ছক্কার হিরো, ছক্কার জিরো

ওয়ানডে ক্রিকেট বদলেছে, বদলাচ্ছে।

একটা সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের নীতি ছিল প্রথমদিকে রয়েসয়ে খেলে শেষদিকে দলের রান বাড়িয়ে নেয়া। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দলগুলোর ব্যাটিংয়ের নীতির পরিবর্তন ঘটেছে, ইনিংসের শুরু থেকেই তাই রান তোলার একটা তাড়া পাচ্ছে দলগুলি। এখন তাই ওয়ানডেতেও দেখা যায় ছয়ের ফুলঝুরি। এখন এই ছয়ের হিসেবে ওয়ানডেতে সেরা দলগুলো কারা?

১০। বাংলাদেশ – ৮৩৫

সেরা দশ দলের তালিকা করতে বসলে তালিকার ১০ নম্বর দলটির নাম বাংলাদেশ। এখন অব্দি ওয়ানডে ক্রিকেটে মোট ৮৩৫ টা ছয় মেরেছে দলটি। ২০১৫ সাল থেকে দলে সৌম্য, সাব্বির, লিটনের অন্তর্ভুক্তি (যারা কিনা প্রথাগত পিঞ্চ হিটার হিসেবে পরিচিত) হলেও তাতে বাংলাদেশের ছয় মারার দৃশ্যত উন্নতি হয়নি।

৯। জিম্বাবুয়ে- ১১৯২

জিম্বাবুয়ের বর্তমান দশা বেশ করুণ, বেশিরভাগ সময়ই ক্রিকেট বোর্ডের সাথে খেলোয়াড়দের দ্বন্দ চলতেই থাকে। তবে তা হলে কি হবে, পুরনো দিনে জিম্বাবুয়ে দলে ছিল ফ্লাওয়ার ভাইদের মত ব্যাটসম্যান। এছাড়াও সদ্য অবসর নেওয়া হ্যামিল্টন মাসাকাদজাও বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করতে সিদ্ধহস্তই ছিলেন। আর তাই তো, ১১৯২ ছয় নিয়ে জিম্বাবুয়ে আছে নয় নম্বরে!

৮। শ্রীলঙ্কা – ১৬৬৬

ওয়ানডে ক্রিকেটে যে আক্রমণাত্মক শুরুর ধারণা, তার অনেকটাই এসেছে শ্রীলঙ্কার থেকেই। এই আক্রমণাত্মক ধারাটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতেও সনাৎ জয়াসুরিয়ার মত ক্রিকেটারদের অবদান ভোলা যাবেনা কিছুতেই। আর শুধু ওপেনার কেন, মিডল অর্ডার বা লোয়ার মিডল অর্ডারেও শ্রীলঙ্কা মেরে খেলাতে পটু। এখন অব্দি ওয়ানডেতে দলটা ছয় মেরেছে ১৬৬৬ টা ।

৭। দক্ষিণ আফ্রিকা- ১৭৪৫

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে যেমন জাদুকরী সব পেসারের জন্ম দিয়েছে, তেমনই ব্যাটিংয়ে ক্রিকেটে তাদের অবদান মনে রাখার মতই। হাল আমলের ডেভিড মিলার তো নিজের ব্যাটিং সত্ত্বার কারণে ‘কিলার’ বলেই পরিচিতি পেয়েছেন। আর তাই ১৭৪৫ ছয় মেরে দক্ষিণ আফ্রিকা আছে ওয়ানডে ক্রিকেটে ছয় মারার তালিকাতে সাত নম্বরে।

৬। ইংল্যান্ড – ১৮৬৩

২০১৫ বিশ্বকাপের পর ওয়ানডেতে নিজেদের খেলার ধরণটাই বদলে ফেলেছে ইংল্যান্ড। প্রাচীন ভাবধারা বদলে ফেলে ইনিংসের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর চড় হওয়ার নীতি নিয়ে গোটা একটা বিশ্বকাপ অব্দি জিতে ফেলেছে দেশটি। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন অব্দি মোট ১৮৬৩ টা ছয় মেরেছে ইংল্যান্ড ।

৫। নিউজিল্যান্ড – ২২১৫

নিউজিল্যান্ডও বেশ দীর্ঘদিন ধরেই ওয়ানডেতে আক্রমণাত্মক খেলতে পছন্দ করে। একটা সময়ে দলে ছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, আর এখন কনওয়ে গাপটিলেরা মিলে সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ইনিংসের শেষেও বলকে মাঠছাড়া করতে আছেন জিমি নিশামের মত অলরাউন্ডার। মোট ২২১৫ ছয় মেরে নিউজিল্যান্ডের অবস্থান এই তালিকাতে পাঁচ।

৪। অস্ট্রেলিয়া – ২৩২৬

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল নামগুলো শুনলেই বুঝে ফেলার কথা বিশ্ব ক্রিকেটে বলকে সীমানা ছাড়া করতে অস্ট্রেলিয়ানদের প্রভাব ঠিক কতটা। ইনিংসের আদ্যপান্ত অস্ট্রেলিয়ানরা দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রাইক রেট বাড়িয়ে নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। ওয়ানডে ক্রিকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ ছয় হাঁকানো দলটা অস্ট্রেলিয়া।

৩। পাকিস্তান – ২৪২৮

পাকিস্তানের নামের সাথে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ শব্দটা সবসময়ই লেগে থাকে। এই তালিকাতেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ওয়ানডে ক্রিকেটে পাকিস্তান হাঁকিয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ মোট ২৪২৮ টা ছক্কা। অবশ্য সাঈদ আনোয়ারের শুরু করা ধারা অনুসরণ করে এটা খুব একটা অবাক হবারও নয়।

২। ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ২৭১৬

ওয়েস্ট ইন্ডিজের নামের সাথে ‘ছক্কা’ নামটা বেশ ভালভাবেই যায়। ফরম্যাট যেটাই হোক, বলকে সীমানা ছাড়া করতেই বেশি পছন্দ করেন দলের খেলোয়াড়েরা। ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেলের পর এই দলে এভিন লুইসও এখন অগ্রজদের দেখানো পথেই চলছেন। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন অব্দি ওয়ানডে ক্রিকেটে ছয় মেরেছে ২৭১৬ টা।

১। ভারত- ২৭৪২

‘দ্যা মাইটি টিম ইন্ডিয়া’- বীরেন্দর শেবাগ, শচীন টেন্ডুলকার ঘুরে দলটার ব্যাটিং এখন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের হাতে। স্ট্রাইক রেট বাড়িয়ে খেলায় পটু ঋষভ পান্তরাও আছেন  সেই একই ধারাবাহিকতায়। আর এর সুফলও পাচ্ছে ভারত।  ওয়ানডেতে ক্রিকেটে সবচাইতে বেশি ছয় মারা দলটা এখন তাঁরা- সংখ্যাটা ২৭৪২!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link