ভুল চিকিৎসার ফাঁদ, জীবনযুদ্ধে লড়ছেন আয়ারল্যান্ডের সিমি সিং

ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার এই মুহূর্তে আছেন ভারতের গুরুগ্রামের এক হাসপাতালে। তাঁর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে হবে। ভুল চিকিৎসার ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।

সিমি সিং আইরিশ ক্রিকেটের কাল্ট ফিগার। আট নম্বরে নেমে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি তিনি বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজের আগেই করেছেন। একই ফরম্যাটে তাঁর ১০ রানে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তিও আছে।

একই ওয়ানডেতে হাফ-সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পাওয়া গুটিকয়েক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের একজন তিনি। সেই সিমি সিং এখন দাঁড়িয়ে আছেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার এই মুহূর্তে আছেন ভারতের গুরুগ্রামের এক হাসপাতালে। তাঁর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে হবে। ভুল চিকিৎসার ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।

পুরো নাম সিমরানজিৎ সিং। আয়ারল্যান্ডের জন্য তিনি সিমি। জন্ম পাঞ্জাবের মোহালিতে। পাঞ্জাব অনূর্ধ্ব-১৪ ও ১৭ দলে খেলেছেন, তবে জায়গা হয়নি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। ২০০৫ সালে হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়তে পাড়ি জমান আয়ারল্যান্ডে। ক্রিকেটও তখন অনুসরণ করে চলে যায় আয়ারল্যান্ডে। ২০০৬ সালে তিনি যোগ দেন ডাবলিনের ম্যালাহাইড ক্রিকেট ক্লাবে।

২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ডের জার্সি ওঠে তাঁর শরীরে। সর্বশেষ আয়ারল্যান্ড দলে খেলেন ২০২২ সালে। ২০২০ সালে চন্ড্রিগড়ে তাঁর বিয়ে হয় আগামদীপ কৌরের সাথে। স্ত্রী তাঁর লিভারের একটি অংশ স্বামীকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সিমির রক্তের গ্রুপ এবি পজিটিভ। ডাক্তারদের দাবি, সিমি ইউনিভার্সাল রিসিভার। ফলে, ম্যাচিংয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তাই, তাঁর স্ত্রীর লিভারের অংশ বিশেষ ডোনেট করার কোনো জটিলতা থাকার কথা নয়।

গেল তিন সেপ্টেম্বর সিমিকে খ্যাতনামা মেডান্টা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিমির শ্বশুর পারভিন্দর সিং জানান, বারবার অদ্ভুত রকমের জ্বর আসত সিমির। আয়ারল্যান্ডে ডাক্তারী পরীক্ষা করে কোনো ফলাফল আসেনি। ফলে, তখন ওষুধ শুরু করা হয়নি।

সেখানেই দেরি হয়ে  যায়, শরীর আরও খারাপ করে। পরে ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নেয় সিমির পরিবার। জুনের শেষে মোহালি আসেন সিমি। ভারতের ডাক্তাররা টিউবারকিলোসিসের (টিবি) সন্দেহ করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া শুরু করেন।

কিন্তু, জ্বর যাচ্ছিল না। সেকেন্ড ওপিনিয়ন নিতে গেলে জানা যায়, টিবি হয়নি। কিন্তু, অ্যান্টিবায়োটিকের ছয় সপ্তাহের কোর্স শুরু হয়ে গেছে। ডাক্তাররা বলেন, ওষুধের কোর্স শেষ করতে হবে। টিবির ওষুধের সাথে স্টেরয়েডও দেয়া হত তাকে। জ্বর আরও বাড়ে, ধরা পড়ে অ্যাকুইট জন্ডিস। আগস্টের শেষ স্বপ্তাহে সিমিকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

শরীর আরও খারাপ হওয়াটা কোনো ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছিল না। চন্ড্রিগরের পিজিআই থেকে তাঁকে মেডান্টায় নিয়ে আসা হয়। লিভার ফেইলিওর ধরা পড়ে। লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হয়ে গেলে আবারও স্বাভাবিক জীবনে চলে আসবেন বলে আশা করছে ডাক্তাররা।

৩৭ বছর বয়সী সিমি আইরিশদের হয়ে ৩৫ টি ওয়ানডে, ৫৩ টি টেস্ট খেলেছেন। হয়তো আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হবে না। কিন্তু, স্বাভাবিক একটা জীবনের প্রত্যাশা তো তিনি করতেই পারেন।

Share via
Copy link