ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস এর আগে কখনো বাংলাদেশে আসেননি। মিরপুরের কন্ডিশন তাই স্বাভাবিক অজানা হওয়ার কথা দক্ষিণ আফ্রিকান এ অলরাউন্ডারের। কিন্তু ক্যারিয়ারে যার প্রায় দুইশো টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা তাঁর সামনে কি আর কন্ডিশন বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে?
মিরপুরের কোনো প্রতিকূলতাই তাই দমাতে পারেনি প্রিটোরিয়াসকে। ফরচুন বরিশালের জার্সি গায়ে মাঠে নামলেন, দেখলেন, ব্যাট হাতে বোলারদের উপর তাণ্ডব চালিয়ে একটা দমকা হাওয়া বইয়ে দিলেন। ২৯ বলে ২ চার আর ৪ ছক্কায় খেললেন ৪৮ রানের একটি ইনিংস। আর তাতেই বরিশাল পায় লড়াই করার মত এক পুঁজি।
সাকিব আউট হওয়ার পর প্রিটোরিয়াস যখন উইকেটে আসলেন তখন বরিশাল ইনিংসে খানিকটা চাপের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন কন্ডিশন। উইকেটের গতিবিধি বুঝতে প্রিটোরিয়াস তাঁর খেলা প্রথম বলটা লং অফে পাঠিয়ে সিঙ্গেল নিলেন।
এতেই যেন কন্ডিশন, উইকেট আত্মস্থ করা হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার এ ক্রিকেটারের। পরের বলেই পেলেন বাউন্ডারি। নাসুম আহমেদের বলে কাট করে পেলেন প্রথম চারের দেখা। এরপর থেকেই প্রিটোরিয়াসের ব্যাটিং তাণ্ডব শুরু। পরিস্থিতি বুঝে সাবলীল ব্যাটিং করে গেলেন। নিজের চেনা ছন্দের প্রতিফল ঘটাতে শুরুটা যেমন দরকার ছিল ঠিক তেমনটাই করলেন তিনি।
শুরুর সেই মোমেন্টাম কিছুক্ষণ বাদেই পাওয়ার হিটিংয়ে পরিণত করলেন। সাব্বির রহমানের বলে ছক্কা দিয়ে সেই তাণ্ডব শুরু। এরপর হাসান মুরাদের করা ইনিংসের ১৫ তম তম ওভারের প্রথম তিন বলেই বাউন্ডারি ছাড়া করলেন। প্রিটোরিয়াসের ব্যাটে চেপে বরিশালের ইনিংস তখন তড়িৎ গতিতে ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে।
প্রিটোরিয়াসের ব্যাটে রুদ্রমূর্তির দৃশ্য দেখা গেল পরের ওভারেও। এবার ভুক্তভোগী নাসুম আহমেদ। খুলনার হয়ে এ বারের বিপিএলে সবচেয়ে মিতব্যায়ী বোলারটাকেও বিন্দুমাত্র ছাড় দিলেন না প্রিটোরিয়াস। এক ছয় আর এক চারে ঐ ওভারে খেলা ৪ বলে নিলেন ১৩ রান।
ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে প্রিটোরিয়াস তখন ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে নিজের অভিষেক ম্যাচে সেই পূর্ণতা টা আর এল না। ব্যক্তিগত ৪৮ রানে সাইফুদ্দিনের বলে নাহিদুল ইসলামের কাছে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান তিনি। অবশ্য ততক্ষণে বরিশালের ইনিংসের ভিত্তি গড়া হয়ে গিয়েছে। রান পাহাড় না হলেও চ্যালেঞ্জিং এক সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় বরিশাল।
ব্যাট হাতে ইনিংস যেখানে শেষ করলেন, ঠিক সেখান থেকেই যেন প্রিটোরিয়াসের আরেক ক্ষুধার তীব্রতা শুরু। বল হাতে নিজের আগ্রাসন দেখানোর পালা এবার। হলোও তাই। খুলনার ইনিংসের প্রথম আঘাতটা হানলেন তিনিই।
সাব্বির রহমান এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে তুলে নিলেন নিজের প্রথম উইকেট। ব্যাট হাতে ৪৮ রানের ইনিংসের পর বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ একটি উইকেট। তবে এমন অলরাউন্ডিং নৈপুণ্যের পরও দিনশেষে বিজয়ীদের দলে থাকতে পারেননি তিনি। তারপরও তাতে তাঁর পারফরম্যান্সের গুরুত্ব একটু খানিও কমে না।
দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলেই বাংলাদেশের ফ্লাইট ধরেছেন প্রিটোরিয়াস। কিন্তু ব্যাট হাতে আজকের ম্যাচে ঝড় তোলা এ ক্রিকেটারের সদ্য খেলা টুর্নামেন্টে প্রধান রোল ছিল বল হাতে। ব্যাট হাতে সে টুর্নামেন্টে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। ৬ টা ইনিংসের ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তার মধ্যে দুটিতেই ডাক। বড় ইনিংসের দেখা নেই একটি ম্যাচেও। মাত্র এক ম্যাচে ছুঁয়েছেন দুই অঙ্কের ইনিংস।
সেই প্রিটোরিয়াস ছুটে এলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক কন্ডিশনে। যে উইকেটে বাঘা বাঘা বিদেশি ব্যাটাররাও ব্রাত্য থেকে ফিরে গেছেন। তবে সে সব শঙ্কাকে উড়িয়ে প্রিটোরিয়াস খেললেন দুর্দান্ত একটি ইনিংস। ব্যাট হাতে ফেরার মঞ্চ তৈরি করলেন বহু স্বীকৃত ব্যাটারকে ভয় ধরানো এক উইকেটে।
জ্যাক ক্যালিস পরবর্তী যুগে তেমন মানের পেস বোলিং অলরাউন্ডার দক্ষিণ আফ্রিকায় মেলেনি বললেই চলে। তবে প্রিটোরিয়াস যেন ক্যালিসেরই নতুন সংস্করণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। আহামরি কিছু করে ফেলেছেন, এমন নয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বল হাতে ১৫০ উইকেট আর ব্যাট হাতে প্রায় ১৪০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং। পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে এ পরিসংখ্যান তো অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
বয়স যদিও ত্রিশের কোটা পেড়িয়েছে বছর তিনেক আগেই। তারপরও একদম পরিণত হয়েই তিনি ক্রিকেটে এসেছেন। এজন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, সব জায়গা থেকেই চাহিদার তালিকায় শীর্ষ সারিতে থাকেন তিনি। সেই ধারায় টি-টোয়েন্টির এ নতুন ফেরিওয়ালা এখন বরিশালেরও হটকেক।
যদিও নিজের প্রথম ম্যাচে এসেই ভাগ্যে জুটলো পরাজয়। অবশ্য সামনে ভাগ্য বদলানোর সুযোগ সামনে পাচ্ছেন তিনি। নিজের এমন গতিময় শুরু পরবর্তী তিনটা ম্যাচে দেখা গেলেই হচ্ছে। ফরচুন বরিশালের ভাগ্যটাই পাল্টে যেতে পারে তাতে। আর প্রথম বারের মত বাংলাদেশে এসেই শিরোপার স্বাদ পেতে পারেন প্রোটিয়া এ অলরাউন্ডার।