খেলোয়াড়দের পেশাদার ক্যারিয়ারটা খুবই অল্পদিনের। সর্বনিম্ন ১৮-২০ বছর বয়স থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩৫-৪০ বছর অবধি খেলতে পারেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা সাধারণত আরো ছোট হয়। ১০ থেকে ১৫ বছর জাতীয় দলকে সার্ভিস দিতে পারলেই একজন ক্রিকেটারকে ‘গ্রেট’ বলে ফেলা যায়।
তবে, সবাই আসলে এভাবে ভাবেন না। কিছু কিছু ক্রিকেটার এমনও আছেন যারা সামর্থ্য থাকার পরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা চালিয়ে যাননি। আগাম বিদায় জানিয়েছেন আর সেটা বয়স ৩০ হওয়ার আগেই। এদের একেকজনের একেক কারণ। কারো ভাগ্য সহায় ছিল না, কেউ বা খেলাটির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন, কেউ বা পরিস্থিতির শিকার।
- ক্রেইগ কিসওয়েটার (ইংল্যান্ড)
২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনাল ম্যাচের নায়ক ছিলেন ইংল্যান্ডের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। যদিও কিসওয়েটারের জন্ম হয়েছিল দক্ষিন আফ্রিকায়। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও খেলেন তিনি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক হয় ইংল্যান্ডের হয়ে। অসাধারণ ভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন তিনি।
২০১৪ সালের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে খেলতে নেমে মুখে প্রবলভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন সামারসেট ও ইংল্যান্ড জাতীয় দলের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ম্যাচে পেসার ডেভিড উইলির একটি শর্ট বল হেলমেটের গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ঢুকে সরাসরি তাঁর নাক ও চোখে আঘাত হানে। প্রথমদিকে কিসওয়েটারের এই চোটটাকে খানিকটা হালকা করে দেখা হয়েছিল। কিন্তু এতে তাঁর অক্ষিকোটর ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে পরবর্তীতে জানা যায়। ২৭ বছর বয়সে অবসর নেন।
- টাটেন্ডা টাইবু (জিম্বাবুয়ে)
মাত্র ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পন করেন জিম্বাবুয়ের এই ক্রিকেটার, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের ছেড়ে যাওয়া উইকেটের পেছনের দায়িত্বটা খুব ভাল ভাবেই সামলে নিয়েছিলেন। সম্ভাবনাময়ী এই ক্রিকেটার জিম্বাবুয়ের হয়ে ২৮ টি টেস্ট, ১৫০ টি ওয়ানডে ও ১৭ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই তিনি জিম্বাবুয়ের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন।
২০১২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই তিনি হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দেন। শোনা যায় জিম্বাবুয়ে সরকারের সাথে বাক-বিতণ্ডা হয়েছিল এই ক্রিকেটারের। ফলে নানা কারণে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় জানান। এর আগে তিনি আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও খেলেন। এখন তিনি মন দিয়েছেন কোচিংয়ে।
- বাসিত আলী (পাকিস্তান)
বাসিত আলীকে ক্যারিয়ারের শুরু দিকে বিবেচনা করা হত জাভেদ মিয়াঁদাদের সাথে। তিনি পয়েন্ট এবং কভার এলাকায় দিয়ে বেশ দুর্দান্ত খেলতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে জরিমানাসহ দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর আরো তিন বছর জাতীয় দলের হয়ে বেশ ভালো পারফর্ম করেছেন তিনি।
তিনি পাকিস্তান দলের হয়ে ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ বারের মত জাতীয় দলে দেখা গিয়েছিলো মাত্র ২৬ বছর বয়সে। পাকিস্তানের হয়ে তিনি খেলেছিলেন ১৯ টেস্ট এবং ৫০ ওয়ানডে। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করার পরও আর জাতীয় দলে ফেরা হয়নি বাসিত আলীর। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই তিনি অবসর নিয়ে ফেলেন।
- জেমস টেলর (ইংল্যান্ড)
২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন জেমস টেলর। তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ওপর ভর করেই ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় লাভ করে ইংল্যান্ড।
দুর্ভাগ্যক্রমে একই বছর দুরারোধ্য হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। রোগটির নাম অ্যারিথমোগেনিক রাইট ভেন্ট্রিকুলার কার্ডিওমায়োপ্যাথি (এআরভিসি)। তখন চিকিৎসকের পরামর্শে খেলা থেকে চিরতরে সরে দাঁড়ান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
সাত টেস্টে ৩১২ রান ও ২৭ ওয়ানডেতে ৮৮৭ রান নিয়ে মাত্র ২৬ বছর বয়সেই অবসর নেন তিনি। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) নির্বাচক প্যানেলেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
- রবি হার্ট (নিউজিল্যান্ড)
অ্যাডাম প্যারোরের অবসরের পর নিউজিল্যান্ডের উইকেটরক্ষক হিসেবে এক নম্বর পছন্দ ছিলেন রবি হার্ট। তবে, ২০০৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। ১১ টেস্টে ২৬০ রান করেন। এছাড়া খেলেন দুটি ওয়ানডে।
ক্রিকেট ছাড়াও তিনি ছিলেন আইনজীবী। চেয়েছিলেন নিজের আলাদা একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে। সেজন্যই আগাম ক্রিকেট মাঠ থেকে বিদায় নিয়ে ফেলেন।
- আফতাব আহমেদ (বাংলাদেশ)
অমিত সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে এসেছিলেন তিনি। বিশেষ করে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁর ভয়ডরহীন ব্যাটিং বেশ আলোচিত হয়। খুব অল্প বয়সে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা আফতাব আহমেদ বাংলাদেশের হয়ে ১৬ টেস্ট, ৮৫ টি ওয়ানডে ও ১১ টি টি-টোয়েন্টি খেলে আড়াই হাজারের ওপর রান করেন।
তিনি অবসর নেন ২০১৪ সালের আগস্টে। তখনও নিজের ২৯ তম জন্মদিন থেকে কয়েক মাস দূরে ছিলেন। এখন তাঁর সতীর্থদের অনেকেই খেলে গেলেও তিনি মন দিয়েছেন কোচিংয়ে।
- জাফর আনসারি (ইংল্যান্ড)
২০১৬ সালে বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট অভিষেক। ক্যামব্রিজের ছাত্র। খেলাধুলা আর পড়াশোনাটা একসাথেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন সারের এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। কিন্তু, তিনটি টেস্ট খেলার পরই বুঝে গেলেন এটা তাঁর জীবন নয়।
২০১৬ তে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা জাফর থামলেন ২০১৭ সালেই। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৫ বছর। ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন। কারণ, আইনী পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান তিনি।