দ্য ডেসটিনি চাইল্ড

আমার বাংলার দুই সন্তান ঋদ্ধি ও শামী দু’জনেই নিজের ভূমিকাটি পালন করেছেন যথাযথ। তবুও মন পড়ে রইল শূন্য রানে আউট হওয়া এক তেজি শক্তিশালী বুড়ো ঘোড়ার পানে।

খেলতে যখন নামলেন তখন ১২.৪ ওভার। দরকার আর ২২ রান। হাতে ১৪টা বল। তবে এসেই যা হল তা আকস্মিক চমককেও হার মানায়। চিরকেলে সেরা ফিনিশার মাত্র ১ বল খেলে তালুবন্দি হলেন ০ রানে।

হ্যাঁ, শূন্য। নিজেও বোঝেননি ঘটনাটা আদৌ ঘটে গিয়েছে কি না। অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কয়েক সেকেন্ড। তারপর ঠান্ডা মাথার মানুষটা এমন করে গ্যালারিতে গিয়ে গুটিয়ে গেলেন যে ক্যামেরা মুখে পড়লেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছিলেন।

আজকাল ক্যাচ ফেলে দিলে, রান করতে না পারলে, বগলের তলা দিয়ে বল গলে ৪ হয়ে গেলে কেউ খুব একটা লজ্জাটজ্জা পায় না। বরং পার্ট অব দ্য গেম ভাবে। উল্টে দাঁত বের করে তখনই হাসে।

এই স্ট্রিট স্মার্টনেসের যুগে দেখলাম একজন লজ্জা পাচ্ছে, এমন ম্যাচে ০ করে। আম্বাতি রাইডু আর আজিঙ্ক রহানে যখন খেলছেন, দেখলাম একটু নড়েচড়ে বসছিলেন। কিন্তু সেই যে নামের পাশে একটি শূন্য এসে দাঁড়াল, অমনি নিজের বলয়ে গুটিয়ে গেলেন তিনি।

এমন মারকাটারি ম্যাচে শেষ কবে শূন্য করেছেন তিনি, তা অতি বড় ক্রিকেটলিখিয়েকেও গুগল খুলে জানতে হবে। সচকিতে মাথায় আসবে না।

শেষ ৩ ওভারে ব্যাটে বলে হচ্ছে না। গোটা গ্যালারি মনে মনে ভাবছে তিনি থাকলে ম্যাচ এতক্ষণে পকেটে। খেলা আর দেখছেন না তিনি। শুধু তাকিয়ে আছেন মাত্র। শিবম দুবে এই সময় এত ধরে খেলছে কেন, ভেবে কি একটু বিচলিত হলেন মাঝে? কে জানে! জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে চোখ নামিয়ে নিলেন।

শুধু চোখের তারা খানিক উজ্জ্বল হল রবীন্দ্র জাদেজা খেলতে নামার সময়। অনেক দিনের চেনা তো, নিজের কিঞ্চিৎ ছায়া বোধহয় খুঁজে পান এই খেলোয়াড়টির মধ্যে। আমার অন্যতম পছন্দের ক্রিকেটার রবীন্দ্র। তবে আমি তো তিনি নয়।

মুষড়ে পড়েছি ততক্ষণে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে সেই গুজরাটের জয়ই দেখতে হবে ভেবে! রাজনীতি আর খেলা আলাদা বিষয়। নিজে খেলার সঙ্গে জড়িত থাকায় তা বুঝিও। তবু মন কি আর খেলা দেখার সময় অত নিয়ম বোঝে!

তাঁর বড় অদ্ভুত দাবি। বাঙালি ছেলেটাকে রান করতে হবে। করল-ও সে। আর এক দাবি, এই হলুদ জার্সি পরা ক্রিকেটবিস্ময়ের সম্ভাব্য শেষ ম্যাচের কাপ যেন তাঁর হাতেই যায়।

শেষ ওভারে ১৪ রান দরকার। একটা হিসেবে খুব সহজ। কিন্তু ক্রিজে তেমন দরের কেউ না থাকলে আর মনোবল ভেঙে গেলে এই স্কোর বিরাট। শিবম দুবে আজ অস্বচ্ছন্দ ছিলেন প্রথম থেকেই। তবু উইকেট ধরে রেখে স্ট্রাইক রোটেট করছিলেন।

এটুকুই তাঁর কৃতিত্ব আজ। রবীন্দ্র ব্যাট চালিয়েও যখন ২ বলে ১০-এ এনে ফেললেন, চেন্নাই শিবিরে বসে তিনি চোখ নামিয়ে নিলেন। ১ টি বলে ৬। চাইলেন তিনি। ধীর শান্ত মুখ। ফের চোখ নামালেন। আর দেখলেন না। চোখ বুজে রইলেন শেষ বলে।

সারা মাঠ তখন ফুটেছে। গ্যালারি নেমে পড়েছে মাঠে। সবুজ মাঠে শুধুই হলুদ ফুল। তিনি তবু বসে আছেন চোখ বন্ধ করে। তাঁকে টেনে মাঠে নিয়ে গেলেন টিমের ম্যানেজমেন্টের কেউ। মাঠে নেমেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন প্রিয় রবীন্দ্রকে।

একটা খেলা। নিছক খেলা। তাতেই আগাপাশতলা ধরা যায় মানুষের মনমেজাজ। স্থিতধী, আত্মবিশ্বাসী ও বরফশীতল মানুষটির জন্য এই আইপিএলের একমাত্র দেখা ম্যাচটি তুলে রেখেছিলাম। তাঁকে কুর্নিশ। আর রবীন্দ্র? তাঁর জন্য কোনও প্রশংসাই আজ যথেষ্ট নয়।

আমার বাংলার দুই সন্তান ঋদ্ধি ও শামী দু’জনেই নিজের ভূমিকাটি পালন করেছেন যথাযথ। তবুও মন পড়ে রইল শূন্য রানে আউট হওয়া এক তেজি শক্তিশালী বুড়ো ঘোড়ার পানে।

হ্যাটস অফ টু দ্য ডেসটিনি চাইল্ড, ‘দ্য এম এস ধোনি’।

– ফেসবুক থেকে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...