বিজ্ঞাপনটি কিসের ছিল এখন আর মনে নেই। সম্ভবত গাড়ির ইঞ্জিনের তেলের। তর্কের খাতিরে তাই ধরে নিচ্ছি। তা বিজ্ঞাপনটার মোদ্দা ভাব ছিল এটাই, আমাদের তেল ব্যবহার করলে আপনার গাড়ি ম্যারাথন রেসে স্প্রিন্টারের মতো দৌড়াবে। তা সদ্য শেষ হওয়া নারী বিশ্বকাপটি যদি ম্যারাথন রেস হয়ে থাকে, তবে অস্ট্রেলিয়া সেই রেস উসাইন বোল্টের গতিতে দৌড়েছে এবং হাসতে হাসতে জিতে নিয়েছে। অবাস্তব। অকল্পনীয়।
আমার এক বন্ধু হোয়াটস্যাপ এ স্ট্যাটাস দিয়েছিলো, অস্ট্রেলিয়ার এই দলটা বেআইনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নির্ধারিত হোক ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ হয়ে। বিশ্বের কোনো খেলায় কোনোদিন কোনো দল এতটা পরাক্রমশালী অশ্বমেধের ঘোড়া এতটা দীর্ঘ সময় ধরে ছুটিয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কিস নয়, লেকার্স নয়, পেলে বা কাফুর ব্রাজিলও নয়। খুব কাছাকাছি উদাহরণ হতে পারে মার্কিনি বাস্কেটবল দল। এবং তারাও নয়। ল্যানিংয়ের অস্ট্রলিয়ার তুলনা তাঁরা নিজেরাই।
১৯৯১-৯২ এ ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় ইয়ান চ্যাপেল সম্ভবত বলেছিলেন, ‘আজহার যা খেলছেন, তাতে এই মুহূর্তে ওর পশ্চাৎদেশে একটি পদাঘাতের খুব প্রয়োজন।’ তা আজহার সেটা শুনেই কি না কে জানে, ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে অনবদ্য ব্যাট করেছিলেন। ল্যানিংয়ের এই অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কেউ এরকম কিছু বলেছেন বলে শোনা যায় না। তবে দলের অন্যতম সেরা পেস বোলার, মেগান শুট নিজেই বলেছেন, ‘২০১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বেরিয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য যেন পশ্চাৎদেশে একটা অত্যন্ত জরুরি আঘাত ছিল।’
হারমানপ্রীতের সেই অমর ১৭১ যে কি অদ্ভুত পরাক্রমশালী এক জন্তুর জন্ম দিয়েছে, তা বোধহয় তিনি নিজেও জানতেন না। শুট এক বিখ্যাত ক্রিকেট ওয়েবসাইটে একটি সাক্ষ্যাৎকারে বলেছেন, ‘ওই হার আমাদের আরও দায়বদ্ধ করেছে। আগে একভাবে খেলতাম। চেনা ছক কাজ না করলেই মুশকিলে পড়তাম। এখন আমাদের প্ল্যান এ থেকে এফ, সবই তৈরি।’
এবং কথাটা একটুও অত্যুক্তি নয়। ছোট্ট উদাহরণ হিসাবে রিজার্ভ বেঞ্চ দেখে নেওয়া যাক। চোটের কারণে বিশ্বকাপের শেষ দিকে পেরি স্বমহিমায় থাকতে পারেননি। তাতে অস্ট্রেলিয়ার গায়ে আঁচ টুকুও লাগেনি। এই পেরি মহিলা ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। বলে ওপেন করেন, আবার ব্যাটেও প্রথম চারে।
হিলি ফাইনালে যা খেললেন সে তো পরের কথা। পাঠক একবার ভাবুন, বেথ মুনি যে দলে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করেন, তারা ঠিক কতটা শক্তিশালি। অনেক খেলোয়াড়ই বলে থাকেন, ফাইনাল সেমিফাইনালও অন্য একটি সাধারণ ম্যাচের মতো ভেবে নামছি। কথাটা শতকরা ৯৯ শতাংশ ঢপ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে সেমি-ফাইনাল আর ফাইনালে দেখে ওই এক শতাংশের মার্জিন টা ছেড়ে রাখতে বাধ্য হলাম।
হিলি এমন পিটছিলেন, মনে হচ্ছিলো রোববার দুপুরে মাংস-ভাত সহযোগে এক ঘুম দেবার পর বিকেলে পাড়ার মাঠে বাচ্ছাদের সাথে খেলতে নেমেছেন। তাঁর ১৭০ যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ, এই ব্যাপারটা অনেকের চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। এতটা একপেশে বিশ্বকাপ জীবনে একবারই দেখেছিলাম। ২০০৭ এর অস্ট্রেলিয়ার জয়। এবং এই অস্ট্রেলিয়া দলের যা রিজার্ভ বেঞ্চ, আগামী বিশ্বকাপের ফাইনালও মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া বনাম ‘এক্স’।
ইংল্যান্ডেরই এই ‘এক্স’ হবার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু যদি মিতালী, বায়পিক, লর্ডস, মেলবোর্ন ইত্যাদির রেশ কাটিয়ে উঠতে পারে, এবং ভারতের মহামান্য বোর্ড যদি নারীদের আইপিএল টা ‘ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ’ করার মতো করেই ফেলে, তাহলে ভারতের একটা ক্ষীণতম আশা দেখা যাচ্ছে। তবে ততদিন বরং অস্ট্রেলিয়াকে পৃথিবীর ক্রিকেট থেকে ব্যান করেই রাখা হোক। মঙ্গল গ্রহে ক্রিকেট বলে কিছু আছে কি? যাই একটু খোঁজ নিয়ে আসি।