গোটা এক বিষন্ন দিন। চট্টগ্রামের বুকে শুভ্রতাকে ছাপিয়ে একরাশ ধূসর করে নিয়েছিল জায়গা। সেখানে দাঁড়িয়ে হাসান মাহমুদ হাসলেন উজ্জ্বল হাসি। বল হাতে নিজের অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখলেন তিনি। জায়গা করে নিলেন ইতিহাসের পাতায়।
ব্যাটারদের আরও এক ব্যর্থতার দিন। ৯৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানো বাংলাদেশ দল অলআউট হয়েছে ১৭৮ রানে। ৮২ রান তুলতেই বাংলাদেশের নয়টি উইকেটের পতন ঘটে। বিধ্বস্ত দলটির হয়ে স্রেফ জাকির হাসান যা একটু প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তার ৫৪ রানের ইনিংসটি ঢাল হয়ে রক্ষা করে গেছে যেন বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারকে।
তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। তার পতনের পরই তাসের ঘরের মত করে মাটিতে লুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। এরপর শ্রীলঙ্কার সামনে সুযোগ ছিল বাংলাদেশকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর। কেননা বাংলাদেশ যে তখনও ৩৫৩ রানে পিছিয়ে। তবে শ্রীলঙ্কা সেই সুযোগটি কাজে না লাগিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে। আর সেই সুযোগটিই লুফে নেন হাসান মাহমুদ।
শুরুটা তিনি করেন দিমুথ করুণারত্নের উইকেট তুলে নিয়ে। এবারও ব্যাটের ভেতরের দিকের একটি খোঁচা খুঁজে নেয় স্ট্যাম্প। অবিকল প্রথম ইনিংসের মত করেই হাসানের শিকারে পরিণত হন করুণারত্নে। এরপর নিশান মাদুশকাকে উইকেটের পেছনে আটকে ফেলেন হাসান।
তাকে রীতিমত উইকেট শিকারের নেশায় পেয়ে বসে। হাসানকে আরও তাঁতিয়ে তোলে শাহাদাত হোসেন দিপুর ক্যাচ মিস। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে উইকেট পেয়ে যেতে পারতেন তিনি। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ক্যাচটি স্লিপ অঞ্চলে আরও একবার তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন দিপু।
হাসান থেমে থাকেননি। উইকেটের অন্বেষণ তিনি চালিয়ে যেতে থাকেন। মাদুশকার পর দীনেশ চান্ডিমালের উইকেট পেয়ে যান হাসান। এদফা অবশ্য কোন ভুল করেননি দিপু। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় বল নিজের হাতে জমিয়ে ফেলতে সক্ষম হন তিনি।
কিছুক্ষণ বাদেই আবারও হাসান আঘাত করেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং দূর্গে। সেদফা ফেরান লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে। তাতে করে তিনি নিয়ে ফেলেন চারটি উইকেট। সেই চার উইকেট নিয়েই ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন হাসান মাহমুদ।
বাংলাদেশী পেসারদের মধ্যে অভিষেকে এখন সবচেয়ে সফল হাসান মাহমুদ। সিলেট টেস্টে অভিষেক ঘটেছিল বাংলাদেশের আরেক পেসার নাহিদ রানার। দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি নিয়েছিলেন ৫টি উইকেট। যা ছিল অভিষেকে বাংলাদেশের কোন পেসারের শিকার করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ঠিক তার পরের টেস্টেই নাহিদ রানাকে ছাপিয়ে গেলেন হাসান মাহমুদ। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পেসার বনে যাওয়ার সুযোগও তার সামনে রয়েছে খোলা। ১০৩ রানে ৬ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং দূর্গে চতুর্থ দিনের সকালেই আঘাত হানতে চাইবেন হাসান মাহমুদ।
তাতে করে অভিষেক টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পেসার বনে যেতে পারবেন তিনি। তাতে করে পেছনে ফেলবেন মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুরের করা ২০০১ সালের রেকর্ডকে। সেদিকে নজর নিশ্চয়ই রাখবেন হাসান মাহমুদ। তাছাড়া শ্রীলঙ্কাকে দ্রুত অলআউট করে দেওয়াটাই হয়ত থাকবে হাসানদের প্রধান পরিকল্পনা।
তৃতীয় দিনের শেষ সেশনটা হাসানের কল্যাণে হয়েছে বাংলাদেশের। তবে ব্যাটার ও ফিল্ডারদের দুঃসময় যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই যে তা অমঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে বাংলাদেশের জন্যে। চতুর্থ দিনের সকালে তবুও বোলাররা চাইবে ব্যাটারদের স্বস্তি দিতে দ্রুত শ্রীলঙ্কার ইনিংসকে গুটিয়ে ফেলতে।