গাব্বার সিং কিংবা মিস্টার ইন্ডিয়া

ভারত জাতীয় দলের ওপেনারদের লড়াইয়ে তাঁর নামটা ব্রাত্যই থাকে আজকাল। বছর শেষের বিশ্বকাপ আসরেও দলে জায়গা পাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবু শিখর ধাওয়ান পারফরম্যান্সের সাথে আপোষ করেননি, ব্যাটে রানের ধারা বজায় রেখেছেন।

ভারত জাতীয় দলের ওপেনারদের লড়াইয়ে তাঁর নামটা ব্রাত্যই থাকে আজকাল। বছর শেষের বিশ্বকাপ আসরেও দলে জায়গা পাবার সম্ভাবনা নেই  বললেই চলে। তবু শিখর ধাওয়ান পারফরম্যান্সের সাথে আপোষ করেননি, ব্যাটে রানের ধারা বজায় রেখেছেন। আইপিএলেও রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ৫৬ বলে অপরাজিত ৮৬ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দিয়েছেন এই তারকা। 

জাতীয় দল কিংবা আইপিএল, দুই জায়গাতেই যেন বিপদের ভরসার নাম শিখর ধাওয়ান। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় জুড়ে রান করে গেছেন, অথচ পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে পারেননি। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি কিংবা হালের শুভমান গিল, সূর্যকুমার যাদবরা সমর্থন পেয়েছেন বাজে ফর্মেও, কিন্তু ধাওয়ানের বেলায় সেই সুযোগটা দেবার পক্ষপাতী কেউ নন। 

কিন্তু ধাওয়ান হাল ছাড়েননি, নীরবে নিজের কাজটা করে গেছেন। তবে যখনই দল মাঠে খারাপ করেছে, প্রথম খড়গটা নেমেছে ধাওয়ানের উপরেই। জাতীয় দলেই দেখুন না, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করার তিন মাসের মাঝেই জাতীয় দলে জায়গা হারিয়েছেন। অথচ বিগত এক দশকে তাঁর রেকর্ড বিবেচনায় আরেকটু সুযোগ কি প্রাপ্য ছিল না!

আইপিএলেও পরিস্থিতিটা বদলায়নি, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে নিয়মিত রান করে গেলেও ডেভিড ওয়ার্নারের পাশে তাঁর নামটা কেউ নেয়নি। গত মৌসুমে পাঞ্জাব কিংসে যোগ দেবার পরও দৃশ্যপটটা একই ছিল। কিন্তু এবারের মৌসুম শুরুর আগে পাঞ্জাব যখন দল গঠনে এলোমেলো, শক্তিমত্তায় বাকি দলগুলোর চাইতে পিছিয়ে ভীষণ। 

ঠিক সেই সময়টাতে পাঞ্জাব ম্যানেজমেন্টের মনে পড়েছে পুরনো সেনানীকে। ধাওয়ান অধিনায়কত্বের ঝুঁকিটা নিয়েছেন, প্রায় নিভু নিভু এক দলকে চেষ্টা করছেন টিকিয়ে রাখার। 

২০২৩ আইপিএল থেকে ধাওয়ানের হারানোর কিছু নেই। তিনিও জানেন বিষয়টা, ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে জাতীয় দলের স্কোয়াডে তাঁর জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা এক প্রকার শেষ। তবুও শেষবেলাটা রাঙিয়ে দেয়ার চেষ্টা তাঁর আপ্রাণ। হারার আগে হেরে যাবার পাত্র তো শিখর ধাওয়ান নন। বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব আর নিজের পরিণত ব্যাটিং – দুয়ে মিলে ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় আরো একবার নিজের জাত চিনিয়ে যাচ্ছেন ধাওয়ান। 

ব্যাট হাতে নিজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। দুই ম্যাচেই দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছেন। প্রথম ম্যাচে কলকাতার বিপক্ষে ৪০ রানের পর রাজস্থানের বিপক্ষে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলেছেন ৮৬ রানের ইনিংস। তাঁর ব্যাটিংয়েই যেন নির্ভার পাঞ্জাবের লাইনআপ, প্রতি ম্যাচেই উড়ন্ত সূচনা এনে দিচ্ছেন এই তারকা। পাশাপাশি অধিনায়কত্বেও দারুণ ধাওয়ান, বোলারদের দারুণভাবে ব্যবহার করে চাপের মুখেও জয় বের করে আনছেন। 

টানা দুই ম্যাচে দুই জয় পাঞ্জাবের। আহামরি কিছু হয়তো নয়, তবুও আইপিএলের সবচেয়ে ব্যর্থ দলটার জন্য এটাই অনেক। ধাওয়ান নিজেও জানেন এই পারফরম্যান্স দুদিন বাদেই সমর্থকরা ভুলে যাবেন। তখনো হয়তো ব্যর্থতার প্রথম কোপটা নামবে ধাওয়ানের উপরই। তবু ধাওয়ান চেষ্টার কমতি রাখছেন না। কারণ গাব্বার সিংরা যে কখনো হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নন! কিংবা তিনি হয়তো একালের মিস্টার ক্রিকেট, যার জন্য ক্রিকেট খেলে যাওয়াটাই জীবনের মোক্ষ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...