ক্রিকেটার হোক কিংবা অন্য যে কেউ – দূর্ঘটনা যে কারো জীবনে ঘটতে পারে যেকোনো সময়। তবে, হামলা তো আর দুর্ঘটনা নয়। ক্রিকেটারদের ওপর সশস্ত্র হামলাও হয়েছে। তাতে, কেউ প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেও ফিরেছেন। গুলি খেয়েও জীবনযুদ্ধে লড়াই করেছেন কয়েকজন। কেউবা আবার মূত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে খেলেছেন ক্যারিয়ারের বাকি সময়।
হামলার শিকার হওয়া তেমনই কিছু ক্রিকেটারের কথা জানবো এবার। সেখানে থেকে ফিরে কেউ কেউ আবারও ক্রিকেট খেলতে পেরেছেন, কেউ বা পারেননি।
- শ্রী রঞ্জিতসিংজি
ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম দিকের সেরা তারকা ক্রিকেটারদের একজন হলেন রাজ পরিবারের ছেলে রঞ্জিতসিংজি। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে যিনি প্রায় ২৫ হাজার রানের মালিক! ৫৬ গড়ের সাথে আছে ৭২ সেঞ্চুরি ও ১০৯ ফিফটি।
অভিষেক টেস্টেই করেছিলেন সেঞ্চুরির কীর্তি! ইংল্যান্ডের হয়ে ১৫ টেস্টে প্রায় ৪৫ গড়ে ২ সেঞ্চুরিতে আছে প্রায় ১ হাজার রান। একবার ইয়র্কশায়ারে শিকাড়ে গিয়েছিলেন, দূর্ঘটনাবশত গুলি চোখে এসে আঘাত হানে তাঁর। এরপর চেষ্টা করলেও ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আর ফিরতে পারেননি সাবেক এই গ্রেট!
- নরম্যান রিড (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার নরম্যান রিড প্রোটিয়াদের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খেলেছেন মাত্র ১ টেস্ট! এমনকি মাত্র ২ বছরের ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৩ টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ। যার মাঝে এক ফিফটিতে করেছেন প্রায় ৪০০ রান ও শিকার করেছেন ২০ উইকেট।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা ওই এক টেস্টে করেছেন ১৭ রান ও বল হাতে শিকার করেছেন ২ উইকেট। মানসিক রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর বন্দুকের গুলিতে মারা যান রিড! এমনকি তাঁকে মারার পর রিডের স্ত্রীও আত্মহত্যা করেন!
- স্ট্যানলি জ্যাকসন (ইংল্যান্ড)
মিডল অর্ডারে ইংলিশদের জন্য স্ট্যানলি জ্যাকসন ছিলেন সেরাদের একজন। প্রায় ৩৪ গড়ে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে করেছেন প্রায় ১৬ হাজার রান। বল হাতেও ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে শিকার করেছেন ৭৭৪ উইকেট! আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২০ টেস্টে ১৪১৫ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ২৪ উইকেট।
১৯০৫ অ্যাশেজে ইংলিশদের নেতৃত্বও দেন তিনি। ব্রিটিশ এই সংসদ সদস্য ঐতিহ্যবাহী মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৩২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যান। অনুষ্ঠানে জ্যাকসনকে উদ্দেশ্যে করে পাঁচ বার গুলি চালান বিনা দাশ নামের বিপ্লবী। তবে, সৌভাগ্যক্রমে পাঁচ বুলেটই তাঁর গায়ে লাগেনি।
- অ্যান্ড্রু হল (দক্ষিণ আফ্রিকা)
একটু বৈচিত্রময় বোলিং অ্যাকশন আর ব্যাট হাতেও বেশ দারুণ ছিলেন সাবেক প্রোটিয়া অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু হল। ২১ টেস্ট, ৮৮ ওয়ানডে ও দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন হল। দুইবার তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন! এটিএম বুথের বাইরে ১৯৯৮ সালে একবার গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
তবে, সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরে আসেন হল। চার বছর বাদে ২০০২ সালে তার মাথায় বন্দুক ধরা অবস্থায় ৪৫ মিনিট গাড়ি ড্রাইভ করেন তিনি! পরবর্তীতে হল এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘গাড়ি ছিনতাই করার উদ্দেশ্যেই তারা এমন করেছিলো। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে শুধু কথামতো ড্রাইভ করতে বলছিলো তারা।’
- জেফ্রি স্টোলমেয়ার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা ওপেনার হিসেবে পরিচিত ছিলেন জেফ্রি স্টোলমেয়ার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৩২ টেস্টে ৪২ গড়ে ২১৫৯ রান করেছেন তিনি। বল হাতেও শিকার করেছেন ১৩ উইকেট।
একবার পোর্ট অব স্পেনে নিজ বাসভবনে হামলার শিকার হন স্টোলমেয়ার। তার উপর পাঁচবার গুলি করা হয়! তাঁর ছেলে এবং স্ত্রীও আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এরপর হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৬৮ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
- থিলান সামারাবিরা (শ্রীলঙ্কা)
মিডল অর্ডারে লঙ্কানদের ‘ক্রাইসিস ম্যান’ হিসেবে পরিচিত থিলান সামারাবিরার ক্যারিয়ারটা শুরু হয়েছিলো একজন স্পিনার হিসেবে। সেখান থেকে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি! এরপর জাতীয় দলের মিডল অর্ডারে ক্রাইসিস ম্যান হয়ে উঠা। দলের বিপদে সদা ব্যাট হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন ক্রিজে।
২০০৯ সালে পাকিস্তান সফরে লাহোরে জঙ্গি হামলার মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা দল। সেখানে নিরাপত্তাকর্মী সহ ৮ জন মারা যান। আর গোলাগুলির মাঝে একটি ১২ ইঞ্চির বুলেট আঘাত হানে সামারাবিরার হাঁটুতে। অবশ্য মাস চারেক পর ঠিক হয়ে আবারো মাঠে ফিরেন তিনি।
- ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান)
ক্রিকেট বিশ্বের সর্বকালের সেরা বোলারদের তালিকা করলে সবার উপরের কাতারে নাম থাকবে সাবেক পাকিস্তানি কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম। একবার এক সড়ক আক্রমণে আকরামের গাড়িতে আগুন লেগে যায়। এবং কোনোরকমে প্রানে বাঁচেন ওয়াসিম আকরাম। সেদিন ওয়াসিম আকরামের গালি উদ্দেশ্য করে গুলি করা হয়। ঘটনায় ওয়াসিম আকরামের কোনো ক্ষতি হয়নি।
১০৪ টেস্টে নিয়েছেন ৪১৪ উইকেট ও ৩৫৬ ম্যাচে শিকার করেছেন ৫০২ উইকেট। ব্যাট হাতে টেস্টে প্রায় ৩ হাজারের কাছাকাছি ও ওয়ানডেতে করেছেন ৩৭১৭ রান!