অফ ফর্ম এসেছিল কিংবদন্তি রাহুল দ্রাবিড়ের ক্রিকেট জীবনে, অফ ফর্ম এসেছেন আধুনিক দ্রাবিড় খ্যাত চেতেশ্বর পুজারার ক্যারিয়ারেও। টানা ব্যর্থতা সঙ্গী হয়ে উঠেছিল তার। লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে রান করতে পারেননি তিনি। ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে বাদ পড়তে হয়েছিল জাতীয় দল থেকেও।
স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনার কেন্দ্রে ছিলেন লম্বা সময় ধরে ভারতীয় টেস্ট দলের টপ অর্ডার সামলানোর দায়িত্বে থাকা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ব্যাট হাতে একের পর এক দৃষ্টিকটু আউট, রান খরা সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারের শেষ ভাগে এসে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন পুজারা।
কেন যেন, ক্রিকেট পাড়ায় প্রচার হয়ে গিয়েছে চেতেশ্বর পুজারা শুধু লাল বলেই খেলতে জানেন। তাই ভারতের রঙ্গিন পোশাকে সুযোগ পাওয়া তো দূরে থাক, শেষ কয়েক বছরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) দল পাননি তিনি। ফলে অফ ফর্ম কাটিয়ে উঠার জন্য প্রতিযোগিতা ম্যাচ খেলারও সুযোগ ছিল না তার সামনে।
তখনই সমাধান হয়ে আসে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট। সাসেক্সের হয়ে খেলার সুযোগ পান এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ইংলিশ কন্ডিশন, সাদা পোশাক; পরিচিত পরিবেশে নিজের পরিচিত ফর্মে ফিরতও সময় লাগে নি পুজারার। সাসেক্সের হয়ে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে অভিষেকেই ম্যাচেই করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি।
প্রথম ইনিংসে ছয় রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেই খেলেন ২০১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। পরের ম্যাচে উষ্টারশায়ারের বিপক্ষে করেন সেঞ্চুরি। অফ ফর্মে থাকা পুজারার ব্যাটে দেখা মিলল রানের ফোয়ারা। সবমিলিয়ে প্রথম পাঁচ ম্যাচেই দুই সেঞ্চুরি আর একটি ডাবল সেঞ্চুরি করে প্রমাণ করেন তিনি ফুরিয়ে যান নি।
এরপর তাঁকে আবার ফিরিয়ে আনে ভারতীয় নির্বাচকরা। জাতীয় দলে পুরোপুরি ফর্মে না ফিরলেও বড় রান করার আভাস দিয়েছিলেন। এর মাঝে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনিংয়ে নেমে ৬৬ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস পুরোনো পুজারার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল।
জাতীয় দলের বিরতি কাটিয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে ফিরে রান করা আরো বাড়িয়েছেন চেতেশ্বর পুজারা। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির পর ডারহামের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৩৩৪ বলে ২০৩ রানের ইনিংস, সর্বশেষ মিডলসেক্সের বিরুদ্ধে করলেন তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। এই ম্যাচে ৪০৩ বলে ২৩১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস এসেছিল তার ব্যাট থেকে।
এই নিয়ে চেতেশ্বর পুজারা প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ষোলটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক বনে গেলেন। আর কোন এশিয়ান ক্রিকেটারই পারেনি এই মাইলফলক অর্জন করতে। আর সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি করেছে এমন যেকোনো ব্যাটসম্যানের তালিকায় পুজারা আছেন ছয় নম্বরে। সর্বোচ্চ ৩৭টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন টেস্টের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান ডন ব্রাডম্যান।
একদিকে দলের অন্য সতীর্থরা আইপিএলের পাশাপাশি ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সিরিজ মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন, অন্যদিকে টেস্ট বিশেষজ্ঞ তকমা পাওয়া পুজারা নীরবে লড়াই করছেন নিজেকে ফিরে পাবার আশায়। সেই লড়াইয়ে অবশ্য নিজেকে জয়ী ভাবতেই পারেন এই ব্যাটার।
ভারতীয় ক্রিকেটে বর্তমান সময়ে অনেক প্রতিযোগিতা। হনুমা বিহারী, সূর্যকুমার যাদব, শ্রেয়াস আইয়ারের মত প্রতিভাবানরা এখন আছেন জাতীয় দলের আশেপাশেই। তাই দলে থাকলে হলে ধারাবাহিকতার বিকল্প নেই, আর কাউন্টিতে সেই ধারাবাহিকতার প্রতীক হয়ে উঠলেন পুজারা।
৩৪ বছর বয়স এখন চেতেশ্বর পুজারার। লম্বা সময় ভারতকে সার্ভিস দেওয়া অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের জন্য আর দেখিয়ে দেয়ার কিছু নেই। তারপরও যখন ক্যারিয়ারের শেষে গেল গেল রব উঠে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের শিকার হতে হয় তখন আর স্থির থাকা যায় না। জবাবটা দিতে হয়; তাই ব্যাট হাতে বাইশ গজে আরেকবার যুদ্ধে নেমে গিয়েছেন চেতেশ্বর।
ব্যাট দিয়ে যেমন থামিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ বোলারদের ছোড়া তূণ তেমনি থামিয়ে দিয়েছেন চারপাশ থেকে ধেয়ে আসা সমালোচনা। চেতেশ্বর পুজারা ফর্মে ফিরেছেন দাপট সাথে, জাতীয় দলে আবার জায়গা করে নিয়েছেন; এরই সাথে নিন্দুকদের আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট।’