ড্যারেল মিশেল, নামটা মনে রাখবেন!

ঘরোয়া ক্রিকেটে ড্যারেল প্রসিদ্ধ ছিলেন একজন ফিনিশার হিসেবে। বনে গিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ সুপার স্ম্যাশের একজন মারকুটে ব্যাটার। যার ঝুলিতে রয়েছে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ছয় হাঁকানোর রেকর্ড পুরো ২০২০-২১ মৌসুমে কলিন ডি গ্রান্ডহোমের ইনজুরির বদৌলতে সুযোগ হয়েছিল জাতীয় দলের হয়ে ব্ল্যাক ক্যাপসদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব। তিনি হয়ত নিজেও প্রত্যাশা করেননি যে তিনি জায়গা পেয়ে যাবেন নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পনেরো সদস্যের দলে।

ড্যারেল মিশেল? এ আবার কে?  সাবেক রাগবি দলের খেলোয়াড় ও কোচ জন মিশেলের ছেলে ড্যারেল মিশেল স্কুল জীবনেও খেলেছেন রাগবি। তবে সময়ের পরিক্রমায় নিজেকে পুরোদস্তুর ক্রিকেটারে রুপান্তরিত করেছেন ড্যারেল মিশেল।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ড্যারেল প্রসিদ্ধ ছিলেন একজন ফিনিশার হিসেবে। বনে গিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ সুপার স্ম্যাশের একজন মারকুটে ব্যাটার। যার ঝুলিতে রয়েছে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ছয় হাঁকানোর রেকর্ড পুরো ২০২০-২১ মৌসুমে কলিন ডি গ্রান্ডহোমের ইনজুরির বদৌলতে সুযোগ হয়েছিল জাতীয় দলের হয়ে ব্ল্যাক ক্যাপসদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব। তিনি হয়ত নিজেও প্রত্যাশা করেননি যে তিনি জায়গা পেয়ে যাবেন নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পনেরো সদস্যের দলে।

জায়গা তবু পেয়েছিলেন একজন ফিনিশার হিসেবেই। কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেলো তা হয় দর্শক সমর্থক থেকে শুরু করে ড্যারেল নিজেও হয়ত কুল কিনারা করে উঠতে পারছেন না। অন্তত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালের পর হয়ত অন্যরকম এক ঘোরে রয়েছেন ড্যারেল মিশেল। একাই যে শুরু থেকে শেষ অবধি দলকে টেনে নিয়ে তুলে দিলেন ফাইনালে। স্বপ্ন না সত্যি! ফিনিশার বিবেচনায় দলে জায়গা পাওয়া ড্যারেলের ওপেনিং করার গল্পটাও নেহাৎ মন্দ নয়।

আইপিএল থেকে ফিরে বায়োবাবলে যুক্ত হতে দেরী করেন নিউজিল্যান্ডের ওপেনার টিম সাইফার্ট। ওপেনারের অভাব ঘুচাতে কোচ গ্যারি স্টেড হাতে ব্যাট তুলে দায়িত্ব দিয়ে দিলেন ড্যারেলের কাঁধে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ২২ বলে ৩৩ রানের নিতান্ত সাধারণ এক টি-টোয়েন্টি সুলভ ইনিংস খেলেন মিশেল। এতেই যে সাইফার্টের বদলে দলের ওপেনার বনে গিয়েছিলেন ড্যারেল বিষয়টা এমন নয়। দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেই ড্যারেল ফিরে যান লোয়ার মিডেল অর্ডারে।

কিন্তু সাইফার্টের ইনজুরিতে তাঁকে ভরসা করে আবার ওপেনিং এর দায়িত্ব দেন কোচ স্টেড ও অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। ঘরোয়া লিগের ইতিহাসে ওপেনিং করার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না ড্যারেলের। তবে তিন চারে ব্যাটিং করেছেন বহুবার। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে দলে ইনিংসের সূচনা করার দায়িত্বের ভর যে অনেক অনেক বেশি। কিন্তু ড্যারেলে রয়েছে বলিষ্ঠ কাঁধ ও নির্ভীক সুবিশাল হৃদয়। নিয়েই নিলেন দায়িত্ব। দলের ক্রান্তিলগ্নে কি আর দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া যায়?

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে তেমন ভাল হলো না ব্যাটিং ২০ বলে ২৭ রান। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ঠিকই খুঁজে পেলেন নিজেকে। একটি রানের আক্ষেপ প্রথম অর্ধশতক হাঁকানোর। তারপরের তিন ম্যাচে তাঁর রান সংখ্যা যথাক্রমে তেরো, উনিশ, সতেরো। তবে কোচ অধিনায়নক ভরসা হারালেন না। তাছাড়া দল যখন ভাল মোমেন্টামে থাকে তখন আসলে দলে পরিবর্তন নিয়ে আসাও অযৌক্তিক। রয়ে গেলেন ড্যারেল দ্য এক্সিডেন্টাল ওপেনার। দল উঠেছে সেমিফাইনালে।

২০১৯ এ লর্ডসে ওয়ানডে বিশ্বকাপের হারের ক্ষতটা এত জলদি শুকিয়ে যাবার কথা নয়। প্রতিশোধের এক তীব্র আগুন হয়ত জ্বলজ্বল করছিলো প্রতিটি ব্ল্যাকক্যাপস খেলোয়াড়দের মনে। সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ যে সেই ইংল্যান্ড। একটি বাউন্ডারির অযৌক্তিক মারপ্যাঁচে হারতে হয়েছিল শিরোপা জয়ের আশা।

সেমিফাইনাল পর্যায়ে মোটামুটি বোলিং পারফর্মেন্সে ব্ল্যাকক্যাপসরা আটকে ফেললো ইংলিশদের ১৬৬ রানে। জয় সম্ভব। অন্তত মার্টিন গাপটিল, কেইন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ে, জিমি নিশামদের মতো ব্যাটার যে দলে থাকে, সে দল তো নিশ্চয়ই ১৬৭ রানের টার্গেট উৎরে যাওয়া মামুলি বিষয়। তবে বিপরীতে যদি থাকে ক্রিস জর্ডান, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদের মতো বোলার হলে বিষয়টা একটু মুশকিল। ব্যাপারটা ঠিক ঘটলো তাই। শুরুতেই নিউজিল্যান্ড হারিয়ে ফেলে তাঁদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটারকে। ক্রিস ওকসের শিকার বনে যান তাঁরা দুই জন।

তারপর কনওয়ে এবং ড্যারেল তুলে নিলেন দায়িত্ব। ইনিংস বিল্ডআপ করার। ধীরেধীরে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিলেন দুইজন। কিন্তু কনওয়ে আউট হয়ে যান ৪৬ রানে। তখন জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের দরকার আরো ৭২ রান। হাতে বাকি মোটে ৩৮ খানা বল। ড্যারেল রয়ে গেলেন। এলেন গ্লেন ফিলিপস। তবে চারখানা বল খরচায় ফিলিপসের দুই রান যেন আরো বাড়িয়ে দিয়া যায় বোঝা। সেই অপরপ্রান্তে ৪০ বলে ৪৬ রান করে অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন ড্যারেল। ক্রিজে এলেন নিশাম। ১৬ ওভার শেষে জেতার জন্যে প্রয়োজন ৫৭ রান। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ড্যারেল চেয়ে চেয়ে দেখলেন নিশামের তাণ্ডব। ১১ বলে ২৭ করে আদিল রশিদের উইকেটের পরিণত হয়ে সাজঘরে ফিরলেন জিমি নিশাম।

খেলা তখন হাতের মুঠোয় এনে দিয়ে গিয়েছিলেন নিশাম। বাকি কাজটুকু সেরে আসার দায়িত্ব ছিল ড্যারেল মিশেলের। তিনি ভুল করলেন না। ওপেনার হিসেবে নেমে দলের ব্যাটিং বিপর্যয় সামলে নিয়ে শেষ অবধি টিকে রইলেন। নিশামের তাণ্ডব হয়ত ড্যারেলকে মনে করিয়ে দিল তাঁর নিজস্ব  ফিনিশার সত্ত্বার। শেষের সাত বলে ঝড় তুলে বাগিয়ে নিলেন ২৬ রান।

শুরু থেকে শেষ অবধি ক্রিজে থেকে দলকে ফাইনালে তুলেই নিজের গায়ে ‘হিরো’ তকমটা জুড়ে নিলেন ড্যারেল মিশেল। দলের বিপদের মুহূর্তে রয়েসয়ে খেলে যেমন পরিচয় দিয়েছেন নিজের দায়িত্বশীলতার ঠিক আবার দলের প্রয়োজনে আবার নিজের পেশিশক্তির ব্যবহার করে জানান দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যের। বুদ্ধিদীপ্ত, পরিস্থিতি মাফিক ব্যাটিং এবং শেষমেশ জয় নিয়ে এসে ইনিংস শেষ করা ধৈর্যশীলতা পরিচয় দেওয়া ড্যারেল মিশেল দাবি রাখে প্রশংসার। তিনি অসাধারণ, অনবদ্য এবং ধৈর্যশীল বিধ্বংসী!

একজন ফিনিশার থেকে অ্যাক্সিডেন্টাল ওপেনার। তারপর সেমিফাইনাল জয়ের নায়ক। একটি টুর্নামেন্টেই এমন সব রোমাঞ্চকর ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকা ড্যারেল মিশেল নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে অন্তত চিরস্মরণীয় হয়ে রইবেন। বাকি এখন দেখবার অপেক্ষা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা নিউজিল্যান্ড শেষমেশ শিরোপার আক্ষেপ ঘোচাতে পারে কি না। আবারো ম্যাচের সময় এবং পরিস্থিতি বুঝে ড্যারেল মিশেল নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন কি না, সেমিফাইনালের হিরো থেকে বনে যেতে পারেন কি না শিরোপা জয়ের নায়ক তা জানবার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১৪ নভেম্বর অবধি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...