কল্পনা ও বাস্তবের একাদশ

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এক নতুন দুয়ারে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে থেকেই যেই আলোচনা গুলো হচ্ছিল সেগুলো বাস্তব রূপ পেল গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে স্কোয়াড ঘোষণার পর। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে একদল তরুণ ক্রিকেটার। বিশেষ করে সাকিবের ইনজুরির কারণে সিরিজ খেলতে না পারা এবং মুশফিকের বিশ্রাম কিংবা বাদ পড়ায় এই তরুণ দল গঠনের পক্রিয়া সহজ হয়েছে।

আসছে বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আশা করা যায় মোটামুটি এই দলটা নিয়েই খেলবে বাংলাদেশ। এরমধ্যে সাকিব যুক্ত হবেন। এছাড়া খুব বেশি হলে ২-১ জন এদিক সেদিক হতে পারে। তবে ধারণা করা যায় মোটামুটি এই একঝাক তরুণের উপরই এখন নির্ভর করছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ভাগ্য। তবে এতগুলো নতুন মুখ আসায় কার কী দায়িত্ব সেটা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাটিং লাইন আপটা কেমন হবে কিংবা একাদশে কারা কারা থাকবেন সেটা একটা বড় প্রশ্ন।

এই স্কোয়াডে মোট তিনজন ওপেনার আছেন। নাঈম শেখ, সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এরমধ্যে নাঈম শেখ তাঁর জায়গা পাকা করে ফেলেছেন। তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মেজাজটা ঠিক ধরতে পারছেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মোটামুটি নিয়মিত রান করছেন। ফলে এই সিরিজে অন্তত একাদশে তাঁর জায়গা পাকা। তবে নাঈমের সাথে একজন আক্রমণাত্মক ওপেনারই আমাদের প্রয়োজন। যিনি কিনা পাওয়ার প্লের সঠিক ব্যবহার করবেন।

সেক্ষেত্রে আমরা ওপেনিংয়ে নাজমুল হোসেন শান্তকেই দেখতে চাই। কিংবা স্কোয়াডে ডাক না পাওয়া পারভেজ হোসেন ইমনেরও সেই এবিলিটি ছিল। তবে ভিতর থেকে যতটুকু শোনা যায় আবারো সেই ডানহাতি-বাহাতি কম্বিনেশনের কারণে ওপেন করবেন নাঈম ও সাইফ হাসান। সাইফ গত ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ভালো ব্যাটিং করলেও তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরণও অনেকটা নাঈমের মত। ফলে একটা ফ্লায়িং স্টার্টের স্বপ্ন বোধহয় স্বপ্নই থেকে যাবে।

তিন নম্বরে আমারে বরাবরই প্রথম পছন্দ আফিফ হোসেন ধ্রুব। আফিফের ইনিংস বিল্ড আপ ও স্ট্রাইক রোটেট করার ক্ষমতার জন্যই এই পজিশনটা তাঁর জন্য সবচেয়ে উপযোগী। তাঁর স্ট্রাইকরেটও দারুণ প্রশংসনীয়। তবে টিম ম্যানেজম্যান্ট বোধহয় এখনো তাঁকে স্লগার হিসেবেই চিন্তা করছে। এই সিরিজেও তাঁকে দেখা যেতে পারে ছয় নম্বরে। এছাড়া চার নম্বরে ইয়াসির আলী রাব্বির ও পাঁচে মাহমউদুল্লাহ রিয়াদের জায়গা মোটামুটি নিশ্চিত।

ছয় নম্বরে দল আফিফকে চিন্তা করলেই আমরা এই পজিশনে একজন পিওর স্লগার চাই। সেক্ষেত্রে দলে আছে কাজী নুরুল হাসান সোহান ও শামিম পাটেয়ারি। তবে উইকেট কিপিং অ্যাবিলিটির জন্য আপাতত সোহানের উপরই আস্থা রাখতে চাই। ওদিকে বিকল্প উইকেট কিপার হিসেবে দলে আকবর আলীও ডাক পেয়েছেন। যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য তিনি পুরোপুরি প্রস্তুত কিনা সেই প্রশ্ন রয়ে যায়। গতকাল দল ঘোষনার সময়ও তিনি লাল বলের ক্রিকেট খেলছিলেন। এছাড়া সাত নম্বরে দ্রুত কিছু রান করে দেয়ার জন্য মেহেদী হাসান বেশ কার্যকর। যদিও দল তাঁকে পুরোপুরি বোলার হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে বলেই জানা যায়।

এছাড়া সাকিব না থাকায় মোটামুটি সব ম্যাচেই নাসুম আহমেদের জায়গাও নিশ্চিত। দলে লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব থাকলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিপ্লবকে মাঠে নামাতে হলে বেশ বড় সাহসই করতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও যে নিজেকে প্রমাণ করে ফেলেছেন এমন না। এছাড়া দলের কম্বিনেশনের কারণেও বিপ্লবের সুযোগ পাওয়া কঠিন।

এদিকে পেস বোলিং আক্রমণটা বেশ গুছানো। তাসকিন আহমেদ দারুণ ছন্দে আছেন। বিশ্বকাপে গতির পাশাপাশি বোলিংয়ে নানা বৈচিত্রও দেখিয়েছেন। ফলে একাদশে তিনি অটোম্যাটিক চয়েজ। এছাড়া মুস্তাফিজ বিশ্বকাপে পুরোপুরি ফ্লপ হলেও তিনিই আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা। ফলে তিনিও থাকছেন নিশ্চিত করেই। এছাড়া তৃতীয় পেসার হিসেবে শরিফুলে নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবেন। তবে তিন জনের কেউ ক্লিক না করলে তাঁর বদলে শহীদুলকে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।

তবে একাদশে যারাই খেলুক মোটামুটি এই স্কোয়াডটাই আমাদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ । আমরা এমনিতেও টি-টোয়েন্টিতে কোন বড় দল না। ফলে এই তরুণ ক্রিকেটারদেরও হয়তো গুছিয়ে নিতে খানিক সময় লাগতে পারে। এদের উপর আস্থা না রেখে ‘চলে না’ ট্যাগ দিয়ে দিলে বরং দেশের ক্রিকেটেরই ক্ষতি। দেরিতে হলেও টি-টোয়েন্টি দলে তরুণদের যেই জোয়ার এসেছে সেটাকে সাধুবাদ জানাই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link