১৫০ রান, নিতান্ত সাধারণ এক টার্গেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তো আজকাল ২০০ এর বেশি রান তাড়া করে জেতার দৃষ্টান্তও তো কম নেই। আর সেই নিতান্ত সাধারণ টার্গেটের অর্ধেক কিংবা তারও বেশি রান আসে একজনের ব্যাট থেকে তাহলে তো ‘মেঘ না চাইতেই জল’। ঠিক সে কাজটাই করে দেখালেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার কুইন্টন ডি কক।
ভারতে চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। বৃহস্পতিবার একমাত্র ম্যাচে মুখোমুখি দিল্লী ক্যাপিটালস ও নবাগত লখনৌ সুপার জায়ান্টস। টস জয়ের পর ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন লখনৌয়ের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। তবে তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্ত যে একেবারেই ভুল তা প্রমাণে উঠে পড়ে লেগেছিলেন দিল্লি ক্যাপিটালসের ওপেনিং ব্যাটার পৃথ্বী শ। এক হাত দেখে নিলেন লখনৌ বোলারদের।
৩৪ বলের ৬১ রানের এক মারকুটে ইনিংস খেলে যখন তিনি প্যাভিলনের পথে হাঁটা শুরু করেন তখন তাঁর দল দিল্লী বেশ একটা শক্ত অবস্থানেই ছিল। কিন্তু দুই বিদেশি ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নার ও রভম্যান পাওয়েলের ধীর গতির ইনিংসের প্রস্থানে বিপাকে পড়ে যায় দিল্লী। তবে সেটা সামাল দিয়ে একটা লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায় দিল্লীর অধিনায়ক ঋষাভ পান্ত ও সরফরাজ খান। দুইজনে মিলে গড়ে তোলেন ৭৫ রানের জুঁটি।
১৫০ রানের টার্গেট খুব বেশি না। তাই একটু দেখে শুনে শুরু করেন লখনৌয়ের দুই ওপেনিং ব্যাটার লোকেশ রাহুল ও কুইন্টন ডি কক। তবে ডি কক এদিন ছিলেন নিজেকে প্রমাণের মেজাজে। গেল ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খুব একটা ভাল যায়নি। সে সাথে বিতর্ক সব মিলিয়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার অন্বেষণ চালাচ্ছেন প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক ব্যাটার ডি কক। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে একটি অর্ধশতকও করেছিলেন ডি কক। মোদ্দা কথা মোটামুটি একটা ভাল সময়ই পার করছেন তিনি।
আইপিএলেও তাই সে ধারা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা তাঁর। তবে সেদিকে দিল্লির বোলার মুস্তাফিজুর রহমান বেশ একটু বাঁধ সেধেছিলেন। কিন্তু ডি কক ছিলেন অনঢ়। দৃঢ় প্রত্যয়ী। মুস্তাফিজের প্রথম দিকের দুই ওভার দেখে শুনে খেলে এরপর আপন ছন্দে ব্যাট চালাতে থাকেন ডি কক। মাঠের চার পাশে খেলেন দৃষ্টিনন্দন সব শট। তারই জাতীয় দল সতীর্থ এনরিচ নরকের নো বল থেকে একটি ছয়ও আদায় করেন তিনি।
তাছাড়া আরও একবার নরকের এক শট বল ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে সীমানা ছাড়া করেছেন ডি কক। এই দুই ছয় ছাড়াও নয়টি বাউন্ডারি আদায় করে নিয়েছেন ডি কক। দিল্লীর জয়ের আশা ক্রমশ ক্ষীণ করে তিনি নিজের নামের পাশে জুড়ে নেন ৮০ রান। লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি।
শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে কুলদ্বীপ যাদবের বলে সরফরাজ খানের তালুবন্দী হয়ে যখন সাজঘরের পথ ধরেন ডি কক তখন লখনৌয়ের দলীয় রান ১৬ ওভার শেষে ১২২ রান। চার ওভারে ২৮ রান সংগ্রহগ করতে খুব বেশি ঝক্কি পোহাতে হয়নি লখনৌয়ের বাকি ব্যাটারদের। শেষের দিকে তরুণ ব্যাটার আয়ুশ বাদোনির ছক্কায় দুই বল বাকি থাকতেই জয় পেয়ে যায় লখনৌ সুপার জায়ান্ট।
ডি কক সব সময়ই বেশ কৌতুহলের জন্ম দেওয়া ক্রিকেটার। টেস্টটা আদৌ তিনি এখন আর খেলছেন না, অবসর নিয়ে ফেলেছেন। এক সময় তাঁকে ভবিষ্যতের কাণ্ডারি ভাবা হত জাতীয় দলের, সেখানেও তিনি আপাতত ইস্তফা দিয়েছেন। নেতৃত্বে মন না দিয়ে মন দিয়েছেন ব্যাটিংয়ে। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিতর্কের আগুন জ্বালিয়েছেন বর্ণবাদের আগুনে। তবে, বরাবরই তিনি পারফরমার। তাই তো ফ্র্যাঞ্চাইজির দুনিয়ার বিশাল নাম-ডাক। আর সেই নামের প্রতি সুবিচারও তিনি করে চলেছেন নিয়মিতই।