আইপিএল ২০২৩: নিলামের আলোচিত-অবহেলিত

ক্রিকেট বিশ্বের জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট কোনটি? – এমন প্রশ্নে দ্বিধাহীনভাবেই বেছে নিতে হবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-কে। তারকাবহুল সব দল, জমকালো আয়োজন আর মাঠের খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই টুর্নামেন্টকে দিয়েছে ভিন্ন এক মাত্রা। তবে শুধু আইপিএল নয়, আইপিএলের নিলামও উত্তেজনার খোরাক জোগায় ক্রিকেট ভক্তদের জন্য। কে কোন দলে সুযোগ পেয়েছেন কিংবা কারা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জায়গা পাননি সে-সবই উঠে আসে আলোচনায়।

চলতি বছরের শুরুর দিকেই হয়েছিল এই টুর্নামেন্টের মেগা নিলাম। আগামী কয়েক বছরের জন্য নিজেদের স্কোয়াড গুছিয়ে নিয়েছিল ফ্রাঞ্চাইজিরা। আর এবার দলগুলোর ছোটখাটো ঘাটতি মিটিয়ে নিতে বছরের শেষদিকে আয়োজন করা হয়েছে আরেকটি মিনি নিলাম।

আর এখানে বাজিমাত করেছেন বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার। এক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে ইংলিশ অলরাউন্ডার স্যাম কারেনের কথা। আইপিএলের ইতিহাসেরই সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় বনে গিয়েছেন তিনি। ১৮ কোটি ৫০ লক্ষ রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে নিয়েছে প্রীতি জিনতার পাঞ্জাব কিংস। আরেক উদীয়মান অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিনকে নিয়েও হয়েছে কাড়াকাড়ি। শেষ পর্যন্ত ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ রুপিতে গ্রিন যুক্ত হয়েছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের শিবিরে।

২৩ বছর বয়সী ব্যাটার হ্যারি ব্রুকের ভাগ্যেও লেগেছে অর্থের ঝনঝনানি। মাত্র দেড় কোটি রুপি ভিত্তিমূল্যের এই ইংলিশ বিক্রি হয়েছেন ১৩ কোটি ২৫ লক্ষ রুপিতে। অভিষেক মৌসুমে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলবেন ব্রুক। বয়সে তরুণ না হলেও গেম চেঞ্জার বেন স্টোকসকে দলে ভেড়াতে আগ্রহের কমতি ছিল না কারো। ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস এই অলরাউন্ডারকে কিনে নিয়েছে; আর এজন্য গুনতে হয়েছে ১৬.২৫ কোটি রুপি।

এদের ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট জগতে পরিচিতি পাওয়া উইল জ্যাকস, ফিলিপ সল্টের অভিষেক হতে যাচ্ছে ২০২৩ সালের আইপিএলে। গত দুই বছর থেকে দারুণ ছন্দে থাকা লিটন দাসকে দলে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকেও নিয়েছে দলটি। আবার ডেভিড উইসে, জসুয়া লিটলের মত সহযোগী দেশের ক্রিকেটারও খেলতে যাচ্ছেন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে।

অনেক অফ ফর্মের ক্রিকেটারকে নিলামে বেশি দামে কেনার ঘটনা মোটেও নতুন কিছু নয় আইপিএলের ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর জন্য। ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারও। এই যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট কিপার নিকোলাস পুরানের জন্য ১৬ কোটি রুপি খরচ করেছে লখনৌ; অথচ এই পুরানই গত মৌসুমে ছিলেন হায়দ্রাবাদ দলের বোঝা। এছাড়া ছাপ রাখতে ব্যর্থ শিভাম মাভিকে ৬ কোটি রুপিতে দলে নিয়েছে গুজরাট লায়ন্স।

ব্যাট হাতে ছন্দহীন মায়াঙ্ক আগারওয়াল কিংবা অর্ধপরিচিত মুকেশ কুমারের উপর একটু বেশিই আস্থা দেখিয়েছে দলগুলো। দুজনেই বিক্রি হয়েছেন চড়া দামে। টি-টোয়েন্টি ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দল পেতে সমস্যা হয়নি কেন উইলিয়ামসনের। দুই কোটি রুপি দিয়ে তাঁকে কিনেছে গুজরাট টাইটান্স। অপেক্ষার অবসান হয়েছে জো রুটের। এক কোটি রুপির ভিত্তিমূল্যতে তাঁকে নিয়েছে রাজস্থান র‌য়্যালস।

তারকা ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও কখনো কখনো আইপিএলে খেলার সুযোগ মেলে না অনেকের। দলীয় কম্বিনেশন কিংবা যথেষ্ট ফান্ডের অভাবে অনেক বিশ্বসেরা খেলোয়াড়কে সবসময় দলে টানা সম্ভব হয় না। সর্বশেষ বছরগুলোতে টি-টোয়েন্টিতে ছড়ি ঘোরানো অনেক ক্রিকেটারকে নেয়নি কোন দলই।

বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ ফর্মে থাকলেও সন্তুষ্ট করতে পারেননি আইপিএলের ফ্রাঞ্চাইজিদের। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যানডার ডুসেনের ভাল সম্ভাবনা থাকলেও কেউই আগ্রহ দেখায়নি তাঁদের নিয়ে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দাপিয়ে বেড়ানো ডেভিড মালান, তাবরাইজ শামসি, মুজিবুর রহমান, অ্যাডাম জাম্পার মত ক্রিকেটাররাও সুযোগ পাননি মাঠে থেকে আইপিএল উপভোগ করার।

অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট, আর আইপিএলের নিলামও তেমনি অনিশ্চয়তার ভরা। কেউ আশ্চর্যজনকভাবেই পেয়ে যান লাইমলাইট আর কেউবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ পান না নিজেকে প্রমাণ করার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link