ব্রাজিলের সংকট, কারণ কি হতে পারে?

ব্রাজিলের জন্য বিশ্বকাপ জিততে না পারাটাই একটা ব্যর্থতা। কিন্তু সাম্প্রতিক দুরবস্থা এর চাইতেও বেশি কিছু। ২০১৩-তে কনফেডারেশন কাপ ও ২০১৯-এ কোপা আমেরিকা জিতলেও এই দুরবস্থার শুরু ২০১০ বিশ্বকাপের পর থেকে।

ব্রাজিলের জন্য বিশ্বকাপ জিততে না পারাটাই একটা ব্যর্থতা। কিন্তু সাম্প্রতিক দুরবস্থা এর চাইতেও বেশি কিছু। ২০১৩-তে কনফেডারেশন কাপ ও ২০১৯-এ কোপা আমেরিকা জিতলেও এই দুরবস্থার শুরু ২০১০ বিশ্বকাপের পর থেকে। এর কিছু কারণও আছে।

  • ইউরোপে পাড়ি জমানো

ব্রাজিল শেষবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ২০০২ সালে যখন দলের প্রায় ৫০% খেলোয়াড় ব্রাজিলের লিগে খেলতো। ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপজয়ী দলের অল্প কয়েকজনই কেবল ইউরোপে খেলত। বর্তমান দলের ২/১ জন বাদে বাকি সবাই দেশের বাইরে খেলে।

একেকজন একেক দলে খেলার ফলে বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি ও ফর্মেশনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তারা খুব অল্প সময়ের জন্য জাতীয় দলে একসাথে থাকে। এদিকে ব্রাজিলের নিজস্ব স্টাইল এমন যে এখানে খেলোয়াড়দের মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক খুবই জরুরী। কারণ ব্রাজিল ইউরোপের মতো ছক বাঁধা খেলা খেলে না।

  • প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের হারিয়ে যাওয়া

কাকা-রোনালদিনহোরা অবসরে যাওয়ার পরপর নেইমার, কুতিনহো, অস্কাররা দলে এসেছিল। এরা প্রত্যেকেই ট্যালেন্টেড ছিল। কিন্তু ইউরোপের এক ক্লাব থেকে আরেক ক্লাবে ঘুরতে ঘুরতে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পেরে নেইমার ছাড়া বাকিরা হারিয়ে গেছে।

  • মানসম্পন্ন নাম্বার নাইন নেই

রোমারিও-বেবেতো যখন ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ জিতেছিল সেই দলেই ছিল ১৮ বছর বয়সী রোনালদো নাজারিও। রোনালদো দলে থাকা অবস্থাতেই দলে এসেছিল আদ্রিয়ানো, যাকে পরবর্তী রোনালদো বলা হচ্ছিল। কিন্তু ইনজুরির কারণে সে হারিয়ে গেল। এরপর যারা এসেছে তাদের রোমারিও-রোনালদোর ৫০% ট্যালেন্টও ছিল না।

  • কোয়ালিটি ফুলব্যাকের অভাব

সেই ১৯৭০ সাল থেকে ব্রাজিলের প্রধান একটি অস্ত্র ছিল তাদের ফুলব্যাক। কার্লোস আলবার্তো, লিয়ান্দ্রো, ব্র্যাংকো, লিওনার্দো, কার্লোস, কাফু, মাইকন, দানি আলভেস ও সর্বশেষ মার্সেলো। এরপর হারিয়ে গেছে সেই ঐতিহ্য।

  • বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষুধা

সবকিছুর পরও বিশ্বকাপ জিততে যা লাগে তা হলো জয়ের ক্ষুধা। কাকা-রোনালদিনহো খুব অল্প বয়সে বিশ্বকাপ জিতে ফেলায় তাদের সবকিছু পাওয়া হয়ে গিয়েছিল। অথচ তারা ২০১০ পর্যন্ত, এমনকি চেষ্টা করলে ২০১৪ পর্যন্ত তাদের ফর্ম ধরে রাখতে পারত। অন্তত দল তাদের অভিজ্ঞতাটুকু কাজে লাগাতে পারত। কিন্তু তাদের সেই স্পৃহা ছিল না।

  • পরিকল্পনা ও কোচ

ফুটবল খেলা দিনে দিনে পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্রাজিল নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে কিভাবে বিশ্বের দরবারে হাজির হবে তার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার। নিজেদের স্বকীয়তা বাদ না দিয়েও কিভাবে সাফল্য পাওয়া যায় তা নিয়ে ব্যাপক ভাবনা-চিন্তার দরকার ছিল যা ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশন করেছে বলে মনে হয় না।

আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতল ৩৬ বছর পর। জার্মানি ১৯৯০-এর ২৪ বছর পর ২০১৪-তে বিশ্বকাপ জিতেছে। ইতালি ১৯৩৮-এর পর জিতেছে ১৯৮২-তে (৪৪ বছর)। সুতরাং, ব্রাজিলও নিজস্ব ছন্দে ফিরবে। তবে এ কথা নিশ্চিত যে বিদেশ থেকে কোন কোচ এসে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে দিতে পারবে না। সমস্যাটা শুধু কোচের সমস্যাও নয়। ব্রাজিলের সমস্যা ব্রাজিলকে তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে সমাধান করতে হবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...