লিটন ইফেকটিভনেস

সদ্যই শেষ হয়েছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ। সিরিজে ২-১ ব্যাবধানে জয় লাভ করেছে বাংলাদেশ। অবশ্য শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের যে চিত্র দেখা গেছে, তাতে প্রথম ম্যাচে আফিফ-মিরাজের ঐ অপ্রত্যাশিত মহাকাব্য না হলে এই সিরিজ বাংলাদেশ জিতত কিনা সেটাই একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন।

সে যাক, যেভাবেই হোক বাংলাদেশ জিতে নিয়েছে গোটা এই সিরিজ। আর এই সিরিজেই সিরিজ-সেরা হয়েছেন লিটন দাস। পুরো সিরিজের চোখজুড়ানো ব্যাটিংয়ের পেছনে কেমন ছিল লিটনের পারফরম্যান্স? সেটাই দেখা যাক!

আফগানিস্তানের সাথে এই সিরিজে লিটন দাসের ব্যাটিং ছিল নজরকাড়া। তিন ম্যাচে এক সেঞ্চুরি আর এক হাফ-সেঞ্চুরির বিনিময়ে লিটন এই সিরিজে করেছেন ২২৩ রান। ৯০.৩ স্ট্রাইক রেটে লিটনের গড় ৭৪.৩। লিটন এই তিন ম্যাচে যে ২৪৭ বলের মুখোমুখি হয়েছেন তার ৪৮.৬ শতাংশ বলই অবশ্য তিনি ডট খেলেছেন।

কিন্তু, এই ডটের পরও লিটনের স্ট্রাইক রেট ৯০ এর উপরে উঠে গেছে। বাংলাদেশের যেকোন পিচে অন্তত এটাকে আদর্শই বলা চলে। কিন্তু এই যে ডট বলের পরও তিনি পুষিয়ে দিয়েছেন রানে, এটাই বা কিভাবে হল?

এটা জানতে হলে আমাদেরকে লিটনের ওভারভিত্তিক ব্যাটিংয়ের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। নিচের গ্রাফটার দিকে তাকানো যাক।

এখানে প্রতি ১০ ওভারে লিটনের স্ট্রাইক রেটের একটা গ্রাফ দেখানো হয়েছে।।এখানেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, ম্যাচের শুরুতে পাওয়ারপ্লে-তে লিটনের স্ট্রাইক রেট ৭১.৬ হলেও সেটা সেট হওয়ার পর আর কমেনি, বরং আরো বেড়েছে। ১১-২০ ওভারে সেটা ৭৯.২ হয়ে ২১-৩০ ওভারে সেটা ৭৫.৪ হলেও পরের বিশ ওভারে লিটনের স্ট্রাইক রেটের গ্রাফ অনেক বেশি উপরের দিকে উঠেছে। ৩১-৪০ ওভারে সেটা ১০৮.৯ হয়ে ৪১-৫০ ওভারে সেটা ছুঁয়ে ফেলেছে ১৮১ কে।

এই যে শেষ দিকে লিটনের স্ট্রাইক রেট এমন দুর্দান্ত হয়ে গেল, সেটার পিছে অবদান আসলে সেট হয়ে লিটনের আগ্রাসী মনোভাব। বাংলাদেশ ক্রিকেটে অ্যাংকরিং নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু সত্যিকারের অ্যাংকরিং বলতে যদি কিছু হয়, সেটা আসলে লিটনের এই ব্যাটিংয়েই হয়েছে।

ম্যাচের শুরুতে তিনি ডট বল খেলেছেন, সেট হয়েছেন, আর এরপর সেট হওয়ার পর নিজের খেলা ডট বলগুলিকে তিনি পুষিয়ে দিয়েছেন। সেটা অবশ্য নিচের গ্রাফ দেখলেই বোঝা যায়, এখানে দেখা যায় ওভার পার হলে লিটনের ডট বল খেলার হার শুধু নিচের দিকেই নেমেছে।

আবার যদি আমরা আফগানিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে লিটনের ব্যাটিং পারফরম্যান্স বিবেচনায় আনতে চাই সেখানে দেখতে পাব আফগানিস্তানের যে ফারুকি তামিমের কাছে ত্রাস হয়ে দেখা দিয়েছেন সেই ফারুকির বিপক্ষে লিটনের স্ট্রাইক রেট ৯৫.৭! আর শুধু আকাশচুম্বি স্ট্রাইক রেটই নয়, এই ফারুকির বিপক্ষেই লিটনের গড় সবচেয়ে বেশি, ৪৫!

নিচের এই গ্রাফটার দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখতে এখানে আফগানিস্তানের সেরা পাঁচ বোলারের বিপক্ষে লিটনের স্ট্রাইক রেট দেখতে পাব। ফারুকি, রশিদ, নবী, মুজিব আর ফরিদের বিপক্ষে লিটনের এই পারফরম্যান্সে আমরা দেখতে পাই তাদের সবার বিপক্ষেই লিটনের স্ট্রাইক রেট দর্শনযোগ্য।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে কথা হয় আফগানিস্তানের স্পিনারদের নিয়ে, বিশেষ করে রশিদ আর মুজিবকে নিয়ে, সেই রশিদ আর মুজিব তিন ম্যাচে একটাবারও লিটনকে আউট করতে পারেননি। উপরন্তু, এই দুইজনের বিপক্ষে লিটনের ব্যাটিংও ছিল বেশ আগ্রাসী।

লিটন তার নিজের ব্যাটিংয়ের টেকনিকেও বেশ পরিবর্তন এনেছেন। আগে দেখা যেত, ম্যাচের শুরুতেই উইকেটের চারপাশে শট খেলতে চাইতেন তিনি। কিন্তু লিটনের এই অভ্যাসের এখন লাগাম টানা হয়েছে। তিনি এখন শট সিলেকশনে যথেষ্ট মনোযোগী হয়েছেন। লিটন দাসকে অবশ্য আরো অনেকদূর যেতে হবে, কয়েকদিন আগে যেমন স্টিভ রোডস বলে গেলেন আগামী দশ বছরে লিটন হবে এই দেশে সবচেয়ে বড় তারকা।

এখন লিটনকে তো সেটা সত্যি প্রমাণ করতে হবে। আর নাহলে, একেকটা মোনালিসা হারিয়ে যাবে অকালের অন্ধকারে!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link