২২ সে এপ্রিল, ১৯৯৮, শারজাতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কোকাকোলা কাপের শেষ গ্রুপ পর্বের খেলা। প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ২৮৪/৭ রানের বড়ো ইনিংস গড়ে, প্রধানত মাইকেল বেভানের অপরাজিত ১০১ এবং মার্ক ওয়াহর ৮১ রানের সৌজন্যে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ভারতীয় ইনিংস শুরুর বেশ কিছুক্ষণ পরে বালির ঝড়ের কারণে ভারতীয় ইনিংস ৪৬ ওভারের দাঁড়ায় এবং লক্ষ্য সংশোধন করে দাঁড়ায় ২৭৬।
তার ওপেনিং জুটি গাঙ্গুলিকে অল্প রানে হারানো সত্ত্বেও, শচীন ইনিংস ধরে রেখে ব্যাট করতে থাকেন। জাদেজা ১ রানে আউট হওয়ার সময় ভারতের রান ছিল ১৩৮/৪। এইসময় শচীনের সাথে ভিভিএস লক্ষ্মণ যোগ দেন, এবং খেলা শেষ হওয়ার সময় ভিভিএস ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এদিকে, শচীন এক দুরন্ত লেভেলে খেলতে থাকেন, নয়টি চার এবং পাঁচটি ছক্কা মেরে অবশেষে, তিনি ১৪৩(১৩১ বলে) রানে আউট হন। তার ইনিংসটি ভারতের জেতার জন্য যথেষ্ট ছিল না, কারণ ভারত ২৬ রানে হেরে যায়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে যে ভারত নেট রান রেট-এর ভিত্তিতে নিউজিল্যান্ডকে টপকে ফাইনালে পৌঁছায়।
ধারাভাষ্যকার টনি গ্রেগ অন এয়ার বলেছিলেন যে ভারতীয় দলের একমাত্র শচীন শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র কোয়ালিফাই করা নয়, ম্যাচটি জেতার জন্যে একার হাতে এক অসম্ভব লড়াই লড়ে চলেছিলেন এগারো অস্ট্রেলিয়ানদের বিরুদ্ধে। বাকিরা শুধু নিয়মরক্ষার জন্যে ব্যাট হাতে ক্রিজে নামছিলেন।
আগেকার দিনে শারজাতে অনুষ্ঠিত এই মাল্টি ন্যাশনাল টুর্নামেন্টগুলো বেশ কিছু স্মরণীয় মুহূর্তের জন্ম দিয়েছিলো, যেগুলো আজ বাইল্যাটারাল সিরিজে অনুপস্থিত। প্রকৃতপক্ষে, শারজাই একমাত্র জায়গা নয় যেটি নব্বইয়ের দশকে বহুজাতীয় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতো। এই সময়ের কিছু খেলা কয়েক দশক পরেও দর্শকদের স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে।
শচীন সেদিন ‘ব্যাটল’ হয়তো হেরে গিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ‘ওয়ার’-টি জেতেন কারণ তিনি দুদিন পরেই নিজের জন্মদিনে ফাইনালে ১৩৪ রান করে ভারতকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ছয় উইকেটে জয় এনে দেন। গোটা টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া বনাম শচীন – এই অসম লড়াই দেখা যায় যাতে শেষ হাসি শচীন হাসেন ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে।
‘Straight down the ground…what a six, what a six! Whada playaaa!’ -১৯৯৮ সালে আজকের দিনে ( নাকি রাতে) শচীন খেলেছিলেন সম্ভবত ভারতের হয়ে ৯০ এর দশকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ওয়ান ডে ইনিংসটি, যা শচীনকে এক লহমায় গ্রেট থেকে লিজেন্ডদের লিগে নিয়ে যায়।
শচীন এদিন সত্যিই ওয়ান ম্যান আর্মি হয়ে ভারতকে ফাইনালে তুলেছিলেন। ইনিংস বিরতিতে শচীন কোচ গায়কোয়াড়কে বলেছিলেন, চিন্তা করবেন না কোচ, আমি দলকে ফাইনালে তুলবই। এমনকি মরু ঝড়ের সময় খেলা বন্ধ থাকায় ড্রেসিংরুমে কোচকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি যতক্ষণ আছেন, ভারত ফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে যাবেনা।
টনি গ্রেগ বলেছিলেন, ‘জন্মদিন সেলিব্রেট না করে শচীন শারজাহ ছেড়ে যাবেন না।’ শেন ওয়ার্নের দু:স্বপ্নের শুরু। যারা দেখেননি, শুধু শেন ওয়ার্নের বলে মারা বাউন্ডারি আর ছয় গুলো একটু দেখে নেবেন। এই জিনিস আপনাদের ওই ধর তক্তা মার পেরেক দের দিয়ে হবে না। বাকিটা ইতিহাস।