অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেয়া সেরা পেস বোলারদের একজন তিনি।
অন্তত তাঁর টেস্ট ঝুলিতে থাকা ২৫৯ উইকেট সেই সাক্ষীই দেয়। বোলার হিসেবে দারুণ সফল। কিন্তু একবারের জন্যও কেউ তাঁকে ব্যাটসম্যান ভাবেনি। কিংবা অলরাউন্ডার এমন কি মিনি অলরাউন্ডারও না; যিনি কিছুটা ব্যাট করতে জানেন। ৭১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে একেবারে নিখাদ টেল এন্ডারের মতই করেছেন ১২১৮ রান।
কিন্তু সেই মানুষটিই ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে এসে করে ফেললেন এক ডাবল সেঞ্চুরি। বলা ভালো বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই ডাবল সেঞ্চুরিই হয়ে রইলো তার শেষ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট।
হ্যাঁ, জেসন গিলেস্পির ফতুল্লায় সেই ডাবল সেঞ্চুরির কথা বলছি আমরা।
১৯৭৫ সালের এপ্রিলে জন্ম নেয়া গিলেস্পি তাঁদের সিডনির বাসার দেয়ালে তিনটি স্ট্যাম্প এঁকেছিলেন। সেখানে একাই প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা লম্বা রান আপে বল করে যেতেন। ১৫ বছর বয়সে তাঁর পরিবার অ্যাডিলেডে চলে এলে সেখানকার ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি হন তিনি।
১৯৯৪ সালে হঠাৎই একদিন জানতে পারলেন তিনি দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া দলে ডাক পেয়েছে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক ম্যাচেই নিয়েছিলেন চার উইকেট। তারপর আস্তে আস্তে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়তে থাকেন এই পেসার।
লম্বা রান আপের জন্য অনেকেই তাঁকে ‘রোড রানার’ ডাকতো। অ্যাডিলেডের সেই ক্লাবে হাসি মুখের লম্বা চুলওয়ালা সেই ছেলেটা তখন সবার পরিচিত। সবার প্রত্যাশা পূরণ করে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেন লম্বা রান আপের এই পেসার। সে বছরই নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে তাঁর।
এরপর প্রায় এক দশক অস্ট্রেলিয়ার পেস অ্যাটাকের কান্ডারি ছিলেন তিনি। তবে ইনজুরি প্রায়শই আঘাত হেনেছে তাঁর ক্যারিয়ারে। না হলে হয়তো আরো লম্বা ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের মালিক হতেন গিলেস্পি। তবে সব ছাপিয়ে গিলেপ্সির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও একই সাথে সবচেয়ে অন্ধকার অংশ ২০০৬ সালের চট্টগ্রাম টেস্ট।
সব মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ১২১৮ রানের মালিক গিলেস্পি সেদিন ব্যাট করতে নেমেছিলেন নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে। সেদিন ছিল তাঁর ৩১ তম জন্মদিনও। দিনের শেষ ভাগের তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। এর আগে কোনো নাইট ওয়াচম্যানের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১০৫। টনি ম্যান ১৯৭৭ সালে ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলেন এই ইনিংস।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাইকেল হাসির সাথে ৩২০ রানের জুটি গড়েছিলেন গিলেস্পি। তারপর একে একে অস্ট্রেলিয়ার অনেক গ্রেট ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ স্কোর পেড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মার্ক ওয়াহ, ক্লার্ক এমনকি স্টিভ ওয়াহর ২০০ রানের ইনিংসও ছাড়িয়ে গেলেন। সেই ম্যাচে মোট ৫৭৪ মিনিট ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। ৪২৫ বলে খেলেছিলেন ২০১ রানের অপরাজিত এক ইনিংস।
ওই একটা ইনিংস বাদে কখনো কোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটেই সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। তবে ভাগ্য সেদিন পুরোপরি তাঁর পক্ষে ছিল বলেই হয়তো এমন একটি ইনিংস খেলেছিলেন। তবে ভাগ্য আর তারপর তাঁর সহায় হয়নি। ডাবল সেঞ্চুরি করা ওই টেস্টের পর আর কখনো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সুযোগ পাননি তিনি। কেননা দিনশেষে তিনি তো একজন পেস বোলার। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছেও তাঁর বোলিং পারফর্মেন্সটাই ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ফলে সেই ডাবল সেঞ্চুরি করা ম্যাচেই তাঁর ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে। এই ম্যাচটা হয়তো তিনি কখনোই ভুলতে পারবেন না। এই ম্যাচের স্মৃতি কখনো তাঁকে হাসাবে আবার কখনো কাঁদাবে অঝোরে। তবুও তিনি অস্ট্রেলিয়ার সেরাদের একজন। তাঁর দশ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সেটা প্রমাণ করেছেন বারবার।