নগরের নামে বাইশ গজে

উইকসের বাবা এভারটন ক্লাবের ভয়ানক ভক্ত ছিলেন। ফলে নিজের ছেলের নাম রেখেছিলেন ক্লাবের নামে। এই গল্পটা শুনেছিলেন জিম লেকার। তিনি এক গাল হেসে বলেছিলেন, ‘ভাগ্যিস ওনার বাবা ওয়েস্ট ব্রুমউইচ এলবিওনের সমর্থক ছিলেন না!’

নামকরণ নিয়ে এক প্রস্থ হয়ে যাক।

ক্রিকেটারদের নামে ক্রিকেটারদের নামের কথা শুনেছেন। সেটা খুব বিচিত্র নয়। কারণ, ক্রিকেটারদের নামে কেউ সন্তানের নাম রাখতেই পারে। তাই বলে ক্রিকেটারের নাম শহরের নামে!

ক্রিকেটার বাদ দিন, কেউ তার ছেলে-মেয়ের নাম এমনিতেই শহরের নামে রাখে? রাখে। রাখে যে, তার প্রমাণ আমাদের কিছু ক্রিকেটার। যারা এই বিশ্বের নামকরা সব শহরের নাম সাথে নিয়ে জন্মেছেন। আজ সেরকম কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়ে আলাপ করা যাক।

  • হ্যামিলটন মাসাকাদজা

শহরের নামে ক্রিকেটার বললেই নিশ্চয়ই হ্যামিলটনের কথা আগে মনে পড়েছে?

তাই হওয়ার কথা। এই সময়ের সবচেয়ে পরিচিত শহরের নামের ক্রিকেটার হ্যামিলটন। জিম্বাবুয়ের দীর্ঘদিনের এই সৈনিক বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় মানুষ। আর তার নামের প্রথম অংশটা এসেছে নিউজিল্যান্ডের হ্যামিলটন শহরের নাম থেকে।

যদিও হ্যামিলটন নিজে জানেন না যে, তার বাবার নিউজিল্যান্ড বা এই শহরের প্রতি বিশেষ কোনো আকর্ষণ ছিল কি না। এমন কি এই শহরটা যে নিউজিল্যান্ডের হ্যামিলটন, সে নিশ্চয়তাও তিনি দিতে রাজী নন। কারণ, কানাডার অন্টারিওতেও হ্যামিলটন নামে একটা শহর আছে।

তবে এটা নিশ্চিত যে, নামটা তার শহরের নাম থেকেই এসেছেন।

  • ওয়েলিংটন মাসাকাদজা

ওয়েলিংটন হলেন হ্যামিলটনের মেজো ভাই। জিম্বাবুয়ের হয়ে একটি টেস্ট, ১৭ টি ওয়ানডে ও ১৩ টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। বড় ভাইয়ের মতো তার নামেরও উৎস নিউজিল্যান্ড।

নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন শহরের থেকে তার নাম এসেছে। ওয়েলিংটনও জানেন না, কেনো তার নামকরণের জন্য এই শহরকে বেছে নেওয়া হলো। তবে তার কাছে এই শহরটা খুব পছন্দ।

  • সিঙ্গিরাই মাসাকাদজা

এটা একটা মজার আবিষ্কার। হ্যামিলটন, ওয়েলিংটন ও সিঙ্গিরাই; তিন ভাইয়ের সাথেই তাদের নাম নিয়ে আমি আলাপ করেছি। তাদেরও ধারণা ছিল যে, শুধু প্রথম দু’জনের নামের সাথে শহরের মিল আছে। সিঙ্গি মাসাকাদজার সাথে এরকম কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সিঙ্গির পুরো নামটা জানার পর একটু অন্যরকম মনে হল।

তার পুরো নাম: সিঙ্গিরাই উইনস্টন মাসাকাদজা।

এখন এটা নিশ্চিত নয় যে, মাঝের উইনস্টন শব্দটা চার্চিলের নাম থেকে এসেছে, নাকি উইনস্টন-সালেম শহর থেকে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যালিফোর্নিয়ায় উইনস্টন-সালেম নামে একটা জোড়া শহর আছে। এক সময় উইনস্টন আলাদা একটা শহর ছিল। ১৯৮০-এর দশকে এই শহর প্রতিবেশী সালেমের সাথে মিশে যায়।

  • ভূবনেশ্বর কুমার

ভারতের বেশ বিখ্যাত শহর ভূবনেশ্বর। উড়িশ্যার এই রাজধানী শহরটি হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ন। ফলে ভারতীয় এই পেসারের নাম এই ধর্মীয় শহর থেকে আসতে পারে। কিন্তু এটা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।

২১ টেস্ট, ১১৪ ওয়ানডে ও ৪৩ টি-টোয়েন্টি খেলা ভুবনেশ্বরের জন্ম মেরুটে। তার কোনো আত্মীয়স্বজন বা পূর্বপুরুষ ভুবনেশ্বরে থাকতেন; এমন কিছু কখনও শোনা যায়নি।

  • সিডনি বার্নস

সিডনি নামটা ক্রিকেটারদের মধ্যে বা বাস্তব জীবনে খুব অপ্রচলিত নয়। অনেক তারকার নামও আপনি এই শহরের নামে খুঁজে পাবেন। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নিশ্চয়ই সিডনি বার্নস।

ইংল্যান্ডের প্রথম দিকের বোলিং গ্রেট। খুব ছোট, কিন্তু দারুণ আলোচিত ক্যারিয়ার ছিল তার। ২৭ টেস্টে ১৮৯ উইকেট নিয়েছেন। তবে আমরা আজকে তাকে মনে করছি নিউ সাউথ ওয়েলসের এই নামকরা শহরটির নামের জন্য।

  • চার্লস কভেন্ট্রি

দু’টি টেস্ট, ৩৯ ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলা চার্লস কভেন্ট্রিকে এমনিতে মনে রাখার বিশেষ কোনো কারণ নেই। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা সেই ১৯৪ রানের অপরাজিত ইনিংসটার কথা ভোলা একটু কঠিন। আমরা অবশ্য ক্রিকেটীয় পারফরম্যান্সের কারণে কভেন্ট্রিকে মনে রাখছি না।

আমাদের আগ্রহ তার নাম নিয়ে। কভেন্ট্রির নামের শেষ অংশটা একটা শহরের নামে। এই শহরটা হলো ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ড অঞ্চলের একটা শহর। যথারীতি অনেক খুঁজেও চার্লস কভেন্ট্রির সাথে এই কভেন্ট্রি শহরের কোনো সম্পর্ক বের করা গেল না।

  • জোয়েল প্যারিস

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দু’টি ওয়ানডে খেলেছেন জোয়েল। খেলোয়াড়ী পরিবারের ছেলে। দুনিয়ার অনেক শহরের সাথেই তার সম্পর্ক আছে। কিন্তু প্যারিসের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।

জোলের মা-বাবা বা পূর্বপুরুষ কেউ ফ্রান্স থেকে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় আসেননি। তারপরও নিশ্চয়ই দুনিয়ার অন্যতম সুন্দর এই শহরটার প্রতি এই পরিবারের একটা আত্মিক সম্পর্ক আছে। নইলে নামের শেষে শহরটা আর এলো কেনো!

  • ওয়াশিংটন সুন্দর

সুন্দরের নাম নিয়ে সুন্দর একটা গল্প আছে। প্রথমেই বলে নেওয়া যাক, আমেরিকার ওয়াশিংটন শহর থেকে এই নাম আসেনি। এসেছে পি ডি ওয়াশিংটন নামে এক ভদ্রলোকের নাম থেকে।

সেটাই গল্প।

সুন্দররা বেশ দরিদ্র ছিলেন। ছোট বেলায় ভাত আনতে নুন ফুরিয়ে যাওয়া পরিবার। এই পরিবারটি সহায়তা করতেন স্থানীয় এক ভদ্রলোক পি ডি ওয়াশিংটন। তিনি প্রায়ই সুন্দরের বাবাকে বলতেন যে, ‘আমার ছেলে হলে ওয়াশিংটন জুনিয়র নাম রাখতাম।’ ১৯৯৯ সালে এই ওয়াশিংটন মারা যাওয়ার বছরেই জন্ম সুন্দরের। তখন বাবা ছেলের নাম রাখলেন ওই উপকারী ভদ্রলোকের নামে।

  • এভারটন উইকস

ওয়েস্ট ইন্ডিজের নমস্য ক্রিকেটারদের একজন। এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির নামের শুরুতে এভারটন শহরটার নাম আছে। তবে শহরটাকে নামকরণের জন্য উইকসের বাবা বেছে নেননি। তার পছন্দ ছিল এভারটন এফসি।

উইকসের বাবা এভারটন ক্লাবের ভয়ানক ভক্ত ছিলেন। ফলে নিজের ছেলের নাম রেখেছিলেন ক্লাবের নামে। এই গল্পটা শুনেছিলেন জিম লেকার। তিনি এক গাল হেসে বলেছিলেন, ‘ভাগ্যিস ওনার বাবা ওয়েস্ট ব্রুমউইচ এলবিওনের সমর্থক ছিলেন না!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link