যে স্টেইন ডিলিট হবে না

ওডিআই-তে পরাজিত দলের হয়ে ইনিংস সেরা পারফর্মেন্স তারই। সে ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। অবসরের সময়ে তার ঝুলিতে ছিল ৬৯৯টি আন্তর্জাতিক উইকেট। মাত্র একটি উইকেটের জন্য ৭০০ উইকেটের মাইলস্টোন অধরা থেকে গেছে তার, ‘সব পেলে নষ্ট জীবন’-এর কথায় সুরে।

ভারত ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জেতার ২ দিন পরে ফালাবোরা-তে জন্মেছিলেন ডেল স্টেইন। প্রিটোরিয়াতে গিয়ে ক্রিকেটের প্রেমে ডোবেন, তার আগে স্কেটবোর্ডিংই ছিল তার প্যাশন। তখন কেউ জানত না, তার বোলিং অ্যাকশন আর সংহারক বোলিংয়ের জন্য বিশ্ব একদিন ‘কটা’ চোখের ভদ্রলোককে সেলাম করবে!

মাত্র সাতটা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেই ২১ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় তার। তারপর প্রায় দেড় দশক বিশ্বের তাবড় ব্যাটসম্যানরা তার বলে বিশেষ “ব্যতিব্যস্ত” থাকতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং সাম্রাজ্যের টেকনিকাল বিশ্লেষণের সময়ে অনেকে তাকে অ্যালান ডোনাল্ড-এরও উপরে রাখেন। দু’টো বিশ্বকাপ খেলেছিলেন, ২০১১ আর ২০১৫তে। দুবারই নিউজিল্যান্ড ছিটকে দিয়েছিল তার দলকে, যথাক্রমে কোয়ার্টার ফাইনাল আর সেমিফাইনালে। ১৪টি বিশ্বকাপ ম্যাচে ২৩টি উইকেট নিয়েছেন তিনি, ২৩.৩৯ গড়ে। ২০১৯ বিশ্বকাপে তিনি টিমে থেকেও খেলতে পারেন নি, কাঁধের চোটের জন্য দেশে ফিরে যেতে হয়েছিল বলে।

সাদা পোশাকে আর লাল বলেই ছিল যার আসল চাঁদমারি, সেই ডেল স্টেইন সবরকম ফরমাটের ক্রিকেট মঞ্চের উপর পর্দা ফেলে দিয়েছিলেন, ৩১ আগস্ট ২০২১ তারিখে। ২০১৯য়ে টেস্ট খেলা ছেড়ে দিয়েছিলেন, আর ২০২১য়ের আগস্ট মাসের শেষ লগ্নে অবসর নিয়েছিলেন যাবতীয় ক্রিকেটীয় যুদ্ধ থেকে। কেরিয়ারের বেশির ভাগ সময় দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ডেল স্টেন।
কিন্তু তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের মহাফেজখানায় ও প্রতিপক্ষর মননে রেখে গেলেন এমন কিছু Stain, যা কোনদিন Del(ete) করা যাবেনা।

১৫ বছরে দেশের হয়ে টেস্টে ৯৩ ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ৪৩৯টি উইকেট। তার সেরা পারফরম্যান্স ৭/৫১, ভারতের বিরুদ্ধে নাগপুরে, ২০১০ সালে।। ২৬ বার ৫ উইকেট ও পাঁচ বার ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব আছে তাঁর। শন পোলকের পর দ্বিতীয় দক্ষিণ আফ্রিকার বোলার হিসেবে টেস্টে ৪০০র বেশি উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে তার, যা স্বয়ং অ্যালান ডোনাল্ডেরও অধরা থেকে গেছে। টেস্টে স্ট্রাইক রেটের (৪২.৩) মাপকাঠিতে সেরা তিনিই। অর্থাৎ প্রায় প্রতি সাত ওভারে একটি করে উইকেট নিয়েছেন তিনি।ব্যাট হাতে টেস্টে তার সর্বোচ্চ স্কোর ৭৬। টেস্টে ১৩.৬ গড়ে করেছেন ১২৫১ রান।

ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম, মাত্র ১৬,৬৩৪ টি বল করে টেস্টে ৪০০ উইকেটের মালিক হয়েছিলেন স্টেইন।একমাত্র ইংল্যান্ড বাদে সব টিমের বিপক্ষে তার বোলিং গড় ৩০-এর কম। ২০০৭ এর অক্টোবর থেকে ২০১৫ এর জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪ টি বিদেশ সিরিজে অপরাজিত ছিল, যার মধ্যে সাতটি সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হয়েছিলেন স্টেইন।

তৃতীয় দ্রুততম বোলার হিসেবে টেস্টে ৪০০ উইকেট (৮০টি টেস্টে)। সামনে শুধু শ্রীলঙ্কার মুথাইয়া মুরলীধরণ (৭২টি টেস্টে) ও ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৭৭ টি টেস্ট)। টেস্টে যেসব বোলাররা ৪০০+ উইকেট নিয়েছেন, স্টেইন তাদের মধ্যে গড়ের হিসেবে তৃতীয় (২২.৪৮)। সামনে কেবল স্যার হ্যাডলি, কার্টলি আমব্রোজ ও গ্লেন ম্যাকগ্রা।


পাঁচ উইকেট নেওয়ার সংখ্যা ও মোট টেস্ট সংখ্যার আনুপাতিক হারে (০.২৮) দ্বিতীয়। সামনে শুধু স্যার রিচার্ড হ্যাডলি (০.৪২)। ইনিংস পিছু উইকেট নিয়েছেন ২.৫৭টি, যা এই মুহূর্তে বিশ্বে তৃতীয়। এ ব্যাপারে তার আগে আছেন শুধু রিচার্ড হ্যাডলি ও ডেনিস লিলি।

এশিয়ার মাটিতে সবচেয়ে বেশি উইকেট (২২ টেস্টে ৯২ উইকেট) নেওয়ার রেকর্ড স্টেনেরই। গড় ছিল ২৪য়ের সামান্য বেশি। তিনি ২০১০ সালের জানুয়ারিতে আইসিসি টেস্ট মাপকাঠিতে বোলারদের শীর্ষস্থানে উঠেছিলেন। প্রায় সাত বছর ওই মাপকাঠিতে এক নম্বর বোলার ছিলেন তিনি।

টেস্টের পাশাপাশি ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টিতেও বল হাতে সফল ছিলেন তিনি। ১৪ বছরে ওডিআইতে ১২৫ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১৯৬ টি উইকেট, সেরা ৬/৩৯। ওডিআই ম্যাচে তিনি ৩ বার ৫ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার নজির দেখিয়েছেন। ওডিআইতে ব্যাট হাতে তার সর্বোচ্চ স্কোর ৬০। ওডিআইতে প্রায় ১০ এর কাছাকাছি গড়ে করেছেন ৩৬৫ রান।১৩ বছরে টি২০ তে ৪৭ ম্যাচ খেলে তার ঝুলিতে রয়েছে ৬৪ উইকেট, সেরা ৪/৯।

ওডিআই-তে পরাজিত দলের হয়ে ইনিংস সেরা পারফর্মেন্স তারই। সে ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। অবসরের সময়ে তার ঝুলিতে ছিল ৬৯৯টি আন্তর্জাতিক উইকেট। মাত্র একটি উইকেটের জন্য ৭০০ উইকেটের মাইলস্টোন অধরা থেকে গেছে তার, ‘সব পেলে নষ্ট জীবন’-এর কথায় সুরে।

কিছু দাগ ভালো হয়, তেমনই কিছু দাগ তিনি রেখে গেছেন তার ক্রিকেট সাম্রাজ্যে। তাই নিয়ে ভালো আছি আমরা। তার অভাব অনুভূত হবেই বিশ্ব ক্রিকেটে। ডেল স্টেইন, আপনিও ভালো থাকবেন জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...