে দিয়েছেন হারিয়ে যেতে আসেননি, বরং নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই জায়গাটা অর্জন করে নিয়েছেন তিনি।