বিশ্বজুড়ে বাড়ছে লম্বা ব্যাটিং লাইন আপের গুরত্ব। প্রতিটি দলই চায় তাঁদের ব্যাটিং অর্ডারটা লম্বা হোক, স্পেশালিস্টদের বদলে দলে প্রাধান্য পাচ্ছেন অলরাউন্ডাররা। এবারের আইপিএলেও দেখা গেছে একই দৃশ্য, লম্বা ব্যাটিং অর্ডার থাকা দলগুলো যেন বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে বাকিদের তুলনায়।
এবারের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংস বনাম রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর মধ্যকার ম্যাচের কথাই ধরুন না। ব্যাঙ্গালুরুর চেন্নাস্বামী স্টেডিয়াম বরাবরই রানপ্রসবা সে কথা কারোরই অজানা নয়। শুরুতে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই তাই শুরু থেকেই ছিল মারমুখী, একপ্রান্তে উইকেট হারালেও রানের গতিটা কমতে দেয়নি মোটেও।
ব্যাটসম্যানরা ঝুঁকি নিয়েছেন প্রতিনিয়ত, প্রায় প্রতি ওভারের বের করে নিয়েছেন একাধিক বাউন্ডারি। ডেভন কনওয়ে, আজিংকা রাহানে কিংবা শিভাম দুবে যিনিই নেমেছেন তিনিই বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছেন। উইকেট বাঁচানোর চিন্তা না করে বরং মনোযোগ দিয়েছে দ্রুত রান তোলায়।
মাঝের ওভারগুলোতে ব্যাঙ্গালুরুর স্পিনারদের উপর দিয়ে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছেন কনওয়ে এবং দুবে। এছাড়া সিরাজ বাদে অন্য কোনো পেসারও তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি।
১৩ ওভার শেষে দুই উইকেট হারিয়ে ১৩২ রান তোলা চেন্নাই যেন আরো রুদ্রমূর্তি ধারণ করে শেষের সাত ওভারে। কেননা তাঁরা জানতো তাঁদের লম্বা ব্যাটিং লাইন আপে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে যে কেউ। সেই সুবাদেই কিনা ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করেননি কোনো তারকা।
চেন্নাইয়ের ব্যাটারদের বাউন্ডারি হাঁকানোর হারটাও ঈর্ষণীয়। রাহানে, দুবে, রাইডু, মঈন আলীররা রাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন যথাক্রমে প্রতি ৪, ৩.৯, ৩ এবং ৪.৫ বলে।
অন্যদিকে, ব্যাঙ্গালুরুর তিন ব্যাটিং স্তম্ভ বিরাট কোহলি, ফাফ ডু প্লেসিস এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন যথাক্রমে ৫.৫,৪.৬ এবং ৩.২ বলে। দুই দলের বাউন্ডারি হাঁকানোর বিসাদৃশ্যই বলে দেয় নির্ভার ব্যাটিংয়ের সুবিধা।
দুই দলের ইনিংসেই বড় ইনিংস কিংবা ঝড়ো ব্যাটিং করেছেন বেশ কয়েকজন তারকা। কিন্তু চেন্নাইয়ের তারকা ডেভন কনওয়ের মতে, তাঁদেরকে এগিয়ে দিয়েছে দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা।
তিনি বলেন, ‘বড় রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে নেমে আমরা সবাই চেষ্টা করেছি দুইশোর বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করতে। আমি হয়তো পারিনি, কিন্তু বাকিরা সবাই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে। আমার ধারণা আমরা লড়াকু এক সংগ্রহ ছুঁড়ে দিতে পেরেছি। এই ধরনের উইকেটে আসলে আপনাকে এভাবেই ব্যাট করতে হবে। টিকে থাকার চাইতে বরং দ্রুত রান তোলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
চেন্নাই এবং ব্যাঙ্গালুরুর মাঝে মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে এই মানসিকতাই। রজত পাতিদারের অনুপস্থিতিতে ব্যাঙ্গালুরুর টপ অর্ডারের ব্যাটাররা জানতেন নিচের দিকে নেমে ঝড় তোলার মতো দায়িত্বশীল ব্যাটসম্যান তাঁদের নেই। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা হয়তো শেষদিকে নেমে বাউন্ডারি হাঁকাতে জানেন, কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় নেহায়েত কম।
অন্যদিকে, চেন্নাই বরাবরই লম্বা ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। অতীতেও ডোয়াইন ব্রাভো কিংবা ইমরান তাহিররা শেষদিকে নেমে ঝড়ো ক্যামিওতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতেন। এবারেও নিজেদের অনভিজ্ঞ বোলিং লাইন আপের দুর্বলতা ঘুচাতেই কিনা পুরনো পন্থা বেছে নিয়েছে ধোনির দল।
কেননা তিনি জানেন তুলনামূলক কম সংগ্রহ ডিফেন্ড করা এই বোলিং লাইন আপ নেওয়া কঠিন। তাই বড় সংগ্রহ এনে দেয়ার দায়িত্বটা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন লম্বা ব্যাটিং অর্ডারের উপর।
২২৬ রানের লক্ষ্য দেয়া সত্ত্বেও মাত্র আট রানে ম্যাচ জিতেছে চেন্নাই। শেষ চার ওভারে লম্বা ব্যাটিং অর্ডারের সুবিধা নিয়ে ৫৪ রান তুলেছে তাঁরা। অন্যদিকে, এই ডেথ ওভারেই মার খেয়ে গেছে ব্যাঙ্গালুরু। নইলে একটু এদিক ওদিক হলেই ম্যাচে জয়ী দলের নামটা বদলে যেত।