২০১৫ সালের শেষের দিককার কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচিতে বছরের বেশির ভাগ সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার ফুরসতই মেলে না ভারতের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। তো তখন বিজয় হাজারে টুর্নামেন্টের খেলা চলছে। এমনিতে সে সময়ে কোনো সিরিজ ছিল না ভারতের। তারপরও বিরাট, রোহিতরা সে টুর্নামেন্ট খেললেন না। পরবর্তী সিরিজের আগে সে সময়টাকে বেছে নিলেন বিশ্রাম হিসেবে।
ভারতের অধিনায়ক তখন মহেন্দ্র সিং ধোনি। কী মনে করে বহু বছর বাদে ধোনি বিজয় হাজারে ট্রফিতে অংশ নিলেন। যে ঝাড়খণ্ড থেকে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন সেই শহরের হয়েই খেললেন পঞ্চাশ ওভারের এ টুর্নামেন্ট।
কর্ণটাকার আলুরুর এক অখ্যাত এক মাঠে গুজরাটের বিপক্ষে ঝাড়খণ্ডের ম্যাচ। ধোনি এ ম্যাচে খেলছেন, তা শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছড়িয়ে যেতে সময় লাগেনি। তাই সে ম্যাচ দেখতে দূর দুরান্ত লোক এসে মাঠে ভিড় করে খেলার শুরুর বেশ আগেই।
ম্যাচ শুরু হল। টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট। ঝাড়খণ্ডের ইনিংস শুরু হল। ঘন্টা দুয়েক বাদে ব্যাট হাতে নামলেন ধোনি। ধোনি নামার পর পুরো মাঠের চিত্র পাল্টে গেল। ম্যাচের চেয়ে যেন দর্শকদের কাছে তখন ধোনিই সর্বেসবা।
ধোনিও দর্শকদের প্রত্যাশা মিটিয়ে ব্যাটিং করছিলেন। তাঁর সাবলীল ব্যাটিংয়ে ঝাড়খণ্ডেরও ইনিংস এগিয়ে যেতে থাকে। উইকেটে তখন প্রায় থিতু হয়ে গিয়েছেন ধোনি। পৌঁছে গিয়েছেন ব্যক্তিগত ৪৪ রানে।
এমন সময়ে দর্শকদের সীমাহীন উচ্ছ্বাস, উন্মাদনায় এক মুহূর্তের জন্য নিঃস্তব্ধতা তৈরি করেন গুজরাটের এক পেসার। ধোনিকে দারুণ এক ইয়র্কার দিয়ে পরাস্ত করলেন। দারুণ খেলতে থাকা ধোনি সে বলটা যেন বুঝেই উঠতে পারলেন না। বিদ্যুৎ ঝলকানির মত বল ছুটে গিয়ে সোজা মিডল স্ট্যাম্প ছত্রখান। ধোনি আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন।
ধোনির এমন আউট হওয়ার দৃশ্যে তখন দর্শকদের বোলারকে চেনার আপ্রাণ চেষ্টা। অনেকক্ষণ পর মাঠে আসা দর্শকরা বোলারকে চিনতে পারলেন। চিনলেন বলা ভুল হবে। ধোনিকে আউট করায় সে পেসারকে মনে রাখার জন্য শুধু নামটা জানার চেষ্টা আরকি। ধোনিকে আউট করা সে পেসারের জার্সির পেছনে দেখা গেল নামটা, ‘বুমরাহ’!
হ্যাঁ। এ কালের জাসপ্রিত বুমরাহর তখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পা পড়েনি। তাই তিনি তখন ছিলেন অচেনা, অজানাদের দলেই। তবে নিজের প্রিয় ক্রিকেটারকে আউট করার পর সেদিন ঠিকই এক ধরনের তৃপ্তিবোধ কাজ করেছিল বুমরাহর ভিতরে। নিজের অধিনায়ক পার্থিব প্যাটেলকে তাই খুব করে ধরলেন, মাহির অটোগ্রাফ তাঁর লাগবেই লাগবে। পার্থিব প্যাটেল ঝাড়খণ্ডের ড্রেসিংরুমে এ নিয়ে বার্তা পাঠালেন।
ধোনির কাছেও গেল সে বার্তা। এরপর ধোনি আসলেন। বুমরাহর বলে সাইন করলেন। আর হাসিমুখেই বুমরাহকে বললেন, দুর্দান্ত বল করেছ। ধোনির কাছ থেকে এমন প্রশংসা পেয়ে করতালিই সিক্ত হলেন বুমরাহ। তখন পর্যন্ত সেটিই ছিল বুমরাহর আউট অফ দ্য ফিল্ডের স্মরণীয় মুহূর্ত।
তবে মাস দুয়েক বাদে, বুমরাহ দেখা পেলেন আরেক স্মরণীয় মুহূর্তের দেখা। সিডনিতে সেই ধোনির অধিনায়কত্বেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় বুমরার। এরপরের ইতিহাসটা তো সবার জানা। গতি, বাউন্স, দুর্দান্ত এক্যুরেসিতে বুমরাহ হয়ে যান ভারতের পেস বোলিংয়ের প্রাণভোমরা। জাসপ্রিত বুমরাহ থেকে হয়ে ওঠেন জাসপ্রিত ‘বুম’ বুমরাহ।
বিশ্রামে থাকার দিনে ধোনি সেদিন বিজয় হাজারে ট্রফি খেলতে গিয়েছিলেন। নিজের দল ঝাড়খণ্ড সে ম্যাচ হেরেছিল। তবে শূন্য অর্জনের দিনে ধোনির প্রাপ্তিটা ছিল, বুমরাহ। ধোনি সেদিন এক স্বর্ণের সন্ধান পেয়েছিলেন বটে।