শ্রীনাথের ভয়ের মঞ্চায়ন

স্বাভাবিকভাবে যেকোন ব্যাটার তেমন পরিস্থিতিতে খানিকটা বিরক্ত হওয়া স্বাভাবিক। সুব্রত আরও বলেন, ‘ভেঙসরকার বেশ বিরক্ত হয়েছিল কারণ সেটা কেবল নেট অনুশীলন ছিল। আর সে এসেই বাউন্সার করতে শুরু করে। সে (ভেঙসরকার) প্রস্তুত ছিল না। তাঁকে মানা করা হয় বাউন্সার করতে। আর দ্বিতীয় বলেই শ্রীনাথ ছোড়েন এক অপ্রতিরোধ্য ইয়র্কার।’

একসময় বিলেতিদের খেলাটা, সময়ের পরিক্রমায় বনে গেল উপমহাদেশের সবচেয়ে পছন্দের খেলা। বিশেষ করে ভারতের। দেশটির আনাচে-কানাচে ক্রিকেটের শেকড় ছড়িয়ে গেছে বহুদূর অবধি। এর পেছনে সাফল্যের যতটা না হাত রয়েছে তার থেকেও বেশি হাত ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের। তারাই তো মুগ্ধতা ছড়িয়ে ক্রিকেটকে ভালবাসতে শিখিয়েছে, বাধ্য করেছে।

ক্রিকেটের ব্যাটিং ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করা ভারতীয় ব্যাটারদের তো একটা লম্বা ফিরিস্তি টানা যেতে পারে। সুনীল গাভাস্কার থেকে শুরু করে শচীন টেন্ডুলকার কিংবা বিরাট কোহলির সময় পেরিয়ে হালের ঋষাভ পান্ত। এমনসব দুর্ধর্ষ ব্যাটাররাই আসলে ক্রিকেট প্রেমে ফেলতে বাধ্য করেছিলেন ভারতের মানুষদের।

সে ভালবাসার পালে হাওয়া দিয়েছে ভারতের স্পিনাররা। অনিল কুম্বলে, হরভজন সিং, রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা ক্রিকেটটাকে আরো বিস্তারে বেগ দিয়েছে। তবে পেসারদের এই যাত্রায় খুব সম্ভবত প্রথম যুক্ত করেছিলেন জাভাগাল শ্রীনাথ। তাঁর আগে পরে বহু পেসার এসেছেন, ক্রিকেট মাঠ মাতিয়েছেন। তবে শ্রীনাথ ভিন্ন ধরণের এক ছাপ ফেলে গিয়েছিলেন ভারতের ক্রিকেট।

পেস বোলারদের সংজ্ঞাতে গতি, বাউন্স, সুইং আর ইয়র্কার এসবকিছু অন্তর্ভুক্ত। আর এই সবকিছুর মিশেলের এক দুর্দান্ত ফলাফলই তো ছিলেন জাভাগাল শ্রীনাথ। ভারতের পেস আক্রমণের পথপ্রদর্শকও যদি বলা হয় তাঁকে, তবে তাতে খুব একটা ভুল বলা হয়না। ক্রিকেট মাঠে পদার্পণের পর থেকেই তিনি চমকে দিয়েছেন সতীর্থ থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষদের।

তেমনই একটা ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সুব্রত ব্যানার্জী। ঠিক প্রথম যখন জাভাগাল শ্রীনাথ এসেছিলেন জাতীয় দলের আশেপাশে ঠিক তখনকার একটা স্মৃতি। শ্রীনাথ তখনও তরুণ, উদীয়মান সেই সাথে অপেক্ষমান জাতীয় দলের অভিষেকের জন্য। নব্বই দশকের শুরু তখন। সে সময় ভারতের কোচ ছিলেন বিষান সিং বেদি। তিনি বল তুলে দেন শ্রীনাথের হাতে।

তবে ম্যাচে নয়, নেট অনুশীলনে। প্রথম দিনেই ভারতের নেট অনুশীলনের প্রথম বলেই তিনি রীতিমত নিজের প্রতিভার ঝংকার তোলেন। তবে সে ঝংকার খুব একটা পছন্দ হয়নি নেটে ব্যাটিং করতে থাকা ভেঙসরকারের। কেননা নিজের প্রথম বলেই ঘাতক বাউন্সার মেরেছিলেন শ্রীনাথ। আর এর পরের বলেই আবার পায়ের আঙুল ফেঁটে যাওয়ার মত ইয়োর্কার। নেট অনুশীলনে সে ধরণের বোলিং যে কোন ব্যাটারের জন্যই  বিরক্তির কারণ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

ঘটনাটা ছিল ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে, শ্রীনাথ তখনও ছোট। সুব্রত সে গল্পের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বেদি তাঁর (শ্রীনাথ) দিকে বল ছুঁড়ে মারলো আর জিজ্ঞেস করলো যে সে বোলিং করবে কি না। সে কোন কিছু না ভেবেই সম্মতিসূচক উত্তর দিয়ে বোলিং প্রান্তে চলে যায়। সেবারই আমি প্রথম কোন ভারতীয় বোলারকে এতদ্রুত বল করতে দেখি। সে বাউন্সার মারলো। সেটা গিয়ে আঘাত করল ব্যাটের হ্যান্ডেলে। আর ব্যাটটা উড়ে যায়।’

স্বাভাবিকভাবে যেকোন ব্যাটারের তেমন পরিস্থিতিতে খানিকটা বিরক্ত হওয়াও স্বাভাবিক। সুব্রত আরও বলেন, ‘ভেঙসরকার বেশ বিরক্ত হয়েছিল কারণ সেটা কেবল নেট অনুশীলন ছিল। আর সে এসেই বাউন্সার করতে শুরু করে। সে (ভেঙসরকার) প্রস্তুত ছিল না। তাঁকে মানা করা হয় বাউন্সার করতে। আর দ্বিতীয় বলেই শ্রীনাথ ছোড়েন এক অপ্রতিরোধ্য ইয়োর্কার।’

ঠিক এমন ভয়ংকর দৃশ্য়ের মঞ্চায়ন করেই আগমন ঘটেছিল জাভাগাল শ্রীনাথের। এরপর তো তিনি বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটারদের মনে কাঁপন ধরিয়েছেন নিজের বোলিং দিয়ে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...