যতই সাকিব ভারতকে এগিয়ে রাখুক। মাঠের ক্রিকেটে অন্তত তিনি চেয়েছেন একটা অঘটন ঘটাতে। যতই তিনি মাঠের বাইরে নানামুখী মন্তব্য করুক না কেন, মাঠের ক্রিকেটেই সত্যিকার অর্থে সাকিবের মানসিকতা আর পরিকল্পনার প্রতিফলন দেখা যায়। মাঠের ক্রিকেটে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে উত্তাপ এখন নিত্য দিনের ঘটনা। আর সে উত্তেজনা বহু অংশে বাড়িয়ে দেন তাসকিন আহমেদ।
এই ভারতের সাথেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক ঘটেছিল তাসকিনের। এই অ্যাডেলেডেই ইংল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতির সাক্ষী তাসকিন। তিনি যেন তেমনই কোন স্মৃতির মঞ্চায়ন করতে চাইলেন আবার। তাসকিন তাঁর সবটুকু দিয়েই সেটা করতে চাইলেন। আর অধিনায়ক সাকিব তাঁকে সঙ্গ দিয়ে গেলেন। ভাল ছন্দে কোন ব্যঘাত ঘটালেন না।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, গুরুত্বপূর্ণ টস। সে টস জিতল বাংলাদেশ। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত আগে বোলিং করবার। কারণটা স্পষ্ট লক্ষ্য তাড়া করা। তবে তিনি নিশ্চয়ই চাননি লক্ষ্যটা হোক আকাশ ছোঁয়া। তাইতো ভরসা করে বল তুলে দিলেন তাসকিনের হাতে। এবারের বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে থাকা তাসকিনের চাইতে ভাল বিকল্প নেই। তাসকিন এলেন। তাঁর সামনে খানিকটা নড়বড়ে অবস্থানে থাকা লোকেশ রাহুল। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে নিয়ম করে বল করে গেলেন তাসকিন।
প্রথম ওভারে তাঁর খরচ মাত্র এক রান। দুর্দান্ত শুরু। পরের ওভারে বল হাতে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামা শরিফুল। তাসকিনের তৈরি করে যাওয়া চাপটা তিনি হাওয়ায় মিলিয়ে দিলেন। তবে তাসকিন যেন পণ করেছেন। আজ যে যাই করুক তিনি নিজের কাজটা করে যাবেন ঠিকঠাক। সবকিছু ভুলে পুরো মনোযোগটা থাকবে নিজের বোলিংয়ে। সে মোতাবেক তিনি বোলিংটা করে গেলেন। তবে অভাগা তাসকিন। তাঁর করা বলে সতীর্থদের ক্যাচ মিস এখন তো এক নিয়মিত চিত্র।
রোহিত শর্মার ক্যাচ ফেলে দেন হাসান মাহমুদ। খানিকটা হতাশা ভর করবার কথা। তবে তাসকিন এখানেও অনড়। নিজের কাজটা করে যেতে হবে যেকোন মূল্যে। এ ওভারেও তিনি খরচ করলেন মাত্র এক রান। অসাধারণ একটা সময় পার করছিলেন তাসকিন। অধিনায়ক সাকিব তাই স্লিপ কর্ডনে খেলোয়াড় সংখ্যাও বাড়িয়ে দিয়েছেন। একটু আক্রমণাত্মক হয়ে প্রথম সাত ওভারের মাঝে তাসকিনের চারখানা ওভার শেষ করে ফেলেন। ভাবনায় ছিল শুরুতেই চাপে রাখা।
তাসকিন দলের পরিকল্পনার সবটুকু করে গিয়েছেন। তবে তাঁর সতীর্থ বোলারদের হাতখোলা বোলিং দলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেনি। নিজের পরবর্তী দুই ওভারে ১৩ খানা রান খরচ করেছেন। মোট মিলিয়ে ১৫ রান খরচ করেছেন তাসকিন। ৩.৭৫ ইকোনমি রেটের বোলিং ফিগারটায় ডট সংখ্যা ১৬টি। হাসান মাহমুদের ফেলে দেওয়া ক্যাচটা তাঁর উইকেটের ট্যালিটা রেখে খালি। নতুবা আজ আবার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় তিনি উঠে যেতে পারতেন সবার উপড়ে।
তাসকিন উইকেট শূন্য থাকলেও নিজের কাজটা করে গিয়েছেন। দলের জন্যে রান খরচ কম করেছেন। যদিও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। বাকি বোলারদের খরুচে বোলিংয়ের সুবাদে ১৮৫ রানের বিশাল টার্গেট পায় বাংলাদেশ। বাকি গল্প তো সবারই জানা। তবে, ফলাফল যাই হোক, নিজের স্টেটমেন্টটা তাসকিন ঠিকই দিয়ে রেখেছেন।